জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে জামায়াতের আমির গ্রেপ্তার

কামরান রেজা চৌধুরী
2022.12.13
ঢাকা
জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে জামায়াতের আমির গ্রেপ্তার জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকার একটি আদালতে হাজির করছে পুলিশ। ১৩ ডিসেম্বর ২০২২।
[বেনারনিউজ]

জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বাংলাদেশের প্রধান ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

মঙ্গলবার রাত একটার দিকে রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা (সিটিটিসিইউ) তাঁকে আটক করে বলে বেনারকে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী রোকন রেজা।

তিনি জানান, শফিকুর রহমানকে পুলিশ মঙ্গলবার আদালতে উপস্থাপন করলে তাঁর জামিন আবেদন বাতিল করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।

শফিকুর রহমান নির্দোষ দাবি করে রোকন রেজা বলেন, “জামায়াত আমিরকে কোনো মামলার আসামি হিসেবে আটক করা হয়নি। উনাকে যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আটক করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “ওই মামলায় যারা আসামি তাদের আমরা চিনি না। উনি নির্দোষ।”

এর আগে ৯ নভেম্বর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাঁর ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসিইউ।

জামায়াতের অভিযোগ, গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকারের বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের আটকের অংশ হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শফিকুর রহমানকে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

তিনি মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত প্রধান শফিকুর রহমানের বক্তব্য উসকানিমূলক ছিল। এই উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সহিংসতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। সে কারণে পুলিশ তাঁকে আটক করেছে।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পুলিশ অনেক সময় অনেককে আটক করে থাকে। উনি কী করেছেন সেটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেবে পুলিশ।”

জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “জঙ্গিবাদের সঙ্গে জামায়াত এবং দলের নেতারা সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। উনারা এখন বিভিন্ন কথা বলছেন।”

জামায়াতের নিন্দা

ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়ার নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মঙ্গলবার ফেসবুকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান নিন্দা প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কোনো গোপন সংগঠনের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক, সংশ্লিষ্টতা নেই।”

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান জানান, জামায়াতে ইসলামী নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাজনীতি করে। ডা. শফিকুর রহমানের সব তৎপরতা প্রকাশ্য।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “১০ ডিসেম্বর যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর এই আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত এবং রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই তাঁকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।”

ভারপ্রাপ্ত জামায়াত আমির আরও বলেন, “আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই, গ্রেপ্তার, হয়রানি, জেল-জুলুম ও নির্যাতন চালিয়ে জনগণের আন্দোলন দমানো যাবে না। আমরা রিমান্ড বাতিল করে অবিলম্বে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের মুক্তি দাবি করছি।”

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।

বিএনপির দাবি, আগামী নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে এবং তাঁরা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না।

তাঁদের এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য সমমনা ছোট ছোট রাজনৈতিক দল।

দলের অবস্থানের পক্ষে জনসমর্থন আদায়ের জন্য অক্টোবর মাস থেকে ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় এবং বড়ো শহরে মহাসমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি। এই সমাবেশে ব্যাপক সংখ্যক নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করে।

ঢাকার বাইরে বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশে জনগণের অংশগ্রহণে উৎসাহিত হয়ে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করা হবে।

সমাবেশের আগেই দলীয় নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। ওই ঘটনায় পুলিশের গুলি একজন নিহত হন বলে জানায় বিএনপি।

দলের সিনিয়র নেতাদের আটক ছাড়াও সারা দেশে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের আটক করে পুলিশ। ৮ ডিসেম্বর কেবলমাত্র ঢাকার আদালতে এক হাজার বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে আদালতে উপস্থিত করে পুলিশ এবং তাঁদের প্রায় সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সংঘর্ষের পর দলীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে বোমা উদ্ধার করে বলে জানায় পুলিশ। তবে বিএনপির অভিযোগ, পুলিশ নিজেরা বোমা রেখে বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়েছে। ১০ ডিসেম্বর দলের প্রধান খালেদা জিয়া ও দলের ভবিষ্যৎ প্রধান তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।

কিন্তু ৯ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার আদালত তাঁদের জামিন আবেদন নাকচ করে দেয়।

১০ ডিসেম্বর ১০ দফা দাবি পেশ করেছে বিএনপি। ১১ ডিসেম্বর সংসদ থেকে একযোগে পদত্যাগ করেন বিএনপির ছয় সংসদ সদস্য।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।