সরকারবিরোধী আন্দোলনে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশ

কামরান রেজা চৌধুরী
2023.06.14
ঢাকা
সরকারবিরোধী আন্দোলনে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশ চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড়ে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে আয়োজিত 'তারুণ্যের সমাবেশে' বক্তৃতা দিচ্ছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৪ জুন ২০২৩।
[মিনহাজ উদ্দিন/বেনারনিউজ]

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নতুন কৌশল হিসেবে বুধবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে তরুণ সমাবেশ করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি।

বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ডাকা তরুণ সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাড়তি মানুষ ও যানবাহনের চাপে চট্টগ্রাম শহরে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

দলীয় নেতারা বলছেন, প্রথমবারের মতো কোনো রাজনৈতিক দল তরুণদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আকৃষ্ট করতে এমন সমাবেশ ডেকেছে। দেশের আরও পাঁচ বিভাগীয় শহরে এমন সমাবেশ করা হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি।

দলটির মতে, এর মাধ্যমে দেশের তরুণরা দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেবে এবং তাঁদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির তরুণ সমাবেশ বিশেষ কোনো কর্মসূচি নয়। সেটি আর ১০টি সাধারণ রাজনৈতিক কর্মসূচির মতোই। এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন জমাতে পারবে না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবারের প্রথম তরুণ সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকেই আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজারো নেতা-কর্মী সমাবেশস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন।

প্রথমে কাজীর দেউড়ি আউটার স্টেডিয়ামে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলেও পরে তা বাতিল করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। দুপুর ২টার দিক থেকে সমাবেশ শুরু হয় কাজীর দেউড়ি মোড়ে।

সমাবেশের কারণে পুলিশ কাজীর দেউড়ি থেকে লাভলেন পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের হিসাবে কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ এই সমাবেশে অংশ নেন।

সমাবেশে গায়ে গা লাগিয়ে নেতাদের বক্তৃতা শুনতে দেখা যায়। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে মারামারিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে বিএনপির দুই পক্ষ। দলীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় সরকারের হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে।

“ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আদালতে গিয়ে যে আমরা ন্যায় বিচার পাব, সেই ন্যায় বিচার থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। সংসদকে শেষ করে দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে,” বলেন মির্জা ফখরুল।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপি করতে গেলে তারা রেহাই পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি করেন মির্জা ফখরুল।

কী এই তরুণ সমাবেশ?

সমাবেশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয় ৯ জুন। ওই দিন সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, গত ১৫ বছরে চার কোটি তরুণ নতুন ভোটার হয়েছেন। তবে তাঁরা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে ভোট দিতে পারেনি।

তিনি বলেন, এই সমাবেশের মাধ্যমে তাঁদের ভোটাধিকার রক্ষার ব্যাপারে সচেতন করা যাবে।

ঢাকা মহানগর তরুণ বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল বুধবার বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল প্রচার করে থাকে যে তরুণরা দেশের ভবিষ্যৎ; তারাই সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু তাদের লক্ষ্য রেখে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া হয় না।”

তিনি বলেন, “বিএনপিই প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে তরুণ সমাবেশের মাধ্যমে তরুণদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহী করার উদ্যোগ নিয়েছে।”

তাবিথ আউয়াল বলেন, “দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিল তরুণরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণসমাবেশ তরুণদের নেতৃত্বেই হয়েছে।”

“সে কারণে তরুণদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত করতে এই সমাবেশ। তরুণরা সাহসী। তারা নিরপেক্ষ ভোট চায়। তারা নিজেদের ভোটাধিকার ফেরত পেতে চায়। আমরা আশা রাখি, তারা ভবিষ্যতে আমাদের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাস্তায় নামবে,” বলেন তিনি।

তাবিথ আউয়াল বলেন, “তরুণদের পর আমরা নারী সমাবেশের আয়োজন করব।”

বিএনপি জানিয়েছে, ১৯ জুন বগুড়া, ২৪ জুন বরিশাল, ৯ জুলাই সিলেট, ১৭ জুলাই খুলনা ও ২২ জুলাই ঢাকায় সর্বশেষ তরুণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বুধবার বেনারকে বলেন, “আমি কোনো রাজনীতি করি না। তবে আমি শুনতে গিয়েছিলাম তাঁরা কী বলেন। তাঁরা নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছেন সেটি ভালো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলে আমরা ভালো ভোট দেখতে পাব এবং আমরা ভোট দিতে পারব।”

তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তরুণদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করা। কোনো ক্রমেই তরুণদের রাস্তায় সহিংস হতে উৎসাহিত না করা। কারণ গণতন্ত্র হলো শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “দেখুন বিএনপি বলছে দেশের সাধারণ তরুণরা এই সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেবে কিন্তু আমি তা মনে করি না।”

তিনি বলেন, “এখানে ছাত্রদল, যুবদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সদস্যরাই যোগ দেবেন; সাধারণ তরুণরা এসব আন্দোলনে যাবেন বলে আমার মনে হয় না। আর এই তরুণ সমাবেশে মূল সংগঠন বিএনপি অন্যান্য জনসভায় যাবে বলে সেটিই বলা হয়েছে। এতে নতুন কিছু নেই।”

অধ্যাপক নিজাম বলেন, “তবে এ ধরনের সমাবেশের যে কোনো গুরুত্ব নেই তা নয়। একটু ভিন্ন মাত্রায় আরেকটি সমাবেশ হলো এই আর কী!”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।