দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতিকে বিদায় বললেন পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতা

আহম্মদ ফয়েজ
2022.10.07
ঢাকা
দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতিকে বিদায় বললেন পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতা ২০১৮ সালে সাংগঠনিক কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ নেতা মো. আরমিন। সম্প্রতি দলে প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতি থেকে বিদায় নেন তিনি।
[ছবি: আরমিনের সৌজন্যে]

ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি পদ না পেয়ে দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছেন কিশোরগঞ্জের এক স্থানীয় নেতা।

প্রায় এক যুগ পর কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আংশিক নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয় বুধবার। এতে সভাপতি পদ প্রত্যাশী মো. আরমিনকে দেয়া হয় প্রথম সহ-সভাপতির পদ।

এর প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতি থেকে বিদায় নেন আরমিন। দুধ দিয়ে গোসল করার ভিডিওটি বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায় আরমিন নিজের ফেসবুকে পোস্ট করার পর ঘটনাটি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে চাঞ্চল্যের জন্ম দেয়।

“আমি খুব সচেতনভাবেই এই কাজটি করেছি। এভাবে অপমানিত হয়ে রাজনীতি করার চেয়ে রাজনীতি থেকে দূরে থাকাটাই আমার কাছে শ্রেয় মনে হয়েছে,” শুক্রবার বেনারকে বলেন আরমিন।

বৃহস্পতিবার নিজেরে ফেসবুক প্রোফাইল থেকে শেয়ার করা ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “১২ বছর ছাত্রলীগ থেকে আমার অর্জন ৭টি মামলার আসামি, এক বছর ধরে পুলিশের হয়রানি।”

ওই ক্যাপশনে তিনি আরো লেখেন, “ছাত্রদল থেকে আগত, বিএনপি পরিবার থেকে আগত কারও কাছে আত্মসমর্পণের চেয়ে বিদায় নেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত।”

“ঘোষিত কমিটিতে আমিই সবার সিনিয়র। সভাপতি করা হলে আমাকে করা হবে। আমি কোন পদের প্রার্থী তা না জিজ্ঞেস করেই ফেসবুকে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাই আমি দুঃখে দুধ দিয়ে গোসল করে ছাত্ররাজনীতির ইতি টানলাম,” লেখেন আরমিন।

‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থার’ কথা ভাবছে ছাত্রলীগ

গত বুধবার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ ওমান খানের স্বাক্ষরিত ১৯ সদস্যবিশিষ্ট পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

১২ বছর পর উপজেলা ছাত্রলীগের এই কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কোনো কাউন্সিল হয়নি বলে বেনারকে জানিয়েছেন আনোয়ার ।

“নানা রাজনৈতিক প্রতিকূলতার কারণে পাকুন্দিয়া কমিটি গঠন করা যাচ্ছিল না। সেখানে কাউন্সিল করা খুব কঠিন ছিল, তাই আমার দলীয় প্যাডে কমিটি ঘোষণা করেছি,” বলেন আনোয়ার।

আরমিনের ভিডিও সম্পর্কে তিনি বলেন, “রাজনীতি করা না করাটা আরমিনের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে যেহেতু ওই ভিডিওর কারণে জনমনে ছাত্রলীগ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে, তাই আরমিনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা চিন্তা করছি আমরা।”

ছাত্রদল ও শিবির সংক্রান্ত যে বক্তব্য আরমিন দিয়েছে তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন দাবি করে আনোয়ার বলেন, “নাজমুল আলম নামে যাকে সভাপতি করা হয়েছে সে আরমিনের সিনিয়র। দলীয় শৃঙ্খলা ঠিক রাখতেই এটি করা হয়েছে।”

এ প্রসঙ্গে আরমিন বেনারকে বলেন, “নাজমুল ও আমি সমবয়সী এবং রাজনৈতিকভাবে আমি নাজমুলের সিনিয়র।”

নিজের দল ক্ষমতায় থাকার পরও কী কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা হয়েছে জানতে চাইলে পাকুন্দিয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, “দলীয় কোন্দলের কারণে আমার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও ভাংচুরের অভিযোগে মোট সাতটি মামলা হয়েছে সেগুলোর তিনটিতে আমি এখনো নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেই।”

২০০৭-০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গ্রেপ্তারের পর কারাভোগ করা আরমিন বলেন, দলীয় কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেও তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

“আমি দুঃখ ও অভিমান নিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করে ছাত্ররাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছি। তবে কমিটি যদি পুনর্গঠন করা হয়, তা হলে আমি ছাত্ররাজনীতিতে ফিরে আসার বিষয়টি চিন্তা করব,” বলেন আরমিন।

যে কমিটি হয়েছে তা আর পুনর্গঠন হবার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান জেলা সভাপতি আনোয়ার।

অপরদিকে শিবির ও ছাত্রদলের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন নতুন কমিটির সভাপতি নাজমুল আলম।

স্থানীয় গণমাধ্যমের কাছে তিনি বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। অনেকেই সস্তা প্রচারণা চালিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল হবার চেষ্টা করছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।