কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে ১১ পুলিশসহ আহত ৩১

আহম্মদ ফয়েজ
2022.11.07
ঢাকা
কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে ১১ পুলিশসহ আহত ৩১ কিশোরগঞ্জ শহরের জেলা বিএনপি কার্যালয় এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ। ৭ নভেম্বর ২০২২।
[বেনারনিউজ]

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতা-কর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে সোমবার কিশোরগঞ্জে ১১ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩১ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় পুলিশ দুই বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে।

‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে যুবদলের নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে যোগদান করার সময় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে সংঘর্ষ হয় বলে বেনারকে জানান স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা।

এই ঘটনায় দুই বিএনপি কর্মী গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাজহারুল ইসলাম বেনারকে বলেন, ‘মিছিলে যোগ দেওয়ার সময় দলীয় নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিল, এসময় পুলিশ বিনা উসকানিতে লাঠিচার্জ ও গুলি চালালে ২০ জন দলীয় নেতা-কর্মী আহত হন।’

লাঠিচার্জের এক পর্যায়ে পুলিশ নেতা কর্মীদের উপর গুলি চালায় বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফসহ অন্তত ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন এবং তারা বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আহতদের মধ্যে আট থেকে দশজন নেতা-কর্মী মুখমণ্ডল ও মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ বেনারকে বলেন, “বিএনপি নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা যানবাহন ভাংচুর শুরু করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় বিএনপি কর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং এতে ১১ পুলিশ আহত হন।”

আহতদের সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১০-১২টি শটগানের গুলি ছুড়েছে এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের সুমনসহ দুজনকে আটক করেছে।

কিশোরগঞ্জে বিএনপির মিছিলে হামলার ঘটনায় সোমবার এক বিবৃতিতে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এই হামলাকে অমানবিক, পৈশাচিক ও ন্যাক্কারজনক দাবি করে ফখরুল বলেন, নেতা-কর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা, গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জ বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের শাসনামলে বর্বরতার আরেকটি বাজে দৃষ্টান্ত। এই হামলা নিঃসন্দেহে পূর্বপরিকল্পিত।

কিশোরগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল-আমিন হোসেন সোমবার রাতে বেনারকে বলেন, “পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।”

নেতা-কর্মীদের ওপর গুলি ছোঁড়া হয়েছে বলে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “এই অভিযোগ সত্য নয়, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাধারণত ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে থাকি।’

ঝিনাইদহে বিএনপি-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে আহত ১৫

একই দিনে ঝিনাইদহে বিএনপি ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় পুলিশ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবুল বাশার গণমাধ্যমকে জানান, ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ উপলক্ষে সরকারি কেসি কলেজ থেকে একটি মিছিল বের করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঝিনাইদহ জেলা শাখা। অপরদিকে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাব চত্বরে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা জড়ো হলে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয় এবং পরবর্তীতে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।

এই ঘটনায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ দুই পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন বলে জানান তিনি।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং এই ঘটনায় শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

জেলা যুবলীগের আহবায়ক আশফাক মাহমুদ দাবি করেছেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিল। সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।

স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে আশফাক বলেন, “পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে।”

জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর দল শান্তিপূর্ণভাবে বিপ্লব ও সংহতি দিবসের অনুষ্ঠান করছিল, সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছে।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সেনা বিদ্রোহের দিবসটিকে বিএনপি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ ও আওয়ামী লীগ ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।