নির্বাচনী পরিবেশ দেখতে ঢাকায় আসছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল
2023.09.27
ঢাকা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হবে কি না তা মূল্যায়নে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী প্রতিনিধি দল আগামী ৮ থেকে ১২ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইন্সটিটিউট (এনডিআই) তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নির্বাচনী প্রস্তুতির পরিস্থিতির স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করতে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট এবং এনডিআই এই যৌথ প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশন (পিইএএম) বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে।
এর আগে একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন প্রস্তুতি দল বাংলাদেশ ঘুরে গিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর জানায়, ‘বাজেট স্বল্পতা’ ও ‘শর্ত পূরণের’ সম্ভাবনা না থাকায় তারা বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না।
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন প্রতিবেদন সরকার ও বিরোধী উভয়পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ঢাকায় অবস্থানকালে এই প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন নির্বাচনী অংশীজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
সফর শেষে প্রতিনিধি দল তাঁদের অনুসন্ধানের ফলাফল এবং বাস্তবসম্মত সুপারিশও পেশ করবে।
এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আমেরিকান সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সফর শেষে প্রতিনিধি দলটি নির্বাচন আয়োজন বিষয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ এবং সুপারিশ থাকলে জানাবে।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানের এবং বাংলাদেশের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন প্রত্যাশা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঘোষিত অবস্থান বলেও জানান তিনি।
নির্বাচনে কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো তাঁদের কাজ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁরা নির্বাচনের ফলাফল নিয়েও বেশি আগ্রহী নন। নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে তাঁরা আগ্রহী।
প্রতিনিধি দলে ছয়জন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ থাকবেন বলে বিবৃতিতে জানায় এনডিআই। তাঁরা হলেন- দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল এফ ইন্ডারফুর্থ, সাবেক ডেপুটি ইউএসএআইডি প্রশাসক বনি গ্লিক, মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য মারিয়া চিন আবদুল্লাহ, রাষ্ট্রপতির সাবেক সহযোগী কৌঁসুলি জামিল জাফর, এশিয়া-প্যাসিফিকের এনডিআই আঞ্চলিক পরিচালক মনপ্রীত সিং আনন্দ ও আইআরআই এশিয়া-প্যাসিফিক ডিভিশনের জ্যেষ্ঠ পরিচালক জোহানা কাও।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত এই প্রাক-নির্বাচনী প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের ওপর কতটা নির্ভর করবে সে বিষয়ে জানতে বেনারের পক্ষ থেকে এনডিআই ও আইআরআইর সাথে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিরোধীরা রাজপথে, নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুত হচ্ছে ইসি
প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য একযোগে আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে জানুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সর্বশেষ মঙ্গলবার গাজীপুরে একটি অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, জানুয়ারির শুরুতে ভোট গ্রহণের জন্য নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।
নির্বাচনকালীন সরকার এবং সংসদ ভেঙে দেওয়া নিয়ে চলমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে বিএনপি নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করবে এমন ঘোষণার একদিন পরই এই মন্তব্য করেছেন ইসি আনিছুর।
অতীতে ব্যালট পেপার আগেই ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হতো বলে অনেক সমালোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার কেন্দ্রে “ভোটের দিন সকালে” ব্যালট পেপার পৌঁছানো হবে।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পর্কে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, তাঁরা কাউকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করতে পারবেন না।
“আমরা শুরু থেকেই সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমরা সংলাপ করেছি। কেউ কেউ আমাদের সংলাপে আসেননি। ...তাদের জন্য আমাদের দরজা সব সময় খোলা। তবে সংবিধান আমাদের যে ক্ষমতা দিয়েছে তার মধ্যেই আমরা সব কিছু করব,” বলেন আনিছুর রহমান।
বিএনপি অনড়, আওয়ামী লীগে প্রস্তুতি
বিএনপি ছাড়া নির্বাচনের জন্য ইসির প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেনারকে বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।”
“নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ দেশের বেশির ভাগ দল রাজপথে নেমেছে,” জানিয়ে তিনি বলেন, “একতরফা নির্বাচনের জন্য সরকারের অবৈধ নির্বাচন কমিশন কী প্রস্তুতি নিচ্ছে তাতে কিছু যায়-আসে না। দেশের মানুষ এটা মেনে নেবে না এবং আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন হতে দেবে না।”
“আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ তাদের ভোটাধিকার আদায় করবে,” বলেন ফখরুল।
এদিকে আওয়ামী লীগ আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সংবিধান সমুন্নত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা বদ্ধপরিকর বলে বেনারকে জানান দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান।
“একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মানে নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, যেখানে দলগুলোর অংশগ্রহণ বা বর্জন করার অধিকার রয়েছে। আমার দল জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে, তাই ভোটে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি,” বলেন তিনি।
গত দু’টি নির্বাচন দেশে এবং বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি এবং সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “ইইউ বলে দিয়েছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না, যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে এবং পরে যখন দেখল এতে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না, তখন তারা এর প্রয়োগ শুরু করেছে।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র সাম্প্রতিক এসব সিদ্ধান্ত একটা স্পষ্ট বার্তা বলে মনে করেন এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, “এতো এতো উদ্বেগ ও আশঙ্কার পরও যখন সংশ্লিষ্টরা এসব তোয়াক্কা করছেন না, তখন দৃশ্যতই মনে হচ্ছে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটছে দেশ।”
এমন হলে দেশ ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাবে এবং এর মাশুল পুরো জাতিকে দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের পথ এখনো শেষ হয়ে যায়নি।”