বিএনপির সমাবেশের আগে ২১ জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন খুলনা
2022.10.21
ঢাকা

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসমাবেশের আগে ২১ জেলা এবং বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেশের তৃতীয় বৃহৎ নগরী, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র ও বিভাগীয় শহর খুলনা।
শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত খুলনা থেকে চলাচলকারী সকল বাস, মিনিবাস ও লঞ্চ বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসার জন্য খুলনার ওপর নির্ভরশীল আশেপাশের জেলার মানুষ।
বিএনপি নেতারা বলছেন, শনিবারের সমাবেশ বানচাল করতেই সরকার বাস-লঞ্চ ধর্মঘট ঘোষণা করেছে।
বিষয়টি অস্বীকার করে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সমাবেশ করতে বিএনপিকে সহযোগিতা করছে তাঁর দল আওয়ামী লীগ।
তবে সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম সমাবেশে “পাঁচলাখ মানুষ অংশগ্রহণ” করা দেখে “আতঙ্কিত” হয়ে সরকার “খুলনার সমাবেশ পণ্ড করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে,” বলে শুক্রবার বেনারের কাছে মন্তব্য করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
“সরকার এখন জনগণের ভয়ে তটস্থ। সে কারণে তারা নিজেরাই হরতাল ডেকেছে। বাস-ট্রাক সব বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি নদীতে চলাচলকারী লঞ্চও বন্ধ করে দিয়েছে,” বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “পরিবহন নেতারা আমাদের জানিয়েছে, তারা সরকারের চাপে বাধ্য হয়ে ধর্মঘট ডেকেছে।”
সমাবেশ করতে বিরোধী দলকে সরকার সহযোগিতা করছে ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “জ্বি, উনারা বাস, লঞ্চ বন্ধ করে আমাদের সহযোগিতা করছেন। উনারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে সহযোগিতা করছেন। উনাদের সহযোগিতা এমনই।”
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান বেনারকে বলেন, “সরকার কেন ধর্মঘট ঘোষণা করবে? খুলনায় বর্তমানে যে ধর্মঘট চলছে সেটি শ্রমিক সংগঠন ঘোষণা করেনি। বাস, লঞ্চ-মালিকরা তাদের যানবাহনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বন্ধ রেখেছেন।”
তবে খুলনা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের অন্যতম নেতা জাকির হোসেন বিপ্লব খুলনায় সাংবাদিকদের বলেছেন, মালিকপক্ষ বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য ধর্মঘট ডেকেছে এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো সেটি সমর্থন করেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান, দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ, পুলিশি নির্যাতন বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে দলের ১০ সাংগঠনিক জেলায় সমাবেশ শুরু করেছে বিএনপি।
গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর পরে ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহে।
এরপর অন্যান্য জেলায়ও সমাবেশ শেষে ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ঢাকায় সর্বশেষ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
‘অবস্থা ভালো নয়’
খুলনা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের প্রায় দেড় হাজার গাড়ি ঢাকাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলায় চলাচল করে বলে জানান পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত যশোরের বাসিন্দা আমিন উদ্দীনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যশোরের চিকিৎসকরা।
তাঁর ভাই আব্দুল লতিফ টেলিফোনে বেনারকে বলেন, “যশোর সদর হাসপাতালে সিট পাইনি। এখানে চিকিৎসাও হবে না। উনাকে এখনই খুলনায় নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “বাস, মিনিবাস সব বন্ধ। মাইক্রোবাস চালক কয়েকগুণ বেশি ভাড়া চাচ্ছে। এভাবে আমাদের কষ্ট দেয়ার কী মানে আছে!”
খুলনা লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন ১৫টি লঞ্চ জেলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মুখে অবস্থিত কয়রা উপজেলায় চলাচল করে। কয়রা থেকে মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।
লঞ্চ বন্ধ থাকায় মাছ ব্যবসায়ীরা পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না। যার প্রভাব ঢাকার বাজারেও পড়তে শুরু করেছে।
ঢাকার কাওরান বাজার এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মো. মাসুদ বেনারকে বলেন, “আমি ঢাকার বিভিন্ন বড়ো বড়ো হোটেলে মাছ সরবরাহ করি। আজ মাছ আসেনি। কালকেও আসবে না। কোথা থেকে মাছ দেবো।”
“কয়রার আড়তদাররা বলছেন, তাঁরা মাছ পাঠাতে পারছেন না। ওখানেই পচে যাচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে ওখানে বরফও পাওয়া যাচ্ছে না। অবস্থা ভালো নয়,” বলেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদের মতে, “যে যাই বলুক দেশের মানুষ মনে করে, সরকার এই ধর্মঘট ডেকেছে। এই ধরনের কাজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি বলেন, “বাস-লঞ্চ বন্ধ করে কি সমাবেশ বন্ধ করা যায়? সমাবেশ বন্ধ করার দরকার কী? বিরোধীদলের চেয়ে বড়ো সমাবেশ করে দেখানোই রাজনৈতিক কৌশল হওয়া উচিত।”
“যাঁরা বাসে-লঞ্চে চলাচল করেন তাঁরা কি সবাই সমাবেশে যাচ্ছেন? মানুষের কত জরুরি কাজ থাকে! কত অসুস্থ মানুষ থাকে! তাঁদের কী হবে? এই ধর্মঘটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাবে,” বলেন অধ্যাপক নিজাম।