আরো ৬ মাস বাড়ছে খালেদা জিয়ার কারাগারের বাইরে থাকার মেয়াদ

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.09.04
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
200904_Khaleda_Zia_Bail_Extend-1000.JPG বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে নিজের বাসায় যাবার পথে খালেদা জিয়া। ২৫ মার্চ ২০২০।
[বেনারনিউজ]

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রধান ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। বেনারকে এই তথ্য জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

এর আগে নির্বাহী আদেশে সরকার ছয় মাসের জন্য খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করেছিল। দুর্নীতির দুটি মামলায় মোট ১৭ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্তি পান ২৫ মার্চ।

আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৪ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে চাইবে সরকার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান শুক্রবার বেনারকে জানান, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনটি আগে মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল।

তিনি বলেন, “মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত দিয়ে আবেদনটি আমাদের কাছে ফেরত পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। আমরা এখন এ ব্যাপারে সারসংক্ষেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর প্রস্ততি নিচ্ছি।”

“খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করার ব্যাপারে সকল সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী। আশা করা যায় দুই-একদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে আপনারা জানতে পারবেন,” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদেরকে উদ্ধৃত করে সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস শুক্রবার জানায়, করোনাভাইরাস মহামারি ও তাঁর স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনা করে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধি করেছে সরকার।

“ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা এখনও ভালো নয়। আমরা চাই, তাঁর উন্নত চিকিৎসা হোক,” বেনারকে বলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার।

তিনি বলেন, “তবে বিদেশে চিকিৎসা হবে কি না সেটি নির্ভর করবে চিকিৎসকের পরামর্শের ওপর। শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় তাঁর সাজার মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।”

জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্টের টাকা তছরুপের দায়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার একটি বিচারিক আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন–দুদক। পরে সেই দণ্ড ১০ বছরে বৃদ্ধি করা হয়।

একই বছর ২৯ অক্টোবর, জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে বিচারিক আদালত।

উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী এহসানুর রহমান শুক্রবার বেনারকে বলেন, দুটি দেওয়ানিসহ ম্যাডামের বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা চলমান। এর মধ্যে ২৫টি মামলায় তিনি জামিনে আছেন।

তিনি বলেন, জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় সাত বছর সাজা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার।

পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাদের মতে, কারাগারে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। তাই দাবি ওঠে চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেওয়ার।

সরকারের পক্ষ থেকে ওই দাবি নাকচ করে দিলে দলের পক্ষ থেকে ঢাকার বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দাবি করা হয়।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল অথবা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোনও হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হবে না।

শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে।

তাঁর সুস্থতার জন্য মুক্তির দাবি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন পরিবারের সদস্যরা। ওই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে নির্বাহী ক্ষমতায় এ বছর ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে সরকার।

সরকারের দেয়া শর্ত অনুযায়ী, মুক্ত অবস্থায় বাড়িতে থাকতে হবে খালেদা জিয়াকে। কোনো জনসভা অথবা রাজনৈতিক কথা বলতে পারবেন না, বিদেশেও যেতে পারবেন না। সেই মেয়াদ এ মাসের ২৪ তারিখ শেষ হচ্ছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধির আবেদন করেন তাঁর ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে সরকার খালেদা জিয়াকে নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে চায় না। খালেদা জিয়ার বয়স চুয়াত্তর বছর। তাই তিনি ঝুঁকির মধ্যে আছেন।

তিনি বলেন, তাঁকে পুনরায় কারাগারে পাঠালে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ার কিছুটা ঝুঁকি তো থাকেই। রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে পুরোপুরি কোনঠাসা করে ফেলেছে সরকার। এখন খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে রাজনৈতিক লাভ নেই আওয়ামী লীগের। বরং বাইরে থাকলে সরকারের লাভ।

“শেখ হাসিনার দয়ায় কারাগারের বাইরে আছেন খালেদা জিয়া। বিএনপি কী করতে পারে তা প্রমাণ হয়ে গেছে। রাস্তায় সহিংসতা অথবা কোনো আন্দোলন করার শক্তি বিএনপির নেই,” বেনারকে বলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।