আপডেট: ৪ মার্চ ২০২৪। ইস্টার্ন সময় বিকেল ৫:২৫
তিন দশকের বেশি সময় ধরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে লড়াই করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক উইমেন অব কারেজ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন বাংলাদেশের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।
সারা বিশ্বে রাজনৈতিক নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন, অর্থনৈতিক সংকট ও লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সাহসী অবদান রাখার জন্য সোমবার হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে বিশ্বের ১২ জন নারীকে এই পুরস্কারে ভূষিত করেন মার্কিন মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
একজন ছাড়া পুরষ্কারপ্রাপ্ত সবাই এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
“ভীতি, ঝুঁকি এবং যারা আপনাদের কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছে, তাদের উপেক্ষা করে আপনারা নিজের এবং অন্যদের জন্য কথা বলেছেন,” পুরস্কারপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে বলেন জিল বাইডেন।
“পরিবর্তন নিজে নিজে সাধিত হয় না,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা নারী সমাজে রয়েছে।
“আপনরা যা করেছেন, তার চেয়েও বেশি অন্যদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করছেন, পরবর্তী প্রজন্মের পেছনে ভিত্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছেন আপনরা, যাতে কন্যাশিশুদের সক্ষমতা আগামীতে সাহসী নারী সমাজের জন্ম দিতে পারে,” বলেন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে ঘোষিত এই বার্ষিক পুরস্কার সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, এ বছরের আন্তর্জাতিক উইমেন অব কারেজ পুরস্কারপ্রাপ্তরা “এক কথায় অসাধারণ।”
“তাঁরা বাংলাদেশের গৃহকর্মীদের জন্য কথা বলছেন এবং আফগানিস্তানের প্রতিবন্ধী মানুষদের নিয়েও কথা বলছেন। তাঁরা উগান্ডার দুর্নীতির ঘটনা উন্মোচন করছেন, জাপানে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বসনিয়া হার্জেগোভিনিয়ায় যুদ্ধকালীন ধর্ষণের শিকার শিশুদের জন্য লড়ছেন এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়ছেন বেলেরুসে,” বলেন ব্লিনকেন।
নারীদের সহায়তা করা শুধু সঠিক বিষয়ই নয় বরং অতি জরুরি বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি, যেসব দেশের নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় নারীরা বেশি জড়িত থাকেন, সেইসব দেশের যুদ্ধে জড়ানোর প্রবণতাও কম।”
তিন দশকের বেশি লড়াই
পুরস্কার গ্রহণের পর এক প্রতিক্রিয়ায় ফাওজিয়া করিম বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশে যেসব বিষয় নিয়ে আমরা সংগ্রাম করছি, তা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে, পাশাপাশি আমাদের সাফল্যগুলো বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে পেরে একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি গর্বিত।”
“বাংলাদেশের একজন নারী হিসেবেও গর্বিত আমি,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের জন্য তিনি তিন দশকের বেশি সময় ধরে লড়াই করছেন।
ফাওজিয়া করিম বর্তমানে ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এফএলএডি) প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন জানিয়ে এতে বলা হয়, গৃহকর্মীদের সুরক্ষা বিষয়ক একটি রায়ে তাঁর নেতৃত্বে মামলা জিতেছিল এফএলএডি।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শ্রমিকদের পক্ষে ফাওজিয়া করিম মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে প্রায় তিন হাজার মামলা লড়েছেন। এছাড়া যৌন হয়রানির মামলা পর্যালোচনা ও সে সম্পর্কে আদালতকে সুপারিশের জন্য ২০২৩ সালে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতেও রয়েছেন তিনি।
ফাওজিয়া করিম সম্পর্কে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সোমবার বেনারকে বলেন, এই সাহসী নারী যে মামলা নেন, তিনি সেটিকে সঠিক পথে এবং সাহসের সাথে লড়ে শেষ করেন।
ফাওজিয়া করিমের সাথে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ পুরস্কারপ্রাপ্ত রিজওয়ানা হাসান বলেন, “উনার মতো নারীরা আছেন বলেই বাংলাদেশে এখন নারী অধিকার একটি অ্যাজেন্ডা হিসেবে বিবেচিত হয়।”
“বাংলাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত সুফিয়া কামালের পর নারী জাগরণে যারা ভূমিকা রাখছেন তিনি তাঁদের মধ্যে ফাওজিয়া করিম অন্যতম নেতৃত্বস্থানীয় একজন,” বলেন তিনি।
সোমবার হোয়াইট হাউজে পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গাম্বিয়ার ফাতু বালদে। দেশ ছাড়ার অনুমতি না থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি কিউবার মার্থা বেট্রিজ রোক কাবেলো।
সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে যেসব নারী উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন তাঁদের সম্মানিত করার জন্য ২০০৭ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রচলন করে যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৯০টি দেশের ১৯০ জনের বেশি নারীকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
চলতি বছর পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন, আফগানিস্তানের বেনাফসা ইয়াকুবি, বেলেরুসের ভলা হারবুনোভা, বসনিয়া বসনিয়া হার্জেগোভিনিয়ার আজনা জুসিক, মিয়ানমারের মিনসু উইন, ইকুয়েডরের ফাতিমা করজো, ইরানের ফারিবা বেলুচ