বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে পদক্ষেপ নিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৬ কংগ্রেস সদস্যের আহ্বান

আহম্মদ ফয়েজ
2023.06.15
ঢাকা
বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে পদক্ষেপ নিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৬ কংগ্রেস সদস্যের আহ্বান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকায় বিরোধীদল বিএনপির মিছিল। ৩১ জানুয়ারি ২০২৩।
[এএফপি]

আপডেট: ১৫ জুন ২০২৩। ইস্টার্ন সময় বিকাল ০৪:১৫

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের কাছে চিঠি লিখেছেন দেশটির ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ছয় কংগ্রেস সদস্য।

বৃহস্পতিবার এক ইমেইল বার্তায় বেনারনিউজের কাছে চিঠিটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন অন্যতম স্বাক্ষরকারী কংগ্রেস সদস্য বারবারা লি’র কমিনউনিকেশন ডিরেক্টর সিন এম. রাইয়ান।

গত ৮ জুন এই চিঠি পাঠানো হয়। তবে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে কংগ্রেস সদস্য উইলিয়াম আর কিটিং মঙ্গলবার টুইট করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।

বুধবার (১৪ জুন) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ছয় কংগ্রেস সদস্যের চিঠি সম্পর্কে এক সাংবাদিক মন্তব্য জানতে চাইলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার ওই চিঠির বিষয়ে অবগত নন জানিয়ে বলেন, “আমরা সাধারণত কংগ্রেসের সদস্যদের কাছ থেকে যেসব চিঠি পাই সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করি না।”

কংগ্রেস সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া চিঠির উত্তর গোপনীয়ভাবে তাঁদেরকে দেয়া হয় বলে জানান মিলার।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী অন্য চার সদস্য হলেন—জেমস পি ম্যাকগভার্ন, জিম কস্টা, ডিনা টাইটাস ও জেমি।

চিঠির একটি অনুলিপি প্রকাশ করে মার্কিন কংগ্রেস সদস্য কিটিং টুইট করেন, “বাংলাদেশে চলমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”

টুইটে তিনি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন “অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য” মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের প্রতি “বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং কর্মকর্তাদের দ্বারা সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতার আহ্বান অব্যাহত রাখার” অনুরোধ করেন।

এই চিঠি পাঠানোর কয়েক সপ্তাহ আগে বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির ছয় কংগ্রেস সদস্য বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে একটি চিঠি লিখেছেন।

এছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের নিপীড়ন করা হচ্ছে এবং তাঁর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন এমন দাবি নিয়ে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ও ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেলকে চিঠি পাঠিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য।

মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে

চিঠিতে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠিতে বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও অন্যান্য সংস্থার প্রতি অনুরোধ জানান তাঁরা।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালে বাংলাদেশ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানান তাঁরা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিকেও স্বাগত জানান।

তাঁরা বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই নিষেধাজ্ঞার পরও বাংলাদেশে দমন-পীড়ন হ্রাস পায়নি।

এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাওয়ার পাশাপাশি, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আছে কি না, তা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর কীসের ভিত্তিতে পর্যালোচনা করবে তাও জানতে চেয়েছেন এই কংগ্রেস সদস্যরা।

এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করতে পারে বলেও মত দেন তাঁরা।

“আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ইতোমধ্যে বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার এবং সহিংসতা হয়েছে। যা আসন্ন নির্বাচনের ফলাফলকে কলঙ্কিত করতে পারে এবং সামাজিক সংঘাতকে আরও প্রকট করে তুলতে পারে,” বলা হয় চিঠিতে।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ২০২২ সালের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, গত বছর দেশে ৩১টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ২১টি বলপূর্বক গুম, ৬৮টি হেফাজতে মৃত্যু এবং ১৮৩ জন সাংবাদিকের ওপর র‌্যাব, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স গোয়েন্দা শাখাসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা সংঘটিত হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এতে বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পুরস্কৃত ও পদোন্নতি পাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে।

বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে অস্বীকার করে চলেছে দাবি করে চিঠিতে বলা হয়, দেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা হ্রাস করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করে ষড়যন্ত্র করছে: আওয়ামী লীগ

বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মার্কিন কংগ্রেসের ছয় সদস্যের চিঠি প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপি কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি বলেন, “দেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, দেশের বাইরেও খেলা চলছে। চক্রান্ত চলছে। লবিস্ট নিয়োগ করেছে (বিএনপি) কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে।”

বিএনপি “লবিস্ট নিয়োগ করে আজ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে,” বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদেরের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বেনারকে বলেন, “আওয়ামী লীগ নিজেদের অপকর্ম ঢেকে রাখতে পারছে না। এখন বিশ্বের বিবেকবান মানুষরা যখন কথা বলতে শুরু করেছে তখন খেই হারিয়ে উল্টাপাল্টা বকছে।”

মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের চিঠি প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বেনারকে বলেন, “এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে এটি পরিষ্কার হচ্ছে যে, পশ্চিমারা বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।”

এ ধরনের পদক্ষেপ সরকারের জন্য চাপ বাড়াবে বলে মনে করেন এই কূটনীতিক।

আপডেট: চিঠির সত্যতা সম্পর্কে কংগ্রেস সদস্য বারবারা লি’র দপ্তরের তথ্য যোগ করা হলো।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।