নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তার বিএনপি নেতারা ছাড়া পাচ্ছেন, হাজারো কর্মী এখনো জেলে

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার পতনের একদফা দাবিতে ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপির অধিকাংশ নেতা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, নির্বাচন শেষ হওয়ার পর এই মুক্তি প্রমাণ করে যে, বিরোধীদের কোণঠাসা রেখে একতরফা ভোট সম্পন্ন করতেই বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

গত দুই সপ্তাহে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির অন্তত শীর্ষস্থানীয় ১০ নেতা আদালতে জামিন পেয়ে কারামুক্ত হয়েছেন।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী।

এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মির্জা আব্বাস জামিনে মুক্তি পান।

বিএনপি নেতাদের মতে, গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন থেকে বিরোধীদের দূরে রাখতে এসব গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। নির্বাচন শেষ হয়ে যাবার পর বিরোধীদের আর আটকে রাখার কোনো কারণ না থাকায় তাঁদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে।

তবে বিএনপির এমন অভিযোগকে “সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন” বলে বৃহস্পতিবার বেনারের কাছে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। একই ধরনের মত প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তাঁদের মতে, সুস্পষ্ট ফৌজদারি অভিযোগের ভিত্তিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, আইন অনুযায়ী আদালত তাঁদের জামিন দিয়েছে। এখানে সরকারের হাত নেই।

এখনো ‘হাজার হাজার’ বন্দি: বিএনপি

অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নির্বাচনের কয়েক দিন আগে পর্যন্ত সারা দেশে “প্রায় ২৭ হাজার বিএনপি নেতা-কর্মীকে” পুলিশ নির্বিচারে আটক করে কারাগারে পাঠায় বলে বৃহস্পতিবার বেনারকে জানান বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

তিনি বলেন, “শীর্ষস্থানীয় নেতা ও কিছু কর্মী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তবে এখনো হাজার হাজার নেতা-কর্মী বন্দি, তারা জামিন পেতে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।”

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় মির্জা ফখরুলসহ তাঁদের বন্দি করা হয়েছিল বলে মত দেন তিনি।

“এই সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেছে। নির্বাচনের পরে এখন জামিন দেওয়া হচ্ছে। আটকের উদ্দেশ্য ছিল, তাঁদের ইচ্ছামতো একতরফাভাবে নির্বাচন আয়োজন করা। সেই কাজ তাঁরা করে ফেলেছেন। এতেই প্রমাণিত হয়, আমরা যা বলে আসছিলাম সেই কথা সত্য।”

তিনি জানান, বিএনপির ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ আন্দোলন চলবে।

বিএনপির অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বেনারকে বলেন, “উনারা কি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করেননি? পুলিশের স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেননি? পুলিশ হত্যা করেননি? সুতরাং, সুস্পষ্ট ফৌজদারি অভিযোগে তাদের আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত তাঁদের জামিন দিয়েছে। এখানে সরকার কোথায়?”

তিনি বলেন, “আমরা আছি দুই ধরনের বিপদে; আটক করলে বলে সরকার কারণ ছাড়া আটক করেছে। আবার জামিন হলে বলে সরকার জামিন দিয়ে দিচ্ছে। তাহলে কোথায় যাব?”

22-BNP2.JPG
Bangladesh Nationalist Party’s Joint Secretary General Syed Moazzem Hossain Alal appears in the court after being arrested in a case filed on October 28 over the death of a police constable in Dhaka গ্রেপ্তারের পর বিনএপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে ঢাকার একটি আদালতে হাজির করছে পুলিশ। ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩। [রয়টার্স] (MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS)

বিএনপির এখন আর কিছু করার নেই!

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, আওয়ামী লীগ অস্বীকার করলেও এটি পরিষ্কার যে, বিএনপির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেছে সরকার।

“নির্বাচনের আগে উল্লেখযোগ্য সব নেতা কারাগারে ছিলেন। আওয়ামী লীগের কাছে নির্বাচন করাই ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ, সেটি তারা করে ফেলেছে। এখন আর কিছু করতে পারবে না বিএনপি,” বলেন তিনি।

ড. নিজাম বলেন, “জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ওপর আন্তর্জাতিক কোনো চাপ নেই। বিশ্বের সব সরকারই তাদের সঙ্গে কাজ করছে।

“আওয়ামী লীগ যা করার করে ফেলেছে। বিএনপি নেতারা জামিনে মুক্তি পেলে এখন তাঁদের কিছু যায় বা আসে না। বরং বাইরে থাকলে ভালো। তারা বলতে পারবে যে, বিরোধীদের আটক করে জেলে রাখা হয়নি; তাদের মুখ রক্ষা হবে,” যোগ করেন তিনি।