বাংলাদেশের নির্বাচনে বাধা দেয়া কাউকে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র

আহম্মদ ফয়েজ
2023.05.24
ঢাকা
বাংলাদেশের নির্বাচনে বাধা দেয়া কাউকে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র নারায়ণগঞ্জের পানাম নগরের একটি কেন্দ্রে নির্বাচনের পর ভোট গণনা করছেন কর্মকর্তারা। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮।
[এপি]

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যার আওতায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তি এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

২৪ মে বুধবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিনকেনের নতুন  এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেন দপ্তরের মুখপাত্র মেথিউ মিলার।

তিনি বলেন, “গত ৩ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যকে সহায়তা করতে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের অধীনে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে বলেও জানান মিলার।

এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তিকে ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, কর্মচারী, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী , বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।”

তিনি জানান, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে— ভোট কারচুপি , ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হবার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।

“অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমসহ সকলের। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সকলকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি,” ব্লিনকেনকে উদ্ধৃত করে বলেন মিলার।

নীতিটি আগামী দিনের জন্য

যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নীতি ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপির দায়ে অভিযুক্তদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কি না তা জানতে চেয়ে ই-মেইল করা হলে, স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বেনারকে বলেন, এই নীতিটি আগামী দিনের জন্য (ফরোয়ার্ড লুকিং)।”

“এই নীতিটি বর্তমান বা প্রাক্তন কর্মকর্তাসহ সেসব বাংলাদেশি গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি সম্পর্কে শুনেছি। এই বিষয়ে আমাদের সরকারের অবস্থান খুব দ্রুতই পরিষ্কার করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।”

এর আগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ ইউনিট র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর সাতজন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং বলপূর্বক গুমের ঘটনা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে।

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যসহ বাংলাদেশের কর্মকর্তারা মার্কিন প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করে চলছেন।

সর্বশেষ, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত তাঁর জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য সফরের পর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিদেশি নিষেধাজ্ঞাকে ভয় পান না এবং বাংলাদেশ এমন কোন দেশ থেকে কোনো ক্রয় করবে না যেসব দেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর সম্প্রতি একটি মার্কিন কোম্পানিকে চিনি ও তেল আমদানিতে দুটি ক্রয় আদেশ অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ।

এছাড়া সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে সফরকালে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাঁকে ক্ষমতায় চায় না বলেই র‌্যাবকে নিষিদ্ধ করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত ১৪ বছর ধরে অব্যাহত গণতন্ত্রের কারণে দেশে অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে।

“হয়তো বাংলাদেশের জন্য আমি যে উন্নতি করেছি তা তারা মেনে নিতে পারছে না,” বলেন শেখ হাসিনা।

এর আগে ১০ এপ্রিল সংসদে বক্তৃতা প্রদানকালে শেখ হাসিনা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের ক্ষমতা পরিবর্তন করতে পারে।”

আদেশদাতা ও পালনকারী সবার ওপর প্রযোজ্য

বুধবার নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে লাইভে যুক্ত হন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।

চ্যানেল আই এর তৃতীয় মাত্রা অনুষ্ঠানে লু বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে যারা আদেশ দেবে এবং যারা আদেশ বাস্তবায়ন করবে সবাই নতুন এই ভিসা নীতির আওতায় পড়বে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ডিজার্ভ করে।

বাংলাদেশের নতুন করে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি বলেও জানান লু।

“মার্কিন সরকার প্রতিশোধের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং নেবে না," বলেন তিনি।

এই অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই ভিসা নীতির লক্ষ্য বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা।

“এটি বিস্তৃত এলাকা নিয়ে করা ওপেন অ্যান্ডেড পলিসি যেখানে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। কিন্তু যাকে ঘটনার সুষ্ঠু নির্বাচনের বিপক্ষে অন্তরায় মনে করা হবে, তাঁকে এই ভিসা পলিসির আওতায় আনা হবে,” বলেন হুমায়ূন কবির।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।