ফিলিপাইন থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত পেল বাংলাদেশ, এখন বাকি ৬৬ মিলিয়ন
2016.11.15
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ১০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে জমা হয়েছে। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে বাকি পাঁচ মিলিয়ন ডলার দুএকদিনের মধ্যেই জমা হওয়ার কথা রয়েছে।
চুরি হওয়া বাকি অর্থও উদ্ধারের আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তা ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়া বেশ জটিল বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাঁদের মতে, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টাকা ফেরত আসার ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকলেও সেটা সময় সাপেক্ষ হবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের প্রায় ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনে সরিয়ে নেওয়া হয়। ওই অর্থের দেড় কোটি (১৫ মিলিয়ন) ডলার দেশটির একটি জুয়ার আসর পর্যন্ত পৌঁছে। পরে সংশ্লিষ্ট ক্যাসিনো মালিক ওই অর্থ দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জমা দেন। একই প্রক্রিয়ায় শ্রীলঙ্কার একটি এনজিওর নামে ২০ লাখ ডলার জমা করার চেষ্টা হলেও ওই অ্যাকাউন্টে অর্থ পাচারের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আটকানো যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির এই ঘটনা ফিলিপাইনের একটি পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। পরে ওই ঘটনায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ফিলিপিইনের ক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেওয়া সেই অর্থের ১০ মিলিয়ন ডলার ফেরত এসেছে বলে বেনারকে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা। তিনি বলেন, “সোমবার ১০ মিলিয়ন ডলার আমাদের অ্যাকউন্টে জমা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশর সময়ের পার্থক্যের কারণে বাকি অর্থের খবর কাল (বুধবার) জানা যাবে।”
ফেরতের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, “ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দল এই অর্থ গ্রহণ করেছে।” বাকি অর্থ ফেরত আনার বিষয়েও ফিলিপাইনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ মাসের মধ্যে একটি প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে আলাপ করতে ফিলিপাইন যাবে বলেও তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা করা হয়। মোট ৩৫টি ভুয়া ম্যাসেজের চারটির মাধ্যমে ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয়। এই টাকার বড় একটি অংশ দেশটির জুয়ার আসরে ঢুকে পড়ে। পরে তা ফেরত দিতে ইচ্ছে প্রকাশ করেন ক্যাসিনো মালিক। সেই টাকাই আদালতের নির্দেশে ফেরত দিয়েছে ফিলিপাইন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ওই ক্যাসিনো মালিক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অর্থ ফেরত দেওয়ায় একটি অংশ ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে বাকি টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে খুব বেশি আশা করা ভুল হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “একজন ক্যাসিনো মালিক স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ফিলিপাইনের কেন্দ্রিয় ব্যাংকে টাকা ফেরত দিয়েছেন। এরপর আইনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি নিজের ইচ্ছায় ফেরত দিয়েছেন বলে বিশেষ কোনো জটিলতা ছাড়াই এ অর্থ ফেরত পেল বাংলাদেশ।” তিনি বলেন, বাকি ৬৬ মিলিয়ন ডলার কোথায়, কার কাছে গেছে সে বিষয়ে এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সেটা না পাওয়া পর্যন্ত আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব না। মির্জ্জা আজিজ বলেন, “আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে গেলে সেই ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব কোথায় আছে, আদৌ তাতে টাকা আছে কি না ইত্যাদি অনেক জটিলতা রয়েছে। তাই এই টাকাটা পাওয়ার বিষয়ে আমি খুব বেশি আশাবাদি নই।” “তবে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আর সেটা করতে পারলেই টাকা ফেরত পেতে আইনের আশ্রয় নেওয়া সম্ভব হবে,” জানান ওই অর্থনীতিবিদ।
তবে অব্যাহত আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ অর্থ ফেরত আনা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন সিপিডির গবেষক গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বেনারকে বলেন, “রিজার্ভের বেশ কিছু টাকা ফেরত পাওয়ার খবর স্বস্তিদায়ক। বাকি অর্থ উদ্ধারে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। সেই প্রক্রিয়া যাতে যথাযথভাবে হয়, সরকারের দিক থেকে সেই যোগাযোগ রাখা জরুরি।” তাঁর মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ফিলিপাইনে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা। এটা নিশ্চিত করতে সরকারের দিক থেকে জরুরি তাগিদ ও চাপ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগলেও হারানো রিজার্ভের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ফিরে আসতে পারে বলে তিনি মনে করেন।