সুপ্রিম কোর্ট ভবনে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের পিটিয়েছে পুলিশ
2023.03.15
ঢাকা
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ওপর লাঠিপেটার দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অন্তত আট সাংবাদিক।
ওই ঘটনায় বিএনপিপন্থী ১৪ আইনজীবী ও ১০ পুলিশ আহত হয়েছেন। যদিও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দাবি, তাঁদের শতাধিক আইনজীবী আহত হয়েছেন।
বুধবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এই ঘটনা ঘটে। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদ জানানো হলে তিনি “তদন্ত করে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে” বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরাও দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেছেন।
ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি ওয়াকিল আহমেদ হিরণ বেনারকে জানান, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এই ঘটনায় “মর্মাহত ও দুঃখিত” হয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বুধবার রাতে বেনারকে বলেন, “পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের যৌথ আক্রমণে প্রায় শতাধিক আইনজীবী আহত হয়েছেন।”
তবে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল অফিসার জানিয়েছেন, ১৪ জন আইনজীবী সামান্য আহত হয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ছিল বুধবার। তবে ঝামেলা শুরু হয় গত মঙ্গলবার। নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি মো. মনসুরুল হক চৌধুরী ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।
এরপর আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা মো. মনিরুজ্জামানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা করেন। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মুক্তার কবিরকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা করেন।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা দল বেঁধে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে জড়ো হয়ে আওয়ামীপন্থী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অধীনে ভোট বাতিল এবং মুক্তার কবিরের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানাতে থাকেন। ফলে ভোটগ্রহণ শুরু হতে বিলম্ব হয়।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বেনারকে বলেন, “সকাল সাড়ে ১১টার পরে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ সদস্যরা মিলনায়তনে এসে আমাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এই সময় সাংবাদিকরা এগিয়ে এলে তাদেরও পেটাতে থাকে তারা।”
তিনি বলেন, “আইনজীবীদের ভোটের সমস্যা আইনজীবীরা সমাধান করবে। এখানে পুলিশ কেন? আর সাংবাদিকদের কেন পেটাবে? তাঁরা তো তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। আমরা এই পুলিশ সদস্যদের বিচার চাই।”
“আমরা সন্ধ্যায় এই ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল করেছি,” বলেন মাহবুব উদ্দিন খোকন।
কমপক্ষে আট সাংবাদিক আহত
সাংবাদিক নেতা হিরণ বেনারকে বলেন, “পুলিশের হামলায় কমপক্ষে আট জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আমাদের মারধর করা হলো কেন? আমাদের অপরাধ, কেন আমরা ভিডিও ফুটেজ নিতে গেলাম?”
তিনি বলেন, “আমিসহ চার সাংবাদিক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে এই ঘটনা অবহিত করি। তিনি সব শুনে ‘মর্মাহত ও দুঃখিত’ হয়েছেন। তাঁর পরামর্শ মোতাবেক এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।”
হিরণ বলেন, “আমাদের দাবি, রমনার ডিসি এবং এডিসি’র প্রত্যাহার এবং দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।”
তিনি বলেন, “এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে প্রধান বিচারপতি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, এই ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আওয়ামীপন্থী আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আব্দুন নূর দুলাল ঘটনার পর সাংবাদিকদের বলেন, “দেখুন, কোনো বিশৃঙ্খলা হলে সেটা তো নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে পুলিশকে। তবে এই কাজ করতে গিয়ে যদি কোনো সাংবাদিক আক্রমণের শিকার হয়ে থাকেন তার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।”
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার বেনারকে বলেন, “আমি দেশের বাইরে আছি। দেশে ফিরে বিষয়টি জেনে, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা
অভিযুক্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বুধবার বেনারকে বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তার জন্য মঙ্গলবার থেকে ৫০৬ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।
“সকাল থেকেই আমরা বুঝতে পারি বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীরা একত্রিত হয়ে এখানে ঝামেলা করতে পারে। ওদের কারণে এরা (আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা) ঢুকতেই পারেনি,” বলেন তিনি।
শহিদুল্লাহ বলেন, “তারপর শুরু হয় হাতাহাতি। আর হাতাহাতি কাকে বলে! এর মধ্যে কিছুটা এদিক-ওদিক হতে পারে। ইচ্ছা করে কেন আমরা সাংবাদিকদের পেটাব? সাংবাদিক এবং আমরা একইসঙ্গে সব জায়গায় কাজ করি।”
তিনি আরও বলেন, “তারা (বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা) যাওয়ার সময় আমাদের ১০ পুলিশ সদস্যকে আহত করেছেন। তারা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।”
দুপুর ১২টার পর বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বর্জনের মধ্য দিয়েই প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।