রাশিয়াকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থ চীনা মুদ্রায় শোধ করবে বাংলাদেশ

আহম্মদ ফয়েজ
2023.04.17
ঢাকা
রাশিয়াকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থ চীনা মুদ্রায় শোধ করবে বাংলাদেশ বেইজিং এর একটি প্রদর্শনীতে চীনা মুদ্রা ইউয়ান। ১৪ জানুয়ারি ২০২০।
[এএফপি]

রাশিয়ার সহায়তায় পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা চীনের মুদ্রা ইউয়ানের মাধ্যমে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার অনেকগুলো ব্যাংকের সুইফট কোড ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ ছাড়া রূপপুরের প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটমকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় প্রকল্পটি সময়মতো সম্পন্ন হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত নিলো ঢাকা।

ইউয়ানে অর্থ পরিশোধের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বেনারকে বলেন, “ইউয়ান বৈদেশিক মুদ্রার পাঁচটি অফিসিয়াল মুদ্রার মধ্যে একটি হওয়ায় এই বিষয়ে কোনো নিয়ম-কানুন পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই।”

তিনি জানান, বাকি চারটি মুদ্রা হলো—ইউএস ডলার, ইউরো, পাউন্ড ও ইয়েন।

বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ইউরোপীয় বিষয়ক শাখার প্রধান উত্তম কুমার কর্মকার সোমবার প্রকাশিত ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলেছেন, “বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এক বৈঠকে রাশিয়ার অর্থ পরিশোধে ইউয়ান ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

উত্তম কুমার ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, “সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও লেনদেনটি এখনো সম্পন্ন হয়নি।”

বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় রোসাটমের সহযোগিতায় দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন করছে, যার মূল্য প্রায় ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এটি ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সঙ্গে বেনারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমার মন্ত্রণালয় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়, ইআরডি এই বিষয়টি দেখছে।”

ইআরডি সচিব শরিফা খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

d2276ed8-ad68-49cc-805c-1b4dbaea07ff.JPG
পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২২ অক্টোবর ২০২৩। [বেনারনিউজ]

‘সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী’

রোসাটমের একজন মুখপাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন যে, ইআরডি বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত করেছে।

তিনি বলেন, “ইউয়ানের মাধ্যমে রাশিয়াকে অর্থ পরিশোধের পদ্ধতি বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ। কারণ বৈদেশিক অর্থ পরিশোধের জন্য ইউয়ান একটি অফিসিয়াল মুদ্রা।”

“প্রথম দিকে মস্কো বাংলাদেশ থেকে রুবলের (রাশিয়ান মুদ্রা) মাধ্যমে অর্থ চেয়েছিল। তবে এটি কিছু জটিলতা তৈরি করে, কারণ রুবল বাংলাদেশের বৈদেশিক অর্থ প্রদানের জন্য নিবন্ধিত মুদ্রা নয়,” যোগ করেন তিনি।

সুইফটের বিকল্প হিসেবে ২০১৫ সালে চীন ইউয়ানের মাধ্যমে ক্রস-বর্ডার আন্তঃব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম চালু করে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর আগ্রাসন শুরুর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য অনেক দেশ রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর থেকে রোসাটমকে অর্থ প্রদান স্থগিত রাখে বাংলাদেশ।

প্রাথমিকভাবে ইউক্রেন আক্রমণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র রোসাটমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরও মস্কোর সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিল ঢাকা, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকা একটি জাহাজ বাংলাদেশে নোঙর করতে না দেওয়ার ঘটনায় মস্কো ঢাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন মালামাল নিয়ে আসা একটি জাহাজকে ফেরত পাঠায়। এর কয়েক সপ্তাহ পরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন প্রায় ৭০টি রাশিয়ান জাহাজের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ।

রাশিয়াকে অর্থ প্রদানের নতুন এই পদক্ষেপ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসাইন বেনারকে বলেন, “প্রকল্পের ৯০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ। এখন এটি শেষ করতে ঢাকা ও মস্কো উভয়ের জন্যই এই সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী হয়েছে।”

গত বছরের মার্চ মাসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের গৃহীত দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) স্থাপনের প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমাদের ইচ্ছে আছে, ভবিষ্যতে দক্ষিণাঞ্চলে আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আমরা করব।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।