বিএনপির ঢাকা সমাবেশের আগে সহস্রাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
2022.12.05
ঢাকা

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির আসন্ন ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত কয়েকদিনে সহস্রাধিক দলীয় নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রতি রাতেই শহরজুড়ে চলছে তল্লাশি অভিযান।
গ্রেপ্তারকৃতদের দলীয় পরিচয় না জানালেও পুলিশের তরফ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত সারা দেশে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন মামলায় তিন হাজার ৮৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দলটির নেতাকর্মীর সংখ্যা এক হাজার ৩১৫।
অভিযানে বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলেও গত ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানের উদ্দেশ্য হিসেবে পুলিশ বলছে, বিজয় দিবস, বড়দিন এবং থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে অভিযান চলছে। এ ছাড়া গত ২০ নভেম্বর ঢাকার একটি আদালত এলাকা থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনাকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই অভিযান।
“গত ৩০ নভেম্বর রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশের অভিযানে আমাদের ১ হাজার ৩১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির সমাবেশকে বানচাল করতে সরকার পরিকল্পিত একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে,” বেনারকে বলেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, বিএনপি ৯টি বিভাগীয় গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করেছে। সেগুলোতেও সরকার নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল। কিন্তু ঢাকার সমাবেশ নিয়ে সরকার ভীত হয়ে পড়েছে বলেই চরম আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে।
“তালিকা করে পুলিশ বিএনপির সংগঠকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে এবং সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বিএনপির সংগঠকদের ওপর হামলা করছে,” অভিযোগ এই বিএনপি নেতার।
অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার বলেছেন, বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তাই সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন তাই করছে।
নোয়াখালীতে দলীয় অনুষ্ঠানে কাদের বলেন, “ঢাকাবাসীর নিরাপত্তা বিবেচনায় ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সারা শহর পাহারায় থাকবে। এতদিন ছাড় দিচ্ছি, কিন্তু তারা (বিএনপি) যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে, বিশৃঙ্খলা করে, জনগণের জানমালের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করে, সে অবস্থায় আমরা ছেড়ে দেবো না। সমুচিত জবাব দেব।”
অনিশ্চয়তা কাটেনি সমাবেশের স্থান নিয়ে
শুরু থেকেই নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার বিষয়ে অনড় অবস্থান জানিয়ে আসছে বিএনপি। তবে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার আহ্বান জানিয়ে আসছে এবং ঢাকা মহানগর পুলিশও (ডিএমপি) বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের পরিবেশ নেই এবং না চাওয়া সত্ত্বেও এই স্থানে সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়ার পেছনে সরকারের কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে দাবি করে সেখানে সমাবেশ না করার সিদ্ধান্তে অনড় বিএনপি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বেনারকে বলেন, “গতকাল আমাদের একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছে আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি না দিলে আমরা আরামবাগ এলাকায় সমাবেশ করতে চাই।”
তবে কোনো অবস্থাতেই বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা এ ধরনের কোনো স্থানে সমাবেশ করবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এর আগেও বিএনপি অনেক সমাবেশ করেছে। সেগুলোতে কোনো সমস্যা হয়নি, এখন সরকার কেন সমস্যার কথা বলছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।”
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ বিএনপিকে কোনো সড়কেই সমাবেশের অনুমতি দেবে না।
“পল্টন এবং আরামবাগের মধ্যে কোনো তফাত নেই। বিএনপিকে অবশ্যই সমাবেশের জন্য কোনো খোলা মাঠ বেছে নিতে হবে,” বলেন ফারুক।
‘সংঘাতপূর্ণ মনোভাব পরিহার করতে হবে’
রাজনৈতিক দলগুলোর এই মুখোমুখি অবস্থান গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয় বলে মন্তব্য করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের মঙ্গলের জন্য ক্ষমতাসীন দলকে অবশ্যই ছাড় দেয়ার মনোভাব দেখাতে হবে। এখন যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে সংঘাত অনিবার্য হয়ে যাচ্ছে।”
রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জনগণের ভালো বিবেচনা করে সংঘাতপূর্ণ মনোভাব পরিহার করার আহ্বান জানান নাগরিক সমাজের এই প্রতিনিধি।
অপরদিকে পুলিশের বিশেষ অভিযানকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক।
তিনি বলেন, “সড়কে সমাবেশ করার বিষয়ে বিএনপির অনড় অবস্থান মোটেও যৌক্তিক নয়। বিএনপির উচিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে সম্মত হওয়া।”
প্রসঙ্গত, গত ১২ অক্টোবর থেকে দেশের বড়ো শহরগুলোতে প্রতি শনিবার বিভাগীয় গণসমাবেশ করে আসছে বিএনপি। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় দশম গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকার বিরোধী এই সমাবেশ শেষ করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।