সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের গাড়ি বহরে হামলা: সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে

আহম্মদ ফয়েজ
2023.10.04
ঢাকা
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের গাড়ি বহরে হামলা: সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি (বামে) বাংলাদেশ সফরের জন্য ঢাকার বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের (ডানে) সাথে করমর্দন করছেন। তাঁদের দুজনের মাঝখানে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ২৯ আগস্ট ২০১৬।
[এএফপি]

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পর পুলিশের দেওয়া সম্পূরক অভিযোগপত্র গ্রহণ করছে ঢাকার একটি আদালত।

বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী আল ফারাবী অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী বদিউল আলম মজুমদার। তিনি ঢাকাভিত্তিক একটি নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর প্রধান।

অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত নতুন আসামি মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদ পলাতক থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এই মামলার আসামি মুজাহিদ আজমীর তানহা মারা যাওয়ায় তার নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ইশতিয়াক মাহমুদ মামলার বাদী সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের শ্যালক।

অন্য আসামিরা হলেন—মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুল হাসান ওরফে রাসেল, ছাত্রলীগকর্মী ফিরোজ মাহমুদ, মীর আমজাদ হোসেন, সাজু ইসলাম, রাজীবুল ইসলাম, শহিদুল আলম খান, সিয়াম এবং অলি আহমেদ।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।

মার্শা বার্নিকাটের গাড়ি বহর এবং তাঁর বাড়িতে হামলার ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট রাতে বদিউল আলম বাদী হয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি পুলিশ নয় জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়। ২০২২ সালের ১ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারিক আদালত।

গত বছরের ২৮ মার্চ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করার পর দেখা যায়, বদিউল আলম ও আরো দুজন সাক্ষী তাঁদের জবানবন্দিতে জনৈক ইশতিয়াক মাহমুদের নাম উল্লেখ করেছেন।

২৭ ডিসেম্বর আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায় থেকে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরীর আদালত পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে অধিকতর তদন্ত ভার দেন।

অভিযোগপত্র অনুসারে, অন্যান্য আসামিদের পাশাপাশি সন্দেহভাজন মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রাথমিক সত্যতা তদন্তে পাওয়া গেছে।

মামলার বাদী বদিউল আলম মজুমদার এবং আসামি ইশতিয়াক মাহমুদ মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের একই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় বসবাস করেন এবং বাদী ও তার পরিবারের সাথে ইশতিয়াক মাহমুদের দীর্ঘদিন যাবৎ পারিবারিক বিরোধ রয়েছে বলে জানানো হয় অভিযোগপত্রে।

যা ঘটেছিল সেই রাতে

অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট রাতে বদিউল আলম তাঁর বাসায় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটকে বিদায়ী নৈশভোজে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। বার্নিকাট সেখানে উপস্থিত হন।

নৈশভোজে বার্নিকাট ছাড়াও গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

সে সময় নৈশভোজকে কেন্দ্র করে বদিউল আলমের বাসায় সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে—এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে আসামিরা জড়ো হয়ে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের গাড়ি ধাওয়া করেন এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন।

রাষ্ট্রদূতের গাড়ি তাঁকে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে আসামিরা “দলবদ্ধভাবে বাদীর বাসায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন,” এবং “বদিউল আলমকে সপরিবারে হত্যার হুমকি দেন,” বলে উল্লেখ করা হয় অভিযোগপত্রে।

তবে ওই নৈশভোজ “সরকারবিরোধী কোনো সভা ছিল না,” বলে বেনারকে জানান বদিউল আলম।

তিনি বলেন, “আশা করি কোনো রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াই বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং অপরাধীরা বিচারের আওতায় আসবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।