গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে সক্রিয় নেতাদের তুলে নেওয়ার অভিযোগ বিএনপির
2023.06.22
ঢাকা

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সক্রিয় নেতাদের রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি দাবি করেন, বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের তুলে নেওয়ার পরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, বর্তমান সংসদ বিলুপ্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি।
নীতি-নির্ধারণী মহলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব দাবি আদায় না হলে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না।
বৃহস্পতিবার ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের যারা রাজনীতিতে সক্রিয় এবং নির্বাচন করছেন বা করবেন—সেসব নেতাদের গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের বলা হচ্ছে যে, তোমরা নির্বাচন করবা যদি বিএনপি নির্বাচন না করে তাও।”
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চার সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে বর্তমান সরকার প্রমাণ করেছে যে, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যের মধ্যেই এই অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব।
কোন কোন নেতাকে গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে গেছে বেনারের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি তাদের নাম বললে তাদের আরও নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে দেওয়া হবে। আপনারা জানেন, তাদের কী পরিণতি হতে পারে।”
তবে বিএনপি মহাসচিবের এসব অভিযোগকে অসত্য ও ভিত্তিহীন বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এ অভিযোগের ব্যাপারে তারা প্রমাণ দিতে পারবে না।
তিনি বলেন, বিএনপির কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে গোয়েন্দা সংস্থা সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেপ্তার করে থাকে। এর বাইরে কাউকে তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই।
বিএনপির অভিযোগকে “অপপ্রচার” হিসেবে আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান বেনারকে বলেন, “যদি কোনো বিএনপি নেতাকে আটক করা হয়, সেটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নয়,” বরং তাঁদের বিরুদ্ধে থাকা বিভিন্ন ফৌজদারি মামলার কারণে।
গত ১৬ জুন ঢাকার মিরপুরে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির অনেক নেতা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এরপর মির্জা ফখরুল তার দলের নেতাদের ওপর চাপ দেওয়ার অভিযোগ তুললেন। তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে যে ঘটনাগুলো শুরু হয়েছিল, গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে ঢুকিয়ে দেওয়া, সেই কাজগুলো আবার শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুর দিকে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন বিএনপির ছয় জন সংসদ সদস্য। তাঁদের একজন উকিল আব্দুস সাত্তার।
পদত্যাগের পরে তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ওই একই আসনে উপনির্বাচনে অংশ নেন এবং পুনরায় নির্বাচিত হয়ে সংসদে ফিরে আসেন।
পরবর্তীতে উকিল আব্দুস সাত্তারকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
বিএনপি না থাকলে নির্বাচন ‘বৈধতা পায় না’
আওয়ামী লীগ কেন নির্বাচনের জন্য বিএনপি নেতাদের চাপ দিচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের নির্বাচনে এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিএনপি না থাকলে সেটি বৈধতা পায় না। সে কারণে তারা বিএনপি নেতাদের টার্গেট করে প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে নির্বাচনে আনতে চায়।”
“যদি কিছু বিএনপি নেতাকে তারা নির্বাচনে আনতে পারে সে ক্ষেত্রে তারা আগামীতে আরেকটি প্রহসনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারবে। তারা বলবে নির্বাচন স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে; যেখানে অনেক বিএনপি নেতা নির্বাচিত হয়েছে,” বলেন তিনি।
“এছাড়া, আরেকটি উদ্দেশ্য হলো চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনকে দুর্বল করা। তারা যদি কিছু নেতাদের রাজি করাতে পারে সে ক্ষেত্রে আন্দোলন দুর্বল হবে,” বলেন জহির উদ্দিন স্বপন।
একটানা ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। বিএনপির অভিযোগ, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জালিয়াতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দুইবার ক্ষমতায় এসেছে।
সে কারণে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত করতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সংশোধনী এনে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের ভাষ্য, আদালতের রায় অনুযায়ী, অসাংবিধানিক এই ব্যবস্থা বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির অভিযোগ, ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাদ দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এই প্রেক্ষাপটে গত ২৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেন, যাঁরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত করবে তাদেরকে আমেরিকান ভিসা দেওয়া হবে না।
এর উদ্দেশ্য হলো, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা।