বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

কামরান রেজা চৌধুরী
2022.11.01
ঢাকা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার ছবির পাশাপাশি নেতাকর্মীদের অনেকের হাতে ছিল দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি। ২৯ অক্টোবর ২০২২।
[বেনারনিউজ]

প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১৫ বছর আগের একটি মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকার এক বিচারিক আদালত।

বিএনপি সরকারের পতনের পর ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেয়া সেনা সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারেক রহমান, তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের এই মামলা দায়ের করে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, তারেক রহমানের স্ত্রী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তাঁরা এই অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সেই তথ্য গোপন করতে সহায়তা করেছেন।

তবে ইতোমধ্যে ইকবাল মান্দ বানু মৃত্যুবরণ করায় তাঁকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আসাদুজ্জামানের বিচারিক আদালত আগামী ৫ জানুয়ারি তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রীকে আদালতে হাজির করার বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে কাফরুল থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, তারেক ও জোবাইদা বিদেশে অবস্থান করছেন।

তারেক ও জোবাইদার বিরুদ্ধে যে মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ারা জারি হয়েছে “তার কোনো ভিত্তি নাই” বলে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তাঁর মতে, সরকার তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে না দেয়ার জন্যই আদালতকে ব্যবহার করে এমন আরেকটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপন মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “বিএনপির গত কয়েকটি জনসমাবেশে গণজোয়ার দেখে ক্ষমতাসীন দল ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। তারা বুঝে গেছে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান সশরীরে না থাকলেও তাঁদের নেতৃত্বের প্রতি দেশের মানুষ আস্থাশীল।”

তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা দেখে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতেই সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার ব্যবস্থা করেছে।”

“এগুলো বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আরেকটি উদাহরণ,” বলে মন্তব্য করেন জহির উদ্দিন স্বপন।

তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং আদালত স্বাধীনভাবে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। সরকারের এখানে কোনো ভূমিকা নেই।

“আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করে। তারেক রহমান ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের দুর্নীতির বিচার করছে আদালত। এখানে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই,” মঙ্গলবার বেনারকে বলেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান।

‘সরকার দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে’

বিএনপির এসব অভিযোগ সঠিক কি না, সে বিষয়ে মন্তব্য করা আদালত অবমাননার সামিল হতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে তাঁরা বলেন, এ কথা সত্য যে, বর্তমান সরকারের আমলে প্রায় সব প্রতিষ্ঠান প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “সরকার আদালতকে ব্যবহার করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে-এমন কথা বলা আদালত অবমাননার সামিল। কিন্তু এ কথা প্রমাণিত যে, এই সরকার দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। এর মধ্যে বিচার বিভাগও পড়ে।”

তিনি বলেন, “সে কারণে দেশের অনেক মানুষ বিশ্বাস করে যে, সরকার বিরোধী দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আদালতকে ব্যবহার করেছে।”

তিনি বলেন, “আদালত হলো একজন নাগরিকের সর্বশেষ আশ্রয়ের জায়গা। সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব না আসাটাই সব নাগরিকের কাম্য।”

২০০১ সালের ১ অক্টোবর ক্ষমতায় আসে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ঐক্যজোট সরকার। ২০০৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের প্রায় সকল দল বিএনপি-জামায়াত বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে। সহিংস এসব কর্মসূচির কারণে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে পরোক্ষভাবে সামরিক শাসন জারি হয়।

সেনা সমর্থিত ড. ফখরুদ্দীন আহমদের এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। আটক হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর দলের অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সপরিবারে দেশ ছেড়ে লন্ডন চলে যান তারেক রহমান। তবে দেশে থেকে যান বেগম খালেদা জিয়া।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক এবং তাঁর স্ত্রী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় এই মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, তারেক রহমান চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার টাকার বেশি সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন এবং সম্পদের মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির দায়ে বেগম খালেদা দণ্ডিত হলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত হন তারেক রহমান, যিনি এখন পর্যন্ত চারটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন।

তারেক যেসব মামলায় সাজা পেয়েছেন সেগুলো হলো- বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় দুই বছর, অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলায় সাত বছর এবং জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর সাজা। এ ছাড়া ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে তাঁর।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।