শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার তিন সপ্তাহে প্রত্যাশার সাগরে প্রাপ্তি সামান্যই
2024.08.26
ঢাকা
ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে তিন সপ্তাহ আগে, আর দায়িত্ব পালনের দুই সপ্তাহ পার করেছেন ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। নানা আলোচিত, ঘটনাবহুল ও অস্থির এই সময়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রত্যাশা ও বিভ্রান্তি।
শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদি শাসনে অতিষ্ঠ নাগরিকদের অনেকেই আশা করেছিলেন যে, রাতারাতি দেশে স্বস্তি ও সুশাসন ফিরে আসবে। তাদের একটি অংশ ইতিমধ্যে হতাশ হতে শুরু করেছেন। কারণ তারা দেখতে পাচ্ছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা, মামলা বা গ্রেপ্তারে সেই আগের মতো আইন লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও সামাজিক অস্থিরতার মতো বিষয়গুলো তেমন বদলায়নি।
যদিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একাধিক উপদেষ্টা বেনারসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ১৫ বছরের অপশাসন ১৫ দিনে ঠিক করা সম্ভব নয়। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো এই সরকারকে আরো কিছুটা সময় দিতে চাইলেও তারা সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চান।
এ প্রসঙ্গে সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বেনারকে বলেন, “মাত্র দুই সপ্তাহ হলো… সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সর্বোচ্চ আন্তরিক। এখনই কোনও মূল্যায়ন নয়। সব কিছুই মানুষ সময়মতো জানতে পারবে।”
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা অস্থিরতার মধ্যে দেশের অন্তত ১২ টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে তার সরকার। সরকার পতনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছেন, বন্যা দুর্গতদের পাশে আছেন তারা।
দাবির শহর ঢাকা
গত দুই সপ্তাহে ঢাকা যেনো দাবির শহরে পরিণত হয়। সরকারের নমনীয়তার সুযোগে প্রায় প্রতিদিনই এক বা একাধিক গ্রুপ নানা দাবি নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের কার্যালয়ের সামনের রাস্তা, জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং বাংলাদেশ সচিবালয় এলাকাসাহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করছে।
গত বুধবার সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারী, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থী এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরসহ কয়েকটি সরকারি সংস্থার কর্মচারীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করছেন প্রধান উপদেষ্টার বাড়ির পথ আটকে দিয়ে।
এ সময় বিক্ষোভের কারণে ইউনুস বাড়ি থেকে বের হতে না পেরে প্রায় ১৫ মিনিট পর গাড়িবহর নিয়ে বাড়ির ভেতরে ফিরে যান।
এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ড. ইউনূস রোববার বলেন, “আমাদের কাজ করতে দেন। এই গুরুত্বপূর্ন দিনগুলোতে ঘেরাও করে আমাদের কাজে বাধা দেবেন না। ”
রোববার রাতেই চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে অবরোধ করা আনসার সদস্যদের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে।
এই ঘটনার পর ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান রোববার এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলেন, জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের (যমুনা) আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তির পর সোমবার পায়েচালিত রিকশাচালকেরা পুলিশ নির্ধারিত এলাকার কিছু দূরে শাহবাগ মোড়ে সমাবেশ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের দাবিতে।
উল্লেখ্য, নানা ভয়ভীতির কারণে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন এতোদিন কথা বলার সুযোগ পায়নি। অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠন তাদের নানা দাবিতে মাঠে নেমেছে। তবে সবচেয়ে বিরক্তিকর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, অস্থায়ী সব কর্মচারী, নো ওয়ার্ক নো পে কর্মচারী এবং থোক বরাদ্দ পাওয়া কর্মচারীসহ সবাই এখন তাদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সোচ্চার হয়ে মাঠে নেমেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ হলে কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে তিনি জানান, তার এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির কয়েকশ অস্থায়ী কর্মী রয়েছে। তারা প্রতিদিন কাজ বাদ দিয়ে কার্যালয়ের সামনে এসে বসে পড়ছে এবং কাজ করতে দিচ্ছে না। অথচ চাকরির শর্ত অনুযায়ী তারা অস্থায়ী কর্মী এবং কাজ করলে মজুরি পাবে। আইনে তাদের স্থায়ী করার সুযোগই নেই।
