ইফতার পার্টি: সরকারি দল করবে না, বিরোধীরা করবে গণসংযোগ

অয়ন আমান
2024.03.14
ঢাকা
ইফতার পার্টি: সরকারি দল করবে না, বিরোধীরা করবে গণসংযোগ ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাবে মঙ্গলবার ওলামা-মাশায়েখ ও এতিমদের নিয়ে ইফতার করেন বিএনপির নেতারা। ১২ মার্চ ২০২৪।
[বেনারনিউজ]

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সরকার ও সরকারি দল চলতি রমজান মাসে ইফতার পার্টি না করার সিদ্ধান্ত নিলেও বিরোধী দল বিএনপি এবার ধর্মীয় ও সামাজিক এই আয়োজনের মধ্য দিয়েই সারা দেশে গণসংযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশে রমজান মাসজুড়ে ইফতার পার্টি আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ও জনসংযোগ কর্মকাণ্ড চালানো হয়। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইফতার পার্টির আয়োজন করে থাকেন।

বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ইফতার পার্টির জন্য ব্যয়কে অপচয় বলে মনে করছেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই অর্থ দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। গত বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন “ইফতার পার্টিতে যে টাকা ব্যয় হয়, তা যেন অসহায় মানুষের সহায়তায় খরচ করা হয়,” বৈঠকের পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

করোনার প্রভাব ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বেনারকে বলেন, “অনেকের আয় কমেছে। তাই অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশ আমরা পালন করছি।”

ইফতার দিয়ে দিয়ে বিএনপির গণসংযোগ

সরকার ও সরকারি দল ইফতার পার্টি না করলেও সারা দেশে জেলা-উপজেলায় ইফতার পার্টি আয়োজনের মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।

দলীয় রেওয়াজ অনুযায়ী, রোজার প্রথম দিনে এতিম-ওলামা-মাশায়েখদের নিয়ে ইফতার করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

কেন্দ্রীয়ভাবে আরও বেশ কয়েকটি ইফতার পার্টি আয়োজনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, “এবার ইফতারের আয়োজন তুলনামূলক বেশি হবে। সারা দেশে জেলা-উপজেলায় স্থানীয় নেতারা তাদের মতো করে এই আয়োজন করবে। ইফতারের মধ্য দিয়ে বিএনপির গণসংযোগের কাজও হবে।”

২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ইফতার পার্টি আয়োজনে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিল সরকার। পরবর্তীতে সংক্রমণের হার কমে এলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় আবারও ইফতার পার্টির সংখ্যা কমানো হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মানে পুরো রমজান মাসজুড়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হতো।

“একটা ইফতার পার্টি আয়োজন করতে এক থেকে দুই লাখ টাকা খরচ হয়। এটা এক ধরনের অপচয়। এই অপচয় না করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন নেত্রী,” বেনারকে বলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম।

তবে সরকারি দলের এই আহ্বান লোক দেখানো বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

বৃহস্পতিবার তিনি বেনারকে বলেন, “সরকার, সরকারি দলের লোকজন ও সরকার ঘনিষ্ঠরা যত দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন করেছে, সেখানে ইফতার পার্টি না করার যৌক্তিকতা দেখি না। তবে ইফতার পার্টির নামে কিছু লোক বাড়াবাড়ি করে থাকে, যা সমর্থনযোগ্য নয়।” 

jb.jpg
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ইফতার আয়োজনে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণইফতার আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা। ১৩ মার্চ ২০২৪। [বেনারনিউজ]

বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ

ইতোমধ্যে সরকারের নীতি অনুসরণ করেছে দেশের দুটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টির আয়োজন না করার অনুরোধ জানিয়ে গত রোববার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)।

ওইদিন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) প্রশাসন একই নির্দেশনা দেয়। তবে সমালোচনার মুখে শাবিপ্রবি প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে।

এতে বলা হয় রমজানে ইফতার পার্টির জন্য বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিক বরাদ্দ দেয়া হলেও খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এবারের রমজানে “কাউকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট যে কেউ নিজেদের অর্থায়নে ইফতার পার্টির আয়োজন করতে পারবে।”

শাবিপ্রবি এবং নোবিপ্রবিতে ইফতার পার্টির আয়োজন নিষেধ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ‘গণইফতার’ কর্মসূচি পালন করেছেন।

গত বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।