শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙালেন জাফর ইকবাল
2022.01.26
ঢাকা
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙার কয়েক ঘণ্টা পর তাঁদের সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় রাজধানীর হেয়ার রোডে সরকারি বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন মন্ত্রী বলেন, “ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারো যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে, তবে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
“যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, যে কারণে কয়েকটি দফার আন্দোলন হঠাৎ করে এক দফায় পরিণত হলো, এই সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখব এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব,” বলেন তিনি।
১৭ জানুয়ারি থেকে শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁর পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন একদল শিক্ষার্থী। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে একই স্থানে অনশন শুরু করেন ২৭ শিক্ষার্থী, যা গত এক সপ্তাহ ধরে চলছিল। এই সময়ে শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান ও অনশন ভাঙার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি।
বুধবার ভোরে জনপ্রিয় লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষক ড. জাফর ইকবালের অনুরোধে অনশন ভাঙতে সম্মত হন শিক্ষার্থীরা। সকাল সোয়া ১০টার দিকে অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে সপ্তাহজুড়ে চলমান অনশনের অবসান ঘটান। এর আগে তাঁরা ঢাকা থেকে সিলেট গিয়ে সরাসরি অনশনস্থলে হাজির হন।
এ সময় জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এখানে আসার আগে সরকারের অনেক উচ্চ পর্যায় থেকে আমার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাঁরা (সরকারের প্রতিনিধি) আমার বাসায় এসেছিলেন। তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের দাবি মেনে নেবেন বলে কথা দিয়েছেন।”
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানতে চাইলে জাফর ইকবাল বলেন, “তাঁরা (সরকারের উচ্চমহলের প্রতিনিধি) যখন বলেছেন, দাবি-দাওয়া মেনে নেবেন, এর মধ্যে কিন্তু এই দাবিটাও পড়েছে।”
আন্দোলন চলবে
বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ার কারণে ১৭ জানুয়ারি থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
অনশন ভাঙলেও আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন নাফিসা আঞ্জুম ইমু বেনারকে বলেছেন, “স্যারের (জাফর ইকবাল) কথায় শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙেছে। কিন্তু আন্দোলনের দাবি থেকে আমরা সরে আসিনি। আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাব। দাবি না মানলে আন্দোলন আরও জোরদার হবে।”
তবে শিক্ষার্থীরা অনশন ভঙ্গের পর দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ একদম শান্ত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসি কুমার দাস।
“টানা অনশনের কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। তারা হাসপাতালে আছে। বাকি ছাত্রছাত্রীরা নিজ নিজ হলে অথবা বাসায় ফিরে গেছে,” বেনারকে বলেন তিনি।
“বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি আপাতত শান্ত হলেও সন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই,” উল্লেখ করে এই শিক্ষক নেতা বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা অনশন ভঙ্গ করায় স্বস্তি পেয়েছি। তবে তাদের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শান্তি পাব না।”
বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্টের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলন শুরু হয়। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এর পর ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। এরপর পুলিশ হামলা করে এবং গুলি চালায় শিক্ষার্থীদের ওপর। আন্দোলনের মুখে প্রভোস্ট পদত্যাগ করলেও শিক্ষার্থীরা বিরত হননি। এক সপ্তাহের আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ঢাকাসহ দেশের বড়ো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
এদিকে শাবিপ্রবির আন্দোলনে অর্থায়নের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় জামিন দিয়েছে সিলেটের একটি আদালত।
“তাঁদের জামিন হয়েছে। মামলা প্রত্যাহার হবে কিনা, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি,” বেনারকে বলেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বিএম আশরাফ উল্লাহ।
বুধবার বিকেলে মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানা চারজনকে আদালতে প্রেরণ করে। অপরজন করোনা আক্রান্ত হয়ে নগরীর শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ আদালতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। সোমবার ঢাকা থেকে তাদের আটক করা হয়েছিল।
ভিসির পরিবর্তন প্রক্রিয়ার বিষয়
শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবির পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবি পূরণে তাঁদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তিনি বলেন, “টানা আন্দোলনে তারা বিপর্যস্ত হয়ে আছে। তারা একটু সুস্থ হয়ে উঠুক। যদি তারা বলেন, কয়েকটা দিন সময় দিয়ে বসতে চান, তবে তাই হবে।”
তবে ভিসি ফরিদের পদত্যাগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “একজন উপাচার্য থাকলেন কি থাকলেন না, সেটি কিন্তু তাদের সমস্যা সমাধানে প্রভাব ফেলছে না। একজন উপাচার্য চলে গেলে তো আরেকজন আসবেন। কিন্তু সমস্যাই যদি থেকে গেল, তাহলে তো তাদের কোনো লাভ হলো না। আমরা সমস্যা সমাধান করব।”
“উপাচার্য নিয়োগ ও অপসারণের একটা পদ্ধতি আছে; চ্যান্সেলর এবং রাষ্ট্রপতিকে দায়িত্ব ন্যস্ত করা আছে। সেটা ভিন্ন বিষয়। আর এ ব্যাপারে আমরা দেখব আমাদের পক্ষে কী করা সম্ভব,” যোগ করেন তিনি।
“এই আন্দোলন তো তাদের অভাব-অভিযোগের বহিঃপ্রকাশ। মূল সমস্যাটা আসলে কোথায়, সেটা আমরা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রশাসন, সবাই মিলে অ্যাড্রেস করব,” যোগ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় হামলা ও গুলি চালানোর অভিযোগে পুলিশ যে মামলা দায়ের করেছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।”