সচিবালয়ের ভেতরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে গত ২১ আগস্ট এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করার ঘোষণা দেয় সরকার, যা শিক্ষক-অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।
সচিবালয় রাষ্ট্রের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর (কেপিআই) একটি। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সচিবালয় থেকে মূলত দেশ পরিচালিত হয়। সচিবালয়ে ঢুকতে গেলে বিশেষ পাসের (অনুমতিপত্র) প্রয়োজন হয়। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সেখানে ঢুকে পড়া এবং তাদের দাবি মেনে নিয়ে বাকি পরীক্ষা ছাড়াই ফল প্রকাশের সিদ্ধান্তকে সরকারের দুর্বলতা হিসাবে দেখছেন কেউ কেউ। পরীক্ষা একমাস পিছিয়ে দেওয়া, এমনকি অর্ধেক নম্বরে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিলেও পরীক্ষার্থীরা তা মানেনি। পরীক্ষা ছাড়া ফলাফল কীভাবে দেওয়া হবে, তা এখন পর্যন্ত ঠিক করতে পারেনি শিক্ষা বিভাগ।
বড় চ্যালেঞ্জ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা
অন্তবর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন পর্যন্ত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে এই সরকার।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, আগের সরকারের মতোই নতুন মামলাগুলোর ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছে, এগুলো হয়রানিমূলক।
সোমবার পর্যন্ত হাসিনা, তার পরিবার, দলীয় নেতাকর্মী ও তৎকালীন সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। প্রভাবশালী কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীকে ইতোমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের আদালতে হাজির করার সময় লাঞ্ছিত করা হয়েছে। শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনিসহ কয়েকজনকে লক্ষ্য করে পচা ডিম ও জুতা ছুড়ে মারার ভিডিও গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক পুলিশ পাহারায় আদালত চত্বরে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
“বন্দিদের এ ধরনের হয়রানি গ্রহণযোগ্য নয়। এটা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন,” বেনারকে বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় অধিকার গোষ্ঠী আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ইউনুস রোববার তার ভাষণে আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ব্যক্তিকে আক্রমণ না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে আদালতে হামলা করে আগেই একধরনের বিচার করে ফেলার যে প্রবণতা তা থেকে বের হতে হবে। ”
বদলি আর বাধ্যতামূলক অবসরের হিড়িক
নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ প্রায় সব পদে রদবদল হয়েছে। সেনাপ্রধান বাদে সামরিক বাহিনীতে অন্তত একডজন শীর্ষ পদে রদবদল হয়েছে। বেসামরিক প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ সচিব বা সমমর্যাদার বা কাছাকাছি মর্যাদার কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও র্যাব প্রধানসহ সব গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া অর্ধশাধিক জেলার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে বদলি করা হয়েছে।
এর বাইরেও সকল বিভাগের এবং বিভিন্ন জেলায় থাকা পুলিশ প্রধানদের ইতোমধ্যে বদলি করা হয়েছে।
অপরদিকে দীর্ঘদিন থেকে পদোন্নতি পাননি এমন কয়েকশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে জনপ্রশাসনে। অভিযোগ উঠেছে, অনেকেই বঞ্চিত থাকলেও অন্যায় বা অপরাধের কারণে বঞ্চিত থাকা কেউ কেউ এই সুযোগে পার পেয়েছেন।
এদিকে দাবির মুখে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি এমনকি সাংবিধানিক পদ থেকে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের অপসারণের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরেরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন। সরকারের বেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এমন বাজে দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে।
সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে। সেখানে ছাত্ররা বিক্ষোভ করে উপাচার্য, উপ উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে পদত্যাগ করতে বা কর্তৃপক্ষকে অপসারণ করতে বাধ্য করেন। এর ফলে অনেক কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।
“শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করার এসব ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়,” বলেন ফয়সাল।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বেআইনিভাবে কোনো শিক্ষককে হয়রানি বা জোর করে পদত্যাগ করানোর মতো ঘটনায় জড়িত না হবার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও বিতর্ক
শেখ হাসিনার পতনের পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে এবং বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলির উপর হামলার কয়েক ডজন ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেওয়ার কারণে বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। বিবিসি বাংলাসহ বিভিন্ন স্থানীয় গণমাধ্যমের নিজস্ব তদন্তে অনেকগুলো হামলার ঘটনা ভূয়া বলে প্রমাণ মিলেছে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নিশ্চিত করেছে যে এই ধরনের হামলার অন্তত ৫০টি ঘটনা ঘটেছে। তবে গত কয়েকদিনে দেশের কোথাও হামলার খবর পাওয়া যায়নি।
ব্যাংকিং খাতে সংস্কার
নতুন সরকার গঠনের পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের তাদের পদ থেকে অপসারণ করা হলে ব্যাংকিং খাতেও সংস্কারের প্রতিফলন দেখা দিতে শুরু করে।
দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে সরকার। আরও কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, আরো কয়েকটি প্রক্রিয়াধীন।
অন্তবর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ এখন এক ডজনের বেশি ব্যাংক টিকেয়ে রাখা যেগুলো থেকে সরকার সমর্থক ব্যবসায়ীরা বিপুল অঙ্কের অর্থ নামে-বেনামে বের করে দিয়েছেন। এসব গ্রুপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এস আলম গ্রুপ, সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ এবং নজরুল ইসলাম মজুমদারে নেতৃত্বাধীন নাসা গ্রুপ। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এসব ব্যাংক টিকিয়ে রাখতে কোনো আলাদা সুবিধা দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে পুনরুদ্ধার করার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে অতিরিক্ত তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ।
ব্লুমবার্গের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ অতিরিক্ত ঋণের জন্য ওয়াশিংটনভিত্তিক আইএমএফের সাথে আলোচনা শুরু করেছে।
সড়কে ফেরেনি শৃঙ্খলা, নিষ্ক্রিয় পুলিশ
নতুন সরকারের জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল থানা এবং সড়কে পুলিশ ফেরানো। কারণ ওই সময় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ব্যাপকভাবে ভেঙে পড়ে। সরকারের নানা তৎপরতায় পুলিশ ১৩ আগস্টের পর থেকে ধীরে ধীরে থানায় ও রাস্তায় ফিরলেও এখনো পুরোপুরি শৃঙ্খলা এখনো ফিরে আসেনি।
শহরের কোথাও কোন চেকপোস্ট কার্যকর হয়নি এবং হরহামেশাই চলছে অবৈধ যান। ভিআইপি সড়কেও চলছে অযান্ত্রিক যান রিকশা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন মুখপাত্র বেনারকে বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। খুব দ্রুতই সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
নতুন তেজে পুরোনো দুদক
সরকার পরিবর্তনের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক পরিবর্তন এলেও এখনো পরিবর্তন আসেনি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। তবে পুরোনো নেতৃত্বে চলা এই দুদকই দেখাচ্ছে নতুন রূপ।
গত এক সপ্তাহে অর্ধশতাধিক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।
দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বেনারকে বলেন, “নানা কারণে যেসব কাজ করা যায়নি, এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেগুলো করা সহজ হচ্ছে। শতাধিক মন্ত্রী, এমপি, আমলা, পুলিশ ও ব্যবসায়ীর নামে অভিযোগ আসছে, আমরা এগুলো খতিয়ে দেখছি।”
রোডম্যাপ চায় বিরোধীরা
এই সরকার কতদিনে কী কী সংস্কার করতে চায় এবং সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে-গণমাধ্যমে ও বিভিন্ন আলোচনায় সেই প্রশ্ন উঠছে ঘুরেফিরে।
এ প্রসঙ্গে রোববার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রফেসর ইউনুস বলেছেন, “একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেবেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।”
ইউনূসের এমন মন্তব্যের একদিন পর সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবে, কিন্তু এত অল্প সময়ে দেওয়া তাদের পক্ষে সহজ নয়। আমরা এখনও তাদের নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময় দিতে চাই।”
“যে ঘটনা আসলে ঘটেছে সেটা অভূতপূর্ব এবং এর জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। সুতরাং একটু সময় লাগা এবং গুছিয়ে ওঠার কাজটা সত্যিই সময় সাপেক্ষ,” সরকারের দুই সপ্তাহ সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, এটা সত্য যে সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে গেছে এবং সেগুলোর ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন।
“এই সংস্কার কাজের জন্য সরকারের সময় প্রয়োজন, কিন্তু সেটা কত সময় এবং কীভাবে এই সংস্কারের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে সেটা জানা ও একটি রূপরেখা উন্মুক্ত হওয়া প্রয়োজন,” যোগ করে বদিউল আলম মজুমদার।