জাতিসংঘে শেখ হাসিনা: অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ ও স্যাংশন বন্ধ করুন
2022.09.23
ওয়াশিংটন ডিসি
বিশ্ববাসীর কাছে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ ও স্যাংশন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
“যুদ্ধ বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার মতো বৈরীপন্থা কখনো কোনো জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না” উল্লেখ করে শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন “আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়া সংঘাতের অবসান চাই।”
গত আড়ই বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মহামারির ধকল সামলে উঠতে শুরু করেছে, তখনই “রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে নতুন করে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, জ্বালানি এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে,” বলে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ভাষণে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ “গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেওয়া হয়। এর প্রভাব কেবল একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং সকল মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসংকটে পতিত হয়।”
“বিশ্ব বিবেকের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, স্যাংশন বন্ধ করুন। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন,” বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “পারস্পরিক আলাপ-আলোচনাই সংকট ও বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম উপায়।”
বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত, ও জ্বালানি, খাদ্যসহ নানা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের মতো অর্থনীতি “মারাত্মক চাপের মুখে পড়েছে।”
প্রসঙ্গত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি আমদানিকারক বাংলাদেশ মারাত্মক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের শতকরা ৬৫ ভাগের বেশি আসে গ্যাস থেকে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে তেল ও তরলীকৃত গ্যাসের দাম বেড়েছে দশগুণের বেশি। বন্ধ হয়ে গেছে তরলীকৃত জ্বালানি (এলএনজি)।
এর ফলে বাংলাদেশর বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় দেশে চলছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। জ্বালানির দাম বাড়ায় অবধারিতভাবে বেড়েছে বাংলাদেশের পরিবহন খরচ ও প্রায় সকল নিত্যপণ্যের দাম।
ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম হলেও দেশের বার্ষিক ৮০ লাখ মেট্রিকটন গমের চাহিদার প্রায় ৭০ লাখ মেট্রিকটনই আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়, যা মূলত মূলত রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসে।
কিন্তু গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর দেশগুলো থেকে গম আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে গম ও আটার সংকট শুরু হয়।
তবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের মতে, রাশিয়া থেকে গম কেনার ব্যাপারে “কোনো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা নেই,” বলে গত আগস্টে রাশিয়া থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন গম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর ভূমিকার প্রত্যাশা
মিয়ানমারে নির্যাতনে শিকার হয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেবার পাঁচ বছর পার হলেও প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি বলে তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ মেয়াদের উপস্থিতি অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এমনকি এ পরিস্থিতি উগ্রবাদকেও ইন্ধন দিতে পারে।”
রোহিঙ্গা সংকট প্রলম্বিত হতে থাকলে উপমহাদেশসহ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার উপর “মারাত্মক প্রভাব” পড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, “আশা করি, এ বিষয়ে জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।”