খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে গণঅনশন করবে বিএনপি
2021.11.18
ঢাকা

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেবার দাবিতে শনিবার গণঅনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
খালেদা জিয়াকে বাসায় রেখে চিকিৎসা নিতে দেয়া হচ্ছে, এটিই কি যথেষ্ট নয়—বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যের পর দিন দলের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি নেতাদের দাবি, রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো না, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন তিনি।
“তাঁর কিছু হলে এর দায়দায়িত্ব সরকারের,” বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে জানান বিএনপির সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগেরও হুমকি দেন।
তবে এমন হুমকি গ্রাহ্য না করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেয়া আইনগতভাবে সম্ভব নয়। উনার চিকিৎসা দেশের অন্যতম ভালো হাসপাতালে হচ্ছে।”
“বিএনপি নেতারা আমাকে যত খুশি গালমন্দ করতে পারেন; কিন্তু সরকার আইনের বাইরে যেতে পারবে না,” বলেন মন্ত্রী।
যা বলছেন মহাসচিব
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে দেয়া জরুরি। এটি তাঁর অধিকার।”
তিনি বলেন, “আমরা বার বার সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি তাঁকে যেন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে দেয়া হয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার সাড়া মিলছে না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, শনিবার (২০ নভেম্বর) খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ও তাঁর মুক্তির দাবিতে সকাল নয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়ে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করা হবে।
এ ছাড়া সারাদেশে এই কর্মসূচি পালন করা হবে বলে তিনি জানান।
সংসদ থেকে পদত্যাগের হুমকি
একসময় খালেদা জিয়া যে আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন সেই আসনের (বগুড়া-৬) সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় খালেদা জিয়াকে “মানবিক দিক বিবেচনায়” দুয়েকদিনের মধ্যে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান।
তবে সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এই দাবি নাকচ দেন।
৭১ বছর বয়স্ক গোলাম সিরাজ বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো না হলে এবং পরিস্থিতি চরম হলে দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির পক্ষে এই সংসদে থাকা হয়তো সম্ভব হবে না।”
“দল সিদ্ধান্ত দিলে আমিই প্রথম সংসদ থেকে প্রথম পদত্যাগ করব। খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার দায় আওয়ামী লীগকে বহন করতে হবে,” জানিয়ে গোলাম সিরাজ বলেন, “উনার অবস্থা ভালো না। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর উনার শারীরিক অবস্থা চরম অবনতি হচ্ছে, যা তাঁকে দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
“পরিবার থেকে পাঁচ বার আবেদন করা হয়েছে। দল থেকে বারবার আবেদন করা হচ্ছে। সব আবেদনে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত জামিন দিয়ে দুই-এক দিনের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হোক,” বলেন গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ।
‘সরকার ভয় করছে’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. শামসুল আলম বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “খালেদা জিয়ার প্রতি দেশের সাধারণ জনগণের সহানুভূতি রয়েছে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আসলেই খুব খারাপ। এই অবস্থায় তিনি বিদেশে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রাখেন।”
তিনি বলেন, “কিন্তু সরকার তাঁকে ছেড়ে দিতে ভয় পাচ্ছে। সরকার মনে করছে, তাঁকে ছেড়ে দিলে হয়তো তিনি বিদেশে গিয়ে রাজনীতি শুরু করবেন এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করবেন।”
অধ্যাপক শামসুল বলেন, “তবে সরকার এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে যদি খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দেয় তাহলে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে। জনগণের মাঝে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও উজ্জ্বল হবে। আবার বিএনপির সাথে তাদের রাজনৈতিক তিক্তটা কিছুটা হলেও কমবে।”
তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর আওয়ামী লীগের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সরকারের কারণে বিএনপি কোনো আন্দোলন করতে পারছে না।”
অধ্যাপক শামসুল বলেন, “তারা আজকে গণঅনশন ঘোষণা করেছে। এর বাইরে বর্তমানে কোনো কিছু করার ক্ষমতা বিএনপির নেই। সুতরাং, সরকার চাইবে না বিএনপি এই চাপ থেকে বেরিয়ে আসুক।”
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় তাঁর ১৭ বছরের জেল হয়েছে।
২০২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। একই বছর জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় সাজা হয় তাঁর।
কারাগারে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পারিবারিক আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার তাঁর সাজার কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। তাঁকে বাসায় থেকে দেশীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়।
তবে শর্ত হিসাবে বলা হয়, তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না অথবা রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে পারবেন না। শর্ত ভঙ্গ হলে তাঁকে আবার কারাগারে প্রেরণ করা হবে।
সেই শর্ত মেনে চলায় প্রতি ছয় মাস অন্তর তাঁর দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধি করছে সরকার। সর্বশেষ এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।
চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়া উচ্চ ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত।
গত ১৪ এপ্রিল তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন, ১৭ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৯ জুন হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন তিনি।
অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে তাঁকে আবারও ভর্তি করা হয়। ৭ নভেম্বর তিনি বাসায় ফেরেন। ১৩ নভেম্বর তাঁকে আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়।