বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার মতো হামলার সুযোগ নেই: পুলিশ
2019.04.23
ঢাকা
শ্রীলঙ্কায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের গির্জা ও হোটেলে আত্মঘাতী হামলা থেকে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ঝিমিয়ে পড়া জঙ্গিরা অনুপ্রেরণা পেতে পারে বলে মনে করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
তবে জঙ্গি সংগঠনগুলো দুর্বল হয়ে পড়ায় সাংগঠনিকভাবে তারা বড় কোনো হামলা চালাতে পারবে না বলে মনে করেন জঙ্গিবিরোধী নানা অভিযানে নেতৃত্বদানকারী এই পুলিশ কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মনিরুল এসব কথা বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ইস্টার সানডের আয়োজনের মধ্যে রোববার শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জা এবং কয়েকটি হোটেলে একযোগে বোমা হামলা হয়। এতে ৩৫ বিদেশিসহ তিন শতাধিক মানুষ নিহত এবং চার শতাধিক আহত হয়।
ওই হামলার জন্য ‘ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত’ নামে শ্রীলঙ্কার একটি উগ্রপন্থী মুসলিম সংগঠনকে দায়ী করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তবে এর পেছনে আন্তর্জাতিক কোনো গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও তাদের ধারণা।
এদিকে হামলার তিনদিনের মাথায় দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেটস (আইএস)। যদিও এই দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি তারা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশ জঙ্গি দমনে সফলতা দেখালেও আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। আগের চেয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী সিকদার বেনারকে বলেন, “কোনো রকম আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। গত সাড়ে তিন বছরে জঙ্গি দমনে আমরা অনেক সাফল্য দেখিয়েছি। তাই বলে আমাদের আর কোনো চিন্তা নেই- এমন দৃষ্টিভঙ্গি বা চিন্তা ভাবনা বিপদ ডেকে আনবে।”
তবে বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া বা আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই বলেও মনে করেন তিনি।
এ কে মোহাম্মদ আলীর মতে, “আতঙ্কিত না হয়ে যে সমস্ত ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা গত কয়েক বছর ধরে স্বস্তিকর অবস্থানে আছি, সেটাকে ধরে রাখার জন্য নতুন নতুন চিন্তা করতে হবে।”
“কারণ, জঙ্গি সন্ত্রাসীরা সব সময় নতুন কোনো পন্থা অবলম্বন করতে চায়। কোনো ফাঁক ফোকর থাকলে সেখান দিয়ে তারা অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করে থাকে,” বলেন তিনি।
মোহাম্মদ আলী সিকদার বলেন, “আমাদের সতর্ক, সতর্ক এবং সতর্ক থাকতে হবে। যাতে এই ধরনের কোনো বিপদ আমাদের না আসে। আমরা একটা সুনাম অর্জন করেছি বিশ্ব অঙ্গনে। সেটা যেন অক্ষুণ্ন থাকে সে জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এ ছাড়া জনগণের ভেতরেও এই সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে।”
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বেনারকে বলেন, “আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আমাদের সতর্কতা থাকবে না। আমাদের এখানে বড় ধরনের কিছু করার সক্ষমতা হয়তো জঙ্গিদের নেই। তবে ছোটখাটো ঘটনা ঘটতেই পারে।”
তিনি বলেন, “শ্রীলঙ্কাও মনে করেছিল বড় ধরনের ঘটনা ঘটানোর মতো সক্ষমতা জঙ্গিদের নেই। তবে সেখানে তো ঘটল।”
“বাইরের মদদ যাতে দেশে আসতে না পারে সে জন্য আমাদের বিমানবন্দর, নৌবন্দর, সড়ক রেল পথে নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে।”
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘হোলি আর্টিজানে হামলার পর বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের আমদানিকারকদের অনেকে মারা গেছে। অনেককে গ্রেপ্তার ও চিহ্নিত করা হয়েছে। এখনো কিছু সংখ্যক পলাতক আছে। তবে আমাদের আত্মতুষ্টিতে থাকার কারণ নেই।”
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন এক জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে, যাতে ১৭জন বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হয়।
বাংলাদেশে আইএসের খলিফা নেই
গত ১২ মার্চ আইএস মুখপত্র ‘আত তামক্বিন’-এর এক সংখ্যায় বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটির নতুন খলিফা নিয়োগের দাবি করা হয়।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশে আইএসের কোনো খলিফা নেই। এমন হতে পারে যে, প্রবাসী বাংলাদেশি কেউ আইএসে যোগ দিলে তাকে হয়তো খলিফা বানানো হয়েছে। তবে পুলিশের কাছে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।’
আইএসে যোগ দেওয়া বাংলাদেশিদের অধিকাংশ নিহত
সিরিয়া থেকে আইএসের বাংলাদেশি কোনো সদস্যের দেশে প্রবেশের তথ্য আছে কি-না জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, “২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে কিছু লোক সিরিয়াতে গিয়ে আইএসে যোগ দিয়েছিল। ইতিমধ্যে তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং তারা ফিরতে হলে দূতাবাসে গিয়ে ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যাচাই-বাছাই করেই ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হবে।”
অন্য কোনো উপায়েও যাতে তাদের কেউ আসতে না পারে সে জন্য গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর আছে বলেও জানান তিনি।
মনিরুল মনে করেন, “বাংলাদেশ থেকে আইএসে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই মারা পড়েছেন অথবা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থেকে যারা গেছে যেমন ডাক্তার রোকন, সে সম্ভবত বেঁচে আছে। যারা গেছে, তারা ক্যাপচার, ডিটেইনড অথবা ডেথ। ওই সব এলাকায় বাংলাদেশের কারও আত্মগোপন করে থাকা সম্ভব নয়, কারণ সিরিয়া বা আশপাশে আইএসের নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই।”
শ্রীলঙ্কার হামলা প্রসঙ্গে মনিরুল বলেন, দেশটির জঙ্গি সংগঠন ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত হামলা চালালেও এর পেছনে আন্তর্জাতিক কোনো সংগঠন যুক্ত বলে ধারণা করছেন তিনি।
আইসিইউতে শেখ সেলিমের জামাতা
এদিকে শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় গুরুতর আহত হয়ে চৌধুরী নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের জামাতা মশিউল হক। তাঁর পায়ে ও পেটে অস্ত্রোপচার হওয়ার পরে তাঁকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
একই ঘটনায় নিহত শিশু জায়ান চৌধুরীর মরদেহ বুধবার দুপুর একটায় মরদেহ দেশে পৌঁছাবে।
মঙ্গলবার নাতি জায়ানের জানাজার স্থান পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা জানা ন শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
“জায়ানের বাবা মশিউল হকের কিডনি ও লিভারে স্প্লিন্টার রয়েছে। ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না। চিকিৎসাদীন মশিউলকে দুই সপ্তাহের আগে স্থানান্তরও করা যাবে না,” বলেন তিনি।
এসময় বোমা হামলায় নিহত নাতির বিদেহী আত্মার জন্য সকলের কাছে দোয়া চান শেখ সেলিম।
শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছোট ভাই শেখ ফজলুর রহমান মারুফ বেনারকে জানান, বুধবার আসরের নামাজের পর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি মাঠে জায়ানের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে জায়ানকে।”