চিকিৎসকদের মতে, খালেদা জিয়া মৃত্যু ঝুঁকিতে
2023.10.09
ঢাকা
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দল বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছেন বলে জানিয়েছে তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড।
চিকিৎসকদের মতে, দেশে তাঁর চিকিৎসায় আর কিছু বাকি নেই।
সোমবার ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এই হাসপাতালে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া।
এদিন দলীয় প্রধানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাংলাদেশে সফররত মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকেও উঠে আসে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়টি।
ওই বৈঠকটি মূলত “নির্বাচন কেন্দ্রিক হলেও” খালেদা জিয়ার বিষয়টি “খুব স্বাভাবিক এবং প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠেছে,” বলে বেনারকে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আমরা বলে আসছি যে, সরকার মিথ্যা মামলায় উনাকে সাজা দিয়েছে স্রেফ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এবং এখন তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট প্রয়োজন
বেগম খালেদা এই পর্যন্ত চার বার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন, “তার অবস্থা জটিল।”
বোর্ডের আরেক সদস্য অধ্যাপক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী জানান, বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সুযোগ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, তিনি “মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছেন।”
তাঁকে দ্রুত বিদেশে মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে ফখরুদ্দিন বলেন, “ম্যাডামের পেটে পানি জমছে, ফুসফুসে সংক্রমণ, পেটে অল্প অল্প রক্তক্ষরণ হতে থাকে। উনাকে চার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। বাস্তব অবস্থা অত্যন্ত জটিল ও কঠিন। আমাদের এই মেডিকেল বোর্ড এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত চিকিৎসক সবাই ২৪ ঘণ্টা উনাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।”
চিকিৎসকরা তাদের সব অপশনগুলো প্রায় শেষ করে ফেলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের হাতে কোনো অপশন নেই। যদি আমরা দুই বছর আগে ট্রিপস প্রসিজারটা (চিকিৎসার একটি পদ্ধতি) করতে পারতাম, তাহলে আজকে উনার পেটে ও বুকে পানি জমত না, উনার পেটে কোনো রক্তক্ষরণ হতো না।”
“চিকিৎসক হিসেবে চোখের সামনে একটা প্রতিকারযোগ্য অসুস্থতা, যেটা নিরাময় করা সম্ভব; করা যাচ্ছে না বিধায় একজন রোগী ক্রমশ আস্তে আস্তে খারাপ হয়ে যাচ্ছে...এটা আমাদের জন্য অনেক কঠিন। এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি,” বলেন ফখরুদ্দিন।
তিনি আরও বলেন, “এখনো সময় আছে, যদি টিপস করা হয় এবং বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে নিয়ে উনার টিপস পরবর্তী লিভার প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করা হয় হয়তো উনার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারব।”
টিপস বিষয়ে তিনি বলেন, “টিপস প্রসিজার খুব দ্রুত দরকার এবং এটি বাংলাদেশে হয় না। এটা লাইফ সেভিং। লিভার ট্রান্সপ্লান্টও বাংলাদেশে হয় না।”
গত ৯ আগস্ট থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন খালেদা জিয়া। তাঁকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদন গ্রহণ করেনি সরকার।
তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়ার ১৭ বছরের সাজা স্থগিত রাখা হলেও বিদেশে তাঁর চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বিদেশে যাওয়া যাবে না-এমন শর্তে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। পরবর্তীতে এই স্থগিতাদেশ আরও কয়েকবার ছয় মাস করে বাড়ানো হয়।
অনড় অবস্থানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি
সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পৃথক বৈঠক শেষে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নিজ নিজ দলের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
আগামী সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ মূল্যায়ন করতে শনিবার ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে পৌঁছায়। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে দলটি।
এই সময়ে তারা রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট (এনডিআই) যৌথভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষা মিশন পরিচালনা করছে।
তারই অংশ হিসেবে সোমবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে এই প্রতিনিধি দল।
প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে আলাদা আলাদা সংবাদ সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার কোনো সুযোগ আছে কি না বৈঠকে তা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ বলেছে, সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই।”
“কম্প্রোমাইজ অথবা অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় কি না? আমরা বলেছি, সেই পথ বিএনপি ব্লক করে রেখেছে,” বলেন কাদের।
অপরদিকে, বিএনপি নেতা আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, “এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছিল, তারা বাংলাদেশে সব শ্রেণির লোকজন, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ শুরু করে সবার সঙ্গে কথা বলে গেছেন। তারা ফিরে গিয়ে বলেছেন যে, বাংলাদেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। যুক্তরাষ্ট্রও একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে এসেছে।”
“আমরা বলেছি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনোভাবে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা বিগত দুইটা নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং আরও অবনতি হয়েছে,” বলেন খসরু।
যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের গণমাধ্যমকে বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা আছে। বিএনপি নির্বাচন করবে না, তারা আন্দোলন করবে- সেখানে সহিংসতা হতে পারে। নির্বাচন নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, তাই অনিশ্চয়তা আছে।
হোটেল ওয়েস্টিনের লবিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ কথা বলেন।
প্রথম দিনের বৈঠকের বিষয়ে প্রতিনিধিদল গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এনডিআইর পক্ষ থেকে বেনারকে জানানো হয়েছে, দলটি তাদের সফর শেষ করার পর তাদের পর্যবেক্ষণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে।