মালয়েশিয়ায় আটক বিএনপি নেতা কাইয়ুমকে দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া স্থগিত
2024.01.18
ঢাকা ও কুয়ালালামপুর
মালয়েশিয়ায় আটক বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এম এ কাইয়ুমকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া স্থগিতের আদেশ দিয়েছে দেশটির উচ্চ আদালত।
আদালত আগামী ৫ এপ্রিল এই মামলার শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছে বলে বৃহস্পতিবার বেনারকে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী কি শু মিন।
এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে মালয়েশিয়ার উচ্চ আদালত এই স্থগিতাদেশ দেয়। এর ফলে তাঁকে আপাতত বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারবে না মালয়েশিয়া সরকার।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে একজন বিদেশি নাগরিককে হত্যা মামলার আসামি কাইয়ুম। ২০১৫ সাল থেকেই তিনি মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তালিকাভুক্ত শরণার্থীও তিনি।
তাঁর মেয়ে বেনারকে আরও জানান, শরণার্থী হিসেবে কাইয়ুম যে কার্ড বহন করছিলেন, সেটিও মালয়েশিয়ার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
যদিও ইউএনএইচসিআর মালয়েশিয়া কাইয়ুমের শরণার্থী পরিচয় বা কার্ডের যথার্থতা সম্পর্কে বেনারের কাছে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
আদালতে দেওয়া কাইয়ুমের মেয়ের হলফনামা বেনার প্রতিনিধি দেখেছেন। হলফনামা অনুসারে, গত ১২ জানুয়ারি তার মা শামীম আরা বেগম আমপাং জয়া-জেলা পুলিশের কাছ থেকে একটি ফোন পান। মায়ের কাছে তাঁর বাবাকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয় এবং বাসায় থাকা তাঁর পাসপোর্টটি পুলিশের কাছে পাঠাতে বলা হয়।
“পুলিশ শুধু বলেছে যে, তাদের কাছে এমন তথ্য রয়েছে যা ইঙ্গিত করে যে আমার বাবার পাসপোর্ট সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার বাতিল করেছে,” যোগ করেন তিনি।
“আমার বিশ্বাস বাবাকে মালয়েশিয়ায় সংঘটিত কোনো অন্যায়ের কারণে আটক করা হয়নি। ...তাঁকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্য জোরপূর্বক বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো।”
“এটি প্রত্যর্পণ আইনের মতো আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে গোপনীয়তার সাথে সরকারের মধ্যে পরিচালিত একটি অপারেশন বলে মনে হচ্ছে,” হলফনামায় বলেছেন কাইয়ুমের মেয়ে।
পরিবারের দাবি, কাইয়ুমকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠালে তিনি রাজনৈতিক নিপীড়নের মুখোমুখি হতে পারেন, কারণ তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর সাথে যুক্ত একজন বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
গ্রেপ্তারের কারণ অজানা
বৃহস্পতিবার আদালতকে কাইয়ুমের আইনজীবী কি শু মিন জানান, মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ যে কোনো সময় কাইয়ুমকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে পারে।
তিনি বলেন, “আমি আম্পাং জায়া জেলা থানার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য পেয়েছি যে, কাইয়ুমকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার জন্য অভিবাসন বিভাগে হস্তান্তর করা হবে এবং শিগগির তা হতে পারে।”
কি শু মিন বেনারকে জানান, তিনি পুলিশ হেফাজতে থাকা কাইয়ুমের সঙ্গে মঙ্গলবার দেখা করেছেন। এসময় তিনিও গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে পারেননি।
কাইয়ুমকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তথ্য পেতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামীম আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বেনারকে বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যা মামলার আসামি কাইয়ুম।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল বেনারকে বলেন, “এম এ কাইয়ুম ওই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলায় দুজন তদন্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর মামলার কার্যক্রম শেষ হবে বলে আশা করছি।”
বলা হচ্ছে এটি রাজনৈতিক মামলা—এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাইলে তাপস বলেন, “অপরাধ করলে মামলা হয়। রাজনীতি করলে মামলা হয় না। উনি অপরাধ করে পালিয়ে গেছেন।”
রাষ্ট্র কাইয়ুমের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে বলেও জানান তাপস কুমার পাল।
রাজনৈতিক কারণে মামলা: বিএনপি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বেনারকে বলেন, “আমরা মনে করি সে (কাইয়ুম) কোনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। রাজনৈতিক কারণে তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। ...আমরা বিশ্বাস করি, শরণার্থী হিসেবে থাকায় সে মালয়েশিয়ায় নিরাপত্তা পাবে।”
তিনি বলেন, “প্রকৃত হত্যাকারীকে খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করলে আমরা খুশি হবো। তবে সেটাতে সরকারের আগ্রহ নেই। সরকারের আগ্রহ হলো বিএনপির লোকজনকে বিপদাপন্ন করা।”
মালয়েশিয়া শাখা বিএনপির সভাপতি বদরুল রহমান বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে উনাকে (কাইয়ুম) আটক করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল উনার পাসপোর্টের মেয়াদ নেই, কিন্তু উনার শরণার্থী কার্ড আছে।”
বদরুল আরও বলেন, “বাংলাদেশে যেন পাঠাতে না পারে সে বিষয়ে মালয়েশিয়ার উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন সময় লাগবে অফিসিয়াল প্রক্রিয়া শেষ করে বের হয়ে আসতে।”
জাতিসংঘ মানবাধিকার কনভেনশন, ১৯৫১ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির যদি জীবননাশের হুমকি থাকে, তাহলে সে যে কোনো দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে পারে অথবা রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারে। তবে মালয়েশিয়া জাতিসংঘের ওই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশান-২ নম্বর সার্কেল এলাকার ৯০ নম্বর সড়কে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও-বিডির কর্মকর্তা তাবেলা সিজার।
ঘটনার দিনই তাঁর সহযোগী আইসিসির কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভেন ডার বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন।
পরের বছরের ২২ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী বিএনপি নেতা কাইয়ুমসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
ওই বছরের ২৫ অক্টোবর সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।