রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগ বাদ

কামরান রেজা চৌধুরী
2024.08.30
ঢাকা
রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগ বাদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেবার জন্য ফ্রান্স থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর গণমাধ্যমকর্মীদের অভিবাদন জানাচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনূস। ৮ আগস্ট ২০২৪।
[রয়টার্স]

প্রথমবারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেও সেখানে ডাকা হয়নি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটকে।

এর কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি অনুসারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার করতে হবে, এরপর দলটির সাথে আলোচনা হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আলোচনা বিষয়টি বেনারের কাছে নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, শনিবার বিকাল তিনটা থেকে আলাদা আলাদাভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে মত বিনিময় করবেন প্রধান উপদেষ্টা।

তবে কোন কোন দলকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি।

আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলের নেতারা বলছেন, আলোচনার জন্য দাওয়াত না পেলেও তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর মত বিনিময় সভার ওপর নজর রাখছেন।

“যেসব দলের সাথে আগে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছিল, সেসব দলের সাথে প্রধান উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিক মত বিনিময় করতে যাচ্ছেন। আবার অনেক দল আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে, তাদেরও আলোচনায় ডাকা হচ্ছে,” বেনারকে বলেন সরকারের উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।

“রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরকারের আলোচনার একটি চ্যানেল তৈরি করা” এই মত বিনিময়ের উদ্দেশ্য জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়া সম্পর্কে জানতে চাই। এর মাধ্যমে তাদের সাথে একটি সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু হবে।”

ডাক পায়নি আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগ ও তার শরিক ১৪ দলকে মত বিনিময় সভায় আমন্ত্রণ না জানানো প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অবস্থান রয়েছে: সেটি হলো আওয়ামী লীগের সাথে মত বিনিময়ের আগে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম এবং ছাত্র-জনতা হত্যার জন্য তাদের বিচার হতে হবে।”

“এই বিষয়টির আগে সুরাহা হতে হবে। তারপর তাদের সাথে আলোচনা হবে,” বলেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বাহাউদ্দিন নাসিম তাঁর অবস্থান না জানিয়ে শুক্রবার টেলিফোনে বেনারকে বলেন, “আমরা কোনো দাওয়াত পাইনি। বর্তমানে আমরা আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা মূল্যায়ন করার মতো অবস্থায় নেই। তবে দেশের মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থন ও ভালোবাসা আছে।”

তিনি বলেন, “আমরা অপেক্ষা করছি, আলোচনা হোক। দেখা যাক কী হয়। আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াবে-এটা আমরা বিশ্বাস করি।”

আওয়ামী লীগের শরিক ১৪-দলীয় জোটের শরীক সাম্যবাদী দলের (দিলীপ) প্রধান দিলীপ বড়ুয়া শুক্রবার বেনারকে বলেন, “আমরা কোনো দাওয়াত পাইনি। আমাদের ডাকা হয়নি। তারা যদি না ডাকে আমাদের কিছু করার নেই।”

তিনি বলেন, “তবে আমাদের কথা হলো, তারা তো দেশের সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি নির্বাচনের কথা বলছে। কোনো দলকে না ডাকা হলে, সেটি তো অন্তর্ভুক্তিমূলক কিছু হলো না।”

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রধান উপদেষ্টার মতবিনিময়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি শুক্রবার বেনারকে বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তারা যেসব সংস্কার করবে, সেগুলোর প্রতি সমর্থন থাকবে।”

আওয়ামী লীগ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মত বিনিময় কতটুকু ফলপ্রসূ হবে-সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এ্যানি বলেন, “আওয়ামী লীগ তো পালাইছে। একটা দল পালাবে কেন? আমার মনে হয় তাদের কাউকে তো পাওয়াই যাচ্ছে না। তারা সামনে আসুক। আলোচনা করুক।”

এদিকে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা সবাইকে নিয়ে না করলে সেটি “টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে,” বলে শুক্রবার বেনারের কাছে মন্তব্য করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ।

তবে তাঁর মতে, আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দল মাঠে না থাকলে “সেজন্য বসে থাকাও ঠিক হবে না। শুরু তো করতে হবে। কারণ রাষ্ট্রীয় কিছু সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বড়ো ধরনের সংস্কার প্রয়োজন আছে।”

“তবে এখন আওয়ামী লীগ নেই বলে ভবিষ্যতে তাদের ডাকা যাবে না-এমন তো নয়। সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার পর সেখানকার সুপারিশগুলোর ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলগুলোর মতামত নেওয়া যেতে পারে,” বলেন অধ্যাপক সাব্বির।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।