সরকার পতনের সময় থানা লুট: অভিযানে ক্ষুদ্র অস্ত্র মিলছে কম
2024.09.04
ঢাকা
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে থানা থেকে লুট হওয়া বিপুলসংখ্যক প্রাণঘাতী অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে অভিযান শুরু হলেও ক্ষুদ্র অস্ত্র উদ্ধারের গতি বেশ কম, যা জননিরাপত্তার জন্য বড়ো হুমকি বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
এক মাস আগে শেখ হাসিনা সরকার পতনের দিন ঢাকাসহ দেশের কিছু এলাকার থানায় ও পুলিশের কাছে থেকে অস্ত্র লুট হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে, ৫ আগস্ট ও পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন থানা থেকে ১১ ধরনের পাঁচ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র লুট হয়, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাণঘাতী ৭.৬২-৩৯ মিলিমিটার বোরের চায়না রাইফেল, একই বোরের চীনা টি-রাইফেল, ৭.৬২-২২ মিলিমিটার পিস্তল টি-৫৪, এলএমজি এবং এসএমজি।
শুধু অস্ত্রই নয়। লুট হয়েছে ছয় লাখের বেশি বিভিন্ন বোরের গুলি, যার অর্ধেকের বেশি উদ্ধার হয়নি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, লুট হওয়া অস্ত্র এবং গুলির একটি বড়ো অংশ গেছে অপরাধীদের হাতে যেগুলো উদ্ধার করা না গেলে জননিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাঁদের মতে, খোয়া যাওয়া এসব অস্ত্র উদ্ধারে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
অস্ত্র অপরাধীদের হাতে গেলে ‘জননিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটাবে’
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে, ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খোয়া যাওয়া এক হাজার ৫৫৬ পিস্তলের মধ্যে জমা পড়েছে অথবা উদ্ধার করা হয়েছে ৭০৭টি এবং এখনও সাড়ে আটশ’র অধিক পিস্তলের খোঁজ নেই।
এই প্রেক্ষাপটে বুধবার থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে সারাদেশে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পুলিশ, র্যাব, আনসার, কোস্টগার্ডসহ সকল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে।
কারও কাছে অস্ত্র, গুলি, গোলাবারুদ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এনামুল হক সাগর বেনারকে বলেন, লুট হওয়া অস্ত্র, গুলি একটি নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। তবে হারানো অনেক অস্ত্র-গুলি ফেরত পাওয়া গেছে বা উদ্ধার হয়েছে।
তিনি বলেন, এগুলো উদ্ধারে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর অংশগ্রহণে বুধবার থেকে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের মুখপাত্র মো. ফারুক হোসেন বেনারকে বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার থানাগুলোতে ব্যাপক ও নৃশংস আক্রমণ চালানো হয়েছে। হাজার হাজার অস্ত্র লুট হয়েছে।
“লুট হওয়া অবৈধ অস্ত্র পুলিশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। সেকারণে পুলিশ কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করছে। সব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছে না,” যোগ করেন তিনি।
আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করতে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার খুবই জরুরি উল্লেখ করে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ বুধবার বেনারকে বলেন, এসব অস্ত্র যদি “অপরাধী অথবা চরমপন্থীদের হাতে যায় সেটি মারাত্মক বিষয়।”
“আমার মনে হয়, লুট হওয়া অস্ত্রের একটি অংশ অপরাধীদের হাতে যেতে পারে,” বলেন তিনি।
লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ছোট আকারের অনেক যেমন প্রাণঘাতী পিস্তল রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ছোট অস্ত্র লুকিয়ে রাখা যায়। অপরাধীরা এগুলো হাতে পেয়ে থাকলে জননিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটাবে।”
এদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরীর মতে, অস্ত্র উদ্ধারে “যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে-সেটি ভালো খবর।”
তবে তাঁর মতে, “লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলি সহজে উদ্ধার সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। এটি করতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।”