খালেদা জিয়ার নামে দুর্নীতির পুরোনো দুই মামলা সরব, বিএনপির মতে ‘ভোটের রাজনীতি’

আহম্মদ ফয়েজ
2023.03.20
ঢাকা
খালেদা জিয়ার নামে দুর্নীতির পুরোনো দুই মামলা সরব, বিএনপির মতে ‘ভোটের রাজনীতি’ ঢাকার গুলশানে নিজের বাসা থেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ২২ আগস্ট ২০২২।
[বেনারনিউজ]

বাংলাদেশের বৃহত্তম বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার একটি অভিযোগ গঠন ও আরেকটিতে অভিযোগ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে সেনা নিয়ন্ত্রিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দায়ের করা এই মামলা দুটি ভোটের রাজনীতিতে ‘হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো নিয়ে সরকার হঠাৎ করে অধিক তৎপর হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

“সামনে নির্বাচন, মানুষ চায় দল নিরপেক্ষ সরকার, এখন বিএনপিকে নিয়ে নতুন খেলায় মেতেছে সরকার,” বেনারকে বলেন তিনি।

বিএনপির আইনজীবীরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩৩টি মামলা রয়েছে যার মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাসহ আরও দুটি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।

সংবিধান সংশোধন, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন বিএনপি।

বিএনপির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছে আরও অন্তত অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না—এমন অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা।

সরব দুই মামলা

কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।

রোববার কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার-৯ নম্বর (অস্থায়ী) বিশেষ জজ আদালত এই আদেশের মধ্য দিয়ে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই মামলায় জামিনে রয়েছেন।

বেনারকে এই তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার।

ঢাকার তেজগাঁও থানায় ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

২০১৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদক আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) সাবেক সচিব শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় এই মামলা থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন—তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

এদিকে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত।

সোমবার কেরানীগঞ্জ কারাগারে নবনির্মিত ভবনে স্থাপিত ঢাকার অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত-২ এর বিচারক আকতারুজ্জামান শুনানির জন্য আগামী ২৯ মে তারিখ নির্ধারণ করেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী জিয়া উদ্দিন জিয়া গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় ১৩ আসামির মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়া আরেক আসামি ব্যারিস্টার আমিনুল হক মারা গেছেন।

এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন—খালেদা জিয়া, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ার, সাবেক তথ্যমন্ত্রী এম শামসুল ইসলাম, মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক জ্বালানি ও খনিজসম্পদ সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রো বাংলার সাবেক পরিচালক মুঈনুল আহসান এবং সাবেক জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশারফ হোসেন।

২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুদক মামলাটি দায়ের করেছিল।

নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-- অভিযোগ বিএনপি

বেনারের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “সেনা নিয়ন্ত্রিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও কতগুলো মামলা হয়েছিল। সেগুলো তিনি আদালতের মাধ্যমে বাতিল করেছেন।”

বিএনপি’র এই নেতা বলেন, “খালেদা জিয়াকে হয়রানি করতে এবং বিএনপিকে অন্যদিকে ব্যস্ত করে তুলতেই এসব করছে সরকার। এর পেছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সবাই বোঝে। এটা আগামী নির্বাচনের আগে ভোটের রাজনীতির অংশ।”

বিএনপি বিচারিক কার্যক্রমকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু।

“তাঁর (খালেদা) নামে মামলা রয়েছে, সেগুলো স্বাভাবিক নিয়মে এগুচ্ছে। এখানে রাজনীতির কিছু নেই। কিন্তু বিএনপি এই কথাটা বলে বলে বিচারিক কার্যক্রমকে বিতর্কিত করছে,” বলেন নজিবুল্লাহ।

বাংলাদেশর আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মুখর বিদেশি কূটনীতিকেরা। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশি কূটনীতিকরা বলছেন, তারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।