নেতারা হয় জেলে না হয় পলাতক, নির্বাচন কমিশনের আলোচনায় যাবার ‘সুযোগ’ নেই বিএনপির
2023.11.03
ঢাকা
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র নির্বাচন বয়কটের মধ্যেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে বিএনপি বলছে, আলোচনায় অংশ নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সবাই হয় জেলে, না হয় পলাতক আছেন।
আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করতে শনিবার এই আলোচনা সভা ডেকেছে নির্বাচন কমিশন।
ওই বৈঠকে বিএনপির কোনো প্রতিনিধি যাচ্ছেন না বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
“আমাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নীতিনির্ধারকরা জেলে। অন্যান্য নেতারা পুলিশি অভিযানের কারণে বাড়ি ছাড়া। এই অবস্থাতে ইসিতে গিয়ে আলোচনা করার মতো সুযোগ আমাদের হাতে নেই,” বেনারকে বলেন রিজভী।
ইসি সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটছে দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের মানুষ ভালো করেই জানে নির্বাচন কমিশন জাতির সঙ্গে প্রহসন করতে যাচ্ছে।
এর আগে বুধবার প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতির অগ্রগতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনায় অংশ নিতে চিঠি দেয় ইসি।
চিঠিতে ইসি বলেছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৩১ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আয়োজন করেছে। সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয় আলোচনা হবে এই বৈঠকে।
চিঠিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা মনোনীত দুজন প্রতিনিধিকে আলোচনায় পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে।
বিএনপির তালাবদ্ধ কার্যালয়ে চিঠি
গত বৃহস্পতিবার, নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মচারী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে একটি আমন্ত্রণপত্র নিয়ে দলটির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান। সেখানে কাউকে না পেয়ে দলের তালাবদ্ধ গেটের ভেতরে একটি চেয়ারে চিঠিটি রেখে আসেন।
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের সময় পুলিশ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মী ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষের পর থেকেই তালাবদ্ধ রয়েছে বিরোধী দলের প্রধান কার্যালয়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসির অফিস সহকারী মহসিন জানান, চিঠি হস্তান্তরের জন্য সকাল থেকে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ব্যর্থ হন। পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে তিনি চিঠিটি ওই চেয়ারে রেখে আসেন।
২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর বিএনপির সিনিয়র নেতারা পলাতক রয়েছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
আলোচনায় যাচ্ছে না অনেক দল
শুক্রবার বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ইসি আয়োজিত শনিবারের আলোচনায় যাচ্ছে না অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল।
তবে ক্ষমতাসীন জোটে থাকা বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি – জেপি এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ইসি আয়োজিত আলোচনায় অংশ নেবে।
এ প্রসঙ্গে গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বেনারকে বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে সব শরিক আলোচনায় যোগ দেবে।”
অপরদিকে, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বেনারকে বলেন, “আমরা যারা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে একদফা দাবি নিয়ে মাঠে লড়াই সংগ্রাম করছি তারা এই আলোচনায় যাচ্ছি না।”
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বেনারকে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য সরকারের পদত্যাগ আন্দোলনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা। তাদের গঠিত ইসির সঙ্গে বৈঠক হতে পারে না।”
ক্ষমতাসীন বা বিরোধী জোটে নেই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। এই দলটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বেনারকে বলেন, “আমার দল সংলাপে যেতে পারছে না। আমাদের একই সময়ে অন্য কর্মসূচি আছে।”
কোনো জোটে না থাকা বাংলাদেশ মুসলিম লীগও যাচ্ছে না সংলাপে। দলটির মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের এটি বেনারকে নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে সাম্প্রতিক সময়ে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকা ধর্মভিত্তিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও যাচ্ছে না ইসির আলোচনায়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বেনারকে জানিয়েছেন, তাঁর দল ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদসহ বাম গণতান্ত্রিক জোটে থাকা দলগুলোও যাচ্ছে না ইসির আলোচনায়।
“আমরা চাই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার। সেটা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনার এখন কোনো সুযোগ নেই,” বলেন প্রিন্স।
এদিকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক বেনারকে জানিয়েছেন, তাঁর দলের দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইসির আলোচনায় যোগ দেবে।
গ্রেপ্তার অব্যাহত, রিমান্ডে আমির খসরু
শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র রিজভী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মোট ২৯২ জনের অধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে এবং মিথ্যা বানোয়াট মামলায় মোট ১ হাজার ৪৫ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের ছয় দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক হত্যা মামলায় পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত শুক্রবার এই রিমান্ড মঞ্জুর করে।
সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু দলের কূটনৈতিক যোগাযোগের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছিলেন। তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ পুলিশের বক্তব্যে ধারণা পাওয়া যায় যে, চলমান গ্রেপ্তার অভিযান থামছে না। আগামী রবি ও সোমবার ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী দলগুলো।
ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ শুক্রবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে হামলা, আগুন ও পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলার আসামি এবং এখনও পলাতক বিএনপির বাকি নেতাকর্মীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, “আমরা দেখব কার নেতৃত্বে, কার প্রভাবে, মঞ্চে কারা বিএনপির লোক ছিল এবং কারা সহিংসতায় উস্কানি দিয়েছিল। আমরা এফআইআর তালিকাভুক্ত বাকিদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করব।”