অক্টোবরে বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র

আহম্মদ ফয়েজ
2023.08.01
ঢাকা
অক্টোবরে বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র ঢাকায় নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ১ আগস্ট ২০২৩।
[বেনারনিউজ]

আসন্ন সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল পাঠাবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

মঙ্গলবার ঢাকায় নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান তিনি।

চলতি বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। এই নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে দেশের রাজনীতি সংঘাতময় হয়ে উঠেছে।

সর্বশেষ গত শনিবার সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ঢাকা শহরের প্রবেশ পথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের হামলার মুখে পড়ে। এতে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন।

এই ঘটনার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ‘অতি উৎসাহী’ সদস্যদের দায়ী করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার সিইসি’র সঙ্গে বৈঠক শেষে পিটার হাস বলেন, “আমি তাঁকে (সিইসি) জানিয়েছি যে অক্টোবরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল পাঠাবে। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ, ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ব্যক্তিরা থাকবেন ওই প্রতিনিধিদলে।”

তিনি বলেন, বৈঠকে তিনি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়েও আলাপ করেছেন সিইসির সঙ্গে।

নির্বাচনের আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল পাঠানোর ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা প্রতিষ্ঠান সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বেনারকে বলেন, “এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমেরিকার তৎপরতা আরো প্রকাশ্যে এলো। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দেশটি কতটা সিরিয়াস তাও ধারণা করা যায় এই উদ্যোগ থেকে।”

সংকট নিরসনে সংলাপ প্রয়োজন: সিইসি

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আমরা বলেছি, ওনারাও (রাষ্ট্রদূত) বিশ্বাস করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ প্রয়োজন। সংলাপ ছাড়া এই সংকটগুলো আসলে রাজপথে মীমাংসা করার বিষয় নয়।”

“কমিশন মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলোর এক টেবিলে বসা উচিত, একসঙ্গে চা পান করা উচিত। তারপর আলোচনা করে সংকট নিরসনের চেষ্টা করা উচিত,” বলেন সিইসি।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন। যে সংকট বিরাজ করছে, তা রাজনৈতিক। এর সঙ্গে আমাদের কাজের সংঘাত নেই। কিন্তু এ সমস্যাগুলো যদি রাজনৈতিকভাবে সমাধান হয়ে যায়, তাহলে কমিশনের জন্য নির্বাচন আয়োজন অনেকটাই সহজ হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সংলাপ অবশ্যই একটি ভালো প্রস্তাব। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যে অবস্থানে পৌঁছে গেছে, তাতে সংলাপ খুব বেশি ফল বয়ে আনতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।”

রাজনৈতিক সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সোমবার (৩১ জুলাই) ওয়াশিংটনে নিয়মিত ব্রিফিংকালে বলেন, “আমরা সব পক্ষকে মৌলিক স্বাধীনতা ও আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখা এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে উচিত সহিংসতার ঘটনাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সাথে তদন্ত করে অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনা।

তিনি বলেন, জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে একত্রিত হতে এবং তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতেও আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

গত সপ্তাহান্তের রাজনৈতিক বিক্ষোভ ঘিরে বাংলাদেশে ভয়ভীতি ও রাজনৈতিক সহিংসতার খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।

শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চায় জাতিসংঘ

জাতিসংঘ বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনকে উৎসাহিত করে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক।

সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপ-মুখপাত্র এই অবস্থান জানান।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচনের বিষয়ে, জাতিসংঘ বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনকে উৎসাহিত করে।”

আরও সহিংসতা ও অস্থিরতার আশঙ্কা: অ্যামনেস্টি

শনিবারের রাজধানীর প্রবেশ পথগুলোতে বিরোধী নেতা-কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচির সময় সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

এই সহিংসতার প্রভাব নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও পরবর্তীতে মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

রাজনৈতিক সংকট কমাতে এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

বিবৃতিতে সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অন্তর্বর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিচালক স্মৃতি সিংহ বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগামী মাসগুলোতে আরও সহিংসতা ও অস্থিরতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এতে নাগরিকদের অধিকার লঙ্ঘনের হুমকিও বাড়ছে বলে তিনি বলেন, সে কারণে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাটা জরুরি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।