পাঁচ সরকারি কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্তে নানা প্রশ্ন

কামরান রেজা চৌধুরী
2022.10.20
ঢাকা
পাঁচ সরকারি কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্তে নানা প্রশ্ন রাজধানীর সচিবালয়ের প্রধান ফটক থেকে একটি গাড়ি বের হচ্ছে। ১২ জানুয়ারি ২০২০।
[বেনারনিউজ]

প্রধান বিরোধীদল বিএনপির বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতির মধ্যে গত এক সপ্তায় এক সচিবসহ পাঁচ সরকারি কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার।

আনুষ্ঠানিকভাবে এর কারণ জানানো না হলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিরোধীদলের সাথে যোগাযোগ থাকার সন্দেহ থেকে হয়তো তাঁদের অবসরে পাঠানো হয়েছে।

১৬ অক্টোবর রোববার তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। এ ব্যাপারে সরকারি আদেশে বলা হয়, চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর চাকরি পূর্ণ হওয়ার পর জনস্বার্থে তাঁকে অবসরে পাঠানো হলো।

এই সিদ্ধান্তের পেছনে আর কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। এর দুদিন পর ১৮ অক্টোবর পুলিশ সুপার পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাঁরা হলেন, ঢাকায় কর্মরত অপরাধ তদন্ত বিভাগের মির্জা আব্দুল্লাহেল বাকী, দেলোয়ার হোসেন মিয়া এবং পুলিশ সদর দপ্তরে টিআর পদে কর্মরত মো. শহিদুল্লাহ চৌধুরী।

সরকার ‘একটি বার্তা দিয়েছে’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর খুব বেশি দেরি নেই উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বেনারকে বলেন, এই পাঁচ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর মাধ্যমে “সরকার অন্যান্য কর্মকর্তাদের একটি বার্তা দিয়েছে; তাঁরা যেন বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কাজ না করে, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাথে যোগসূত্র না রাখে।”

ভোটের সময় মাঠ পর্যায়ের ডেপুটি কমিশনার ও পুলিশ সুপারের মতো কর্মকর্তারা অনেক বড়ো ভূমিকা পালন করে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভোটের ফলাফল বহুলাশেং তাঁদের ওপর নির্ভর করে। সে কারণে পুলিশ, প্রশাসনের কর্মচারীদের ওপর নজর রাখতে চায় সকল সরকার।”

“বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় সরকার কিছুটা আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে বলে মনে হয়। সে কারণে হয়তো তাঁরা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে,” বলেন কলিমউল্লাহ।

সর্বশেষ ২০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত সহিদুল ইসলামের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে বাতিল করা হয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, সহিদুল ইসলামের এ বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরির মেয়াদ ছিল। তিনি রাষ্ট্রদূত থাকা অবস্থায় মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র‍্যাব এবং এর সাবেক ও কর্মরত সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অবরোধের কারণে ক্ষুব্ধ সরকার।  

এদিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গণজমায়েত ও জনসভা করছে বিএনপির নেতৃত্বে গঠিত বিরোধী জোট।

সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা জানুয়ারির প্রথম দিকে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আইন বহির্ভূত নয়

কেন তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মকবুল হোসেন।

তিনি ছাত্রাবস্থা থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালবাসেন উল্লেখ করে মকবুল জানান, মার্চ মাসে তিনি লন্ডন গেলেও সেখানে নির্বাসিত বিএনপি প্রধান তারেক রহমানের সঙ্গে তিনি দেখা করেননি।

তবে কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়ে সরকার কোনো “আইন বহির্ভূত কাজ করেনি,” বলে বৃহস্পতিবার বেনারের কাছে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল ফারুক খান।

যদিও সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পেছনে “অবশ্যই কোনো কারণ রয়েছে,” বলে বৃহস্পতিবার বেনারকে জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা এইচ.এন. আশিকুর রহমান।

তবে সেই কারণগুলো কী তা জানেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সরকারি চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী ২৫ বছর চাকরি পূরণ হলে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই যে কোনো কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে পারে সরকার।”

আইন অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীরা কোনোভাবেই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা সেটি মেনে চলতেন।

১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারি বিরোধী আন্দোলনে তৎকালীন ঢাকার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের উদ্যোগে গঠিত জনতার মঞ্চে যোগ দেন তখনকার সচিব মহিউদ্দিন খান আলমগীরের নেতৃত্বে অনেক সরকারি কর্মকর্তা।

পরে ১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করার পর মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসাবে স্থান পান মহিউদ্দিন খান আলমগীর।

একই কায়দায় ২০০৬ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে বিএনপি সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানের উত্তরার একটি বাসায় পুলিশ ও প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা গোপন বৈঠক করেন। পরবর্তীতে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।