বিরোধীদের বয়কটের মধ্যেই পাঁচ সিটিতে নির্বাচনের পথে বাংলাদেশ

আহম্মদ ফয়েজ
2023.04.18
ঢাকা
বিরোধীদের বয়কটের মধ্যেই পাঁচ সিটিতে নির্বাচনের পথে বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগে একজন ভোটারের পরিচয়পত্র যাচাই করা হচ্ছে। ১৬ জানুয়ারি ২০২২।
[বেনারনিউজ]

বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দলের বয়কটের মধ্য দিয়েই দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এই পাঁচ সিটি নির্বাচনকে রাজনৈতিক মহলে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।

অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই পাঁচ সিটির মেয়র পদে ইতিমধ্যে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।

চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষে অথবা আগামী বছর জানুয়ারির প্রথমদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া খুলনা ও বরিশালে ১২ জুন এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটে ভোট হবে।

সিটি নির্বাচনে একজন মেয়র ও কয়েকজন কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সিটি এলাকার ভোটারদের সরাসরি ভোটি নির্বাচিত হওয়ার বিধান রয়েছে।

তিন সিটিতে আ. লীগের প্রার্থী পরিবর্তন

গত শনিবার (১৫ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দলটির প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে।

দুই সিটিতে পুরোনো প্রার্থীদের ওপর ভরসা রাখলেও তিন সিটিতে আওয়ামী লীগ পাল্টে নিয়েছে প্রার্থী।

দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে গত নির্বাচনে দলের বিজয়ী প্রার্থীদের বাদ দিয়েছে দলটি এবং সিলেটে মনোনয়ন পেয়েছেন স্থানীয় রাজনীতিতে স্বল্প পরিচিত মুখ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

সভা শেষ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বরিশালে মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর আপন চাচা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপন ভাগনে।

কাদের জানান, গাজীপুরে মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ। এখানে গত নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বাদ পড়েছেন।

এছাড়া সিলেটে মনোনয়ন পেয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

রাজশাহী ও খুলনায় প্রার্থী পরিবর্তন করেনি দলটি।

দুটি সিটি করপোরেশনে বর্তমান দলীয় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং তালুকদার আব্দুল খালেকই থাকছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী।

সিটি নির্বাচন সরকারের ‘ফাঁদ’: বিএনপি

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে কোনো স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পাঁচ সিটি নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না দলটি।

গত ১০ এপ্রিল রাজধানী ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এই পাঁচ সিটি নির্বাচন সরকারের নতুন একটি ‘ফাঁদ’ এবং বিএনপি সেই ‘ফাঁদে’ পা দিবে না।

“আমাদের দল এই চক্রান্তে প্রলুব্ধ হবে না। এবার জনগণ ও বিএনপি সরকারের কোনো ফাঁদে পা দেবে না...আমরা তাদের ফাঁদ উল্টে দেবো,“ বলেন ফখরুল।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কারণ জানতে চাইলে ফখরুল বেনারকে বলেন, “দেখুন আমাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। দেশে কোনো নির্বাচন নেই, গণতন্ত্র নেই... এখানে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। আর এই কাজগুলো করেছে আওয়ামী লীগ। সুতরাং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে কোন নির্বাচনে অংশ নেয়ার মানেই হয় না।”

তিনি বলেন, বিএনপির সামনে এখন একটিই পথ, সেটি হচ্ছে আন্দোলন। আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার উদ্ধার এবং গণতন্ত্র উদ্ধার এখন বিএনপির বড় দায়িত্ব।

“আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি, আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যুক্ত হচ্ছে, ভবিষ্যতে আরো বেশী জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়েই সকল ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে,” বলেন এই বিএনপি নেতা।

অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়েও অনেক নেতা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “আমরা কিন্তু দলগতভাবেই নির্বাচন বয়কট করছি। কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যায়, তাঁদের বিরুদ্ধে অতীতেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সরকার এসব নিয়ে নানা ফাঁদ তৈরির চেষ্টা করে, আমরা সেসব ফাঁদে পা দিবো না।”

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বেনারকে বলেন, “আমরা মনে করছি যেহেতু সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিকে সরকার কর্ণপাত করছে না সেহেতু জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনগুলোতে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই।”

এখন কোনো নির্বাচনে অংশ নিলে সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ পাবে দাবি করে তিনি বলেন, “জাতীয় নির্বাচন কি প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে সরকারকে সেই ফায়সালা এখনই শেষ করতে হবে।”

এদিকে গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, “নির্বাচন থেকে পালিয়ে বেড়ানো বিএনপির জন্য শুভ হচ্ছে না, হয়নি। বিএনপির এই নির্বাচন বিমুখতা আসলে গণতন্ত্র বিমুখতারই শামিল।”

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা চাই সিটি নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক। তবে যে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না সেটি তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।”

'জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনগুলো গুরুত্বপূর্ণ'

জাতীয় নির্বাচনের আগে এই পাঁচটি সিটি নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান। বেনারকে তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি নানা চাপে থাকায় জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকার এই সিটি নির্বাচনগুলোকে নিয়ে নানা পরিকল্পনা করতে পারে।

“যদিও জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচন এক বিষয় নয়, তবে এবারের এই পাঁচ সিটি নির্বাচন এমন সময় হতে যাচ্ছে যখন আগামী সাধারণ নির্বাচন কাছাকাছি এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে আন্দোলন করছে,” বলেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।