সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি: যুক্তরাষ্ট্র
2023.06.27
ঢাকা
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন নেবার বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে কখনো কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন দ্বীপ চায় বলেই র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, গত ১৪ জুন সংসদে বাজেট বক্তৃতায় এমন অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান রাশেদ খান মেনন।
এরপর ২০ জুন সংসদে বাজেট বক্তৃতায় একই প্রসঙ্গে আরেক বামপন্থী নেতা এবং জাসদ একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু প্রশ্ন করেন, আমেরিকা বাংলাদেশে “গণতন্ত্র নাকি সেন্টমার্টিন” চায়?
সংসদে এই বক্তব্যের পর গত ২১ জুন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করেই এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, কাউকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ দিয়ে তাঁর দল ক্ষমতায় থাকতে চায় না।
“যদি বলি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কারো কাছে লিজ দেবো তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিরোধী দল বিএনপি এই দ্বীপটি মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় কি না সেই প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য “বোধগম্য নয়” উল্লেখ করে এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তখন বেনারকে বলেন, “কোনো কিছু মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার ধারণায় বিএনপি বিশ্বাস করে না।”
সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিতে চাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ আসার পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এলো সোমবার।
এদিন প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের বলেন, “এই তথ্য সঠিক নয়। আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপ নেওয়ার ব্যাপারে আমরা কখনোই কোনো ধরনের আলোচনা করিনি।”
“বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বকে আমরা গুরুত্ব দেই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ গণতন্ত্রকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ককে সুসংহত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি,” যোগ করেন তিনি।
সেন্টমার্টিন নিয়ে আলোচনা ‘জানা নেই’
সেন্টমার্টিন দ্বীপের গুরুত্ব থাকলেও দ্বীপটি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ধরনের কোনো আলোচনার কথা জানা নেই বলে মঙ্গলবার বেনারকে জানান সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন।
“আমি ৩৩ বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছি, পররাষ্ট্র সচিব ছিলাম কিন্তু এ ধরনের কোনো আলোচনা আমি দেখিনি।”
প্রধানমন্ত্রী এবং দু’জন বাম নেতা কেন এ প্রসঙ্গটি আনলেন “সে সম্পর্কে তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন,” বলেন তৌহিদ হোসেন।
যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন দ্বীপ চেয়েছে কি না এ ধরনের কোনো বিষয় জানা নেই বলে এর আগে বেনারকে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ফারুক খান।
তবে মঙ্গলবার তিনি বেনারকে বলেন, “শেখ হাসিনার কাছে অবশ্যই কিছু ইন্ডিকেশন আছে যে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ দিয়ে দিলে আওয়ামী লীগের কোনো অসুবিধা হবে না। সে কারণেই তিনি সংবাদ সম্মেলনে কথাটি বলে দিয়েছেন।”
‘জনপ্রিয়তা অর্জনের কৌশল’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিজাম উদ্দিন আহমেদের মতে, “সেন্টমার্টিন দ্বীপ দিলে ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা নেই বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি আমার কাছে তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্য এবং জনপ্রিয়তা অর্জনের কৌশল বলে মনে হয়েছে।”
মঙ্গলবার তিনি বেনারকে বলেন, “মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং গত মাসে ভিসা বন্ধের ঘোষণার কারণে আওয়ামী লীগ মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এবং এই দুই সিদ্ধান্তে ক্ষমতাসীন দল ও জোট ক্ষুব্ধ। আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।”
“বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকা আমাদের বিরোধিতা করেছিল। এই বিষয় নিয়ে বামপন্থী নেতাসহ কিছু মানুষ এখনো আমেরিকাকে বাংলাদেশের বন্ধু মনে করেন না। হয়তো শেখ হাসিনা তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে তাঁর জনসমর্থন বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন,” বলেন নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
আরেক সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমশের মবিন চৌধুরীর মতে, বর্তমান কূটনীতিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক বিষয়টি একটি বড়ো দিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণে হয়তো “বিভিন্ন ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে।”
“তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই সেন্টমার্টিন চায় কি না সে বিষয়ে বলা খুব কঠিন,” মঙ্গলবার বেনারকে বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো এটা আরও বৃদ্ধি পাবে।”