বয়কট সিদ্ধান্তে অটল বিএনপি, উপজেলা নির্বাচনও বর্জন
2024.04.15
ঢাকা
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তার মিত্ররা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। ফলে আগামী ৮ মে থেকে দেশজুড়ে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
বিএনপির পক্ষ থেকে এই ঘোষণা এমন দিনে আসলো যখন প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলা পরিষদে আগামী ৮ মে নির্বাচনের জন্য সোমবার ছিল মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
এদিন, ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে দলে পূর্বের সিদ্ধান্ত “বহাল” থাকায় “বিএনপি উপজেলা নির্বাচনও বয়কট করবে।”
“আমরা বলছি এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আমাদের সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। কারণ তাঁর অধীনে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় না। আমরা ইতোমধ্যেই সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং তাতে দল অটল রয়েছে,” বলেন তিনি।
এ বিষয়ে রিজভীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বেনারকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কিছু আলোচনা হয়েছিল। তবে দলের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
শরিকদেরও নির্বাচন বর্জন
বিএনপির সঙ্গে সরকার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিকদের উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অবস্থান জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বেনারকে বলেন, “আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না।”
কোনো নেতা-কর্মী যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে তাদের বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান সাইফুল হক।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা এমন এক অবস্থায় চলে গেছে যে, এটা নিয়ে আস্থা অর্জন বিশাল চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“আমাদের নির্বাচনের সংস্কৃতিই এখন হয়ে গেছে কারো বর্জন, কারো অর্জন। গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোটা ভেঙে পড়ছে,” বলেন বদিউল আলম।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য প্রধানত দায়ী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরকম এক তরফা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের ক্ষমতা পাওয়ার লড়াই সংঘাত রূপ নিতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৬৯৫ মনোনয়নপত্র
৮ মে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলায় মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল সোমবার। এ বছর নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রধানত অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা নিয়েছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বেনারকে বলেন, চেয়ারম্যান পদে মোট ৬৯৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী অনলাইনের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
তিনি জানান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ৭২৪ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলায় ৮ মে, দ্বিতীয় ধাপে ২৩ মে, তৃতীয় ধাপে ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় নির্বাচনের কৌশল স্থানীয় নির্বাচনে
দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দলের বয়কটের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দলীয় ‘ডামি’ প্রার্থীদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত করে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে না-এমন ধারণা থেকে আওয়ামী লীগ গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোষণা দিয়েছিল যে উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দল কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে না এবং কেউ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’ পাবে না।
এদিকে গত মার্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে কিছুটা চাপ থাকায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা আলোচনা করেন। কিন্তু ইস্যুটি পরবর্তী বৈঠকের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছিল যে বৈঠক এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বেনারকে বলেন, “গত নির্বাচনে (জাতীয় নির্বাচন) দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ নির্বাচন বয়কট করেছে। ওই নির্বাচনে একটাই প্রতীক ছিল সেটা হচ্ছে নৌকা।”
গত সাধারণ নির্বাচনে মূলত মানুষ নৌকা অর্থাৎ আওয়ামী লীগকে বয়কট করেছে দাবি করে খসরু বলেন, “সেই ভয়ে আওয়ামী লীগ এখন দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে ভয় পাচ্ছে।”
অপরদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বেনারকে বলেন, “বিএনপি নির্বাচন বয়কট করার অবস্থায় নেই। এই দলটিকে দেশের মানুষ বয়কট করে ফেলেছে। এখন তারা নানা বাহানা করে রাজনীতিতে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।”