লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদ: পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের বাধার মুখে বিএনপি
2023.06.08
ঢাকা
চলমান লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে দেশের জেলা বিদ্যুৎ অফিসগুলোতে স্মারকলিপি প্রদান ও অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপি।
দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশি বাধা ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের।
বিএনপি নেতা-কর্মীরা কমপক্ষে ১০ জেলায় হামলা ও বাধার মুখে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
“দেশের মানুষ যখন চরম লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ, সে সময় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা হামলার মুখে পড়ায় এটা আবারও প্রমাণিত হলো যে আওয়ামী লীগ দেশে চরম নিপীড়নমূলক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে,” বেনারকে বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, “ঢাকা, পাবনা, পটুয়াখালী, বগুড়া, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, ঝিনাইদহসহ কমপক্ষে ১০টি জেলায় বাধা ও হামলার মুখে পড়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। বাধা ও হামলা উপলক্ষে করেই সারা দেশে স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি।”
বিভিন্ন স্থানে হামলায় দলের ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
দেশের কয়েকটি জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অবশিষ্ট অংশে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এই অবস্থায় অসহনীয় লোডশেডিং এবং বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে সারা দেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।
ঢাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টন এলাকা থেকে দুপুর ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে মতিঝিল বিদ্যুৎ ভবনের দিকে রওনা হলে আরামবাগ নটরডেম কলেজের মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
মিছিল নিয়ে এগোতে না পেরে এক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) উপপরিচালক মমতাজ পারভিনের কাছে স্মারকলিপি দেন বলে জানিয়েছেন রিজভী।
তিনি দাবি করেন, “দেশে প্রায় ১৫৪টি বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট থাকলেও শুধুমাত্র ৪৯টি কোনো রকম চালু রয়েছে। যার ফলে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।”
তবে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার “অভিযোগ সত্য নয়” দাবি করে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “আমরা যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য তাদের মিছিল থামিয়ে প্রতিনিধি দলকে স্মারকলিপি প্রদানে সহযোগিতা করেছি।”
জেলা পর্যায়ে হামলার অভিযোগ
অপর দিকে, পাবনায় কর্মসূচি পালন শেষে ফেরার পথে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
হামলায় জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমানসহ ১০ জন আহত হবার দাবি করেছে বিএনপি।
দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে হাবিবুর রহমান জানান, দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে যাওয়ার আগেই পুলিশের বাধায় শহরের ঘোড়া স্ট্যান্ড এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সমাবেশ শেষে ফেরার পথে সরকারদলীয় নেতা-কর্মী তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে তিনিসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করলে সেটিকে প্রতিহত করা হয়েছে।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ডিএম হাসিবুল বেনজীর বলেন, পুলিশ এই ঘটনা সম্পর্কে কোনো অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বগুড়ায় পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে বিএনপি’র বিদ্যুৎ অফিসের সামনের অবস্থান কর্মসূচি।
শহরের নবাববাড়ী সড়কে দলীয় কার্যালয় থেকে বিএনপির মিছিল ফুলপট্টি এলাকার নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) অফিসে দিকে এগিয়ে গেলে পুলিশের বাধা মুখে পড়ে।
“বগুড়ায় বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কারণ ছাড়াই পুলিশ বাধা দিয়েছে,” বলেন বগুড়া জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, “বিদ্যুৎ অফিস সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হওয়ায় ওই অফিসের সামনে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তবে, স্মারকলিপি জমা দিতে দেওয়া হয়েছে।”
এদিকে ফেনীর কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জে কমপক্ষে পাঁচ নেতাকর্মী আহত হওয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপি।
ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল দাবি করেন, শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে ফেরার পথে সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে পুলিশ তাঁদের ওপর লাঠিচার্জ করে।
তবে পুলিশ লাঠিচার্জ করেনি বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, কেউ যেন বিদ্যুৎ অফিসের দিকে না আসতে পারে সেজন্য সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র গরমের মধ্যে দেশজুড়ে চলছে বিদ্যুৎ সংকট। বুধবার একটি আলোচনায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চলমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ১০-১৫ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হবে।