বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ করতে চায় তুরস্ক

জেসমিন পাপড়ি
2020.12.23
ঢাকা
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ করতে চায় তুরস্ক সফররত তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত সাভাসগলুর সাথে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠক করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন। ২৩ ডিসেম্বর ২০২০।
[সৌজন্যে: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়]

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ করতে চায় তুরস্ক, পাশাপাশি বাংলাদেশে বড়ো প্রকল্পে বিনিয়োগেও আগ্রহী দেশটি। 

বুধবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সফররত তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত সাভাসগলু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তুরস্কের মন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, “আমরাও তুরস্কের সঙ্গে বাণিজ্য ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী।” 

বাংলাদেশ এখন সব দেশের জন্য একটি ‘মডেল’ উল্লেখ করে মেভলুত বলেন, “এশিয়া আর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ।” 

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষাসহ নানা খাতে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি নিকট ভবিষ্যতে আমাদের বাণিজ্য ২০০ কোটি ডলার হবে, যা গত বছর ছিল প্রায় ১০০ কোটি ডলার।” 

“বাংলাদেশ বর্তমানে বিভিন্ন বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। তুরস্কের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম এবং চীনের পরেই তুরস্কের অবস্থান। এ খাতে আমরা একসাথে কাজ করতে আগ্রহী,” বলেন মেভলুত। 

“দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর অর্থ উভয় দেশের আমদানি এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়া,” মন্তব্য করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “তুরস্কের দিক থেকে এ ধরনের ঘোষণা অবশ্যই ইতিবাচক।” 

তুরস্ক ইউরোপের নিকটবর্তী দেশ এবং এবং তাদের মাথাপিছু আয় অনেক বেশি হওয়ায় গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, “এমন একটি দেশে রপ্তানি বৃদ্ধির ঘটনা আমাদের এক্সপোর্ট মার্কেটকে ফ্যাসিলিটেট করবে। কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখবে, এমনকি তুরস্ক থেকে বিনিয়োগ আনতেও ভূমিকা রাখবে।” 

উল্লেখ্য, তুরস্কের সাথে বাংলাদেশের প্রায় ২২ কোটি ডলার বেশি বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। গত ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রীর দপ্তরে ঢাকায় নিযুক্ত তুরষ্কের রাষ্ট্রদূত মুসতফা ওসমান তুরানের সাথে মতবিমিয়ের সময় এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। 

ওই সভার তথ্য অনুযায়ী, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ খুব বেশি না হলেও বাংলাদেশ বেশি রপ্তানি করে তুরষ্কে। 

বাংলাদেশের পাট পণ্যের বড় ক্রেতা তুরস্ক। গত বছর প্রায় ২০ কোটি ডলার মূল্যের পাট পণ্য তুরস্কে রপ্তানি করা হয়েছে। 

ওই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশের আইসিটি, ওষুধ এবং তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগ করলে তুরস্ক লাভবান হবে। 

তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুসতফা ওসমান তুরান জবাবে বলেছিলেন, তুরস্ক বাংলাদেশের সাথে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী। পাট পণ্য ছাড়াও তুরস্কে​ তৈরি পোশাক ও ওষুধ আমদানির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত। 

প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার আগ্রহ

প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বিষয়ে মেভলুত সাভাসগলু বলেন, “তুরস্কের প্রতিরক্ষা পণ্যের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো, দাম অত্যন্ত সুলভ এবং এগুলো কিনতে কোনো শর্ত আরোপ করা হয় না। আমি নিশ্চিত, বাংলাদেশ এই সুবিধাগুলোর সুযোগ নেবে।” 

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এর আগে যখন সমস্যা চলছিল, তখন আমাদের বন্ধুরাও আমাদের প্রতিরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করেনি এবং সে জন্য আমরা বেশির ভাগ পণ্য নিজেরাই উৎপাদন করি। এক্ষেত্রে আমরা প্রচুর বিনিয়োগ করেছি।” 

এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “তুরস্কের সমরাস্ত্র যথেষ্ট উন্নত মানের। সেদিক দিয়ে বিষয়টি ইতিবাচক।” 

“তবে সেসব অস্ত্র বাংলাদেশ নেবে কিনা তা নির্ভর করবে তুরস্ক কোনগুলো অফার করবে, বাংলাদেশ সরকারের ক্যাপাসিটি কেমন, প্রয়োজনীয়তা কতটুকু—এসব বিবেচনার ওপর,” বলেন তিনি। 

তবে স্বাভাবিক আমদানির সাথে অস্ত্র আমদানির বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য রয়েছে বলে বেনারকে জানান গোলাম মোয়াজ্জেম। 

তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে চিন্তা করতে হবে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে। অন্যান্য সামরিক জোটের সাথে বাংলাদেশের যে সহাবস্থান সেটা ঠিক রেখে নতুন উৎস ব্যবহার একটা ভালো বিবেচনার বিষয়।” 

উল্লেখ্য, পূর্ব ভূমধ্যসাগর নিয়ে বিরোধের জের ধরে তুরস্কের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দাবি করে আসছে গ্রিস। এ দাবির বিরোধিতা করে গত মঙ্গলবার জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেন, তুরস্কের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা কৌশলগতভাবে অনুচিত। ন্যাটো সদস্য হিসেবে এটি করা সহজ না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা না পেয়ে তুরস্ক রাশিয়া থেকে ক্ষেপণাস্ত্র সহজে ক্রয় করেছে। 

দূতাবাস ভবন উদ্বোধন

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছান তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন তিনি।

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকার বারিধারায় তুরস্কের নতুন দূতাবাস ভবন উদ্বোধন করেন। সফরে শেষে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা ছাড়েন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

রোহিঙ্গা বিষয়ে তুরস্ক বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলেও সফরকালে জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে তুরস্ক সফরে গিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। দ্বিপাক্ষিক নানা আলোচনার পাশাপাশি তিনি আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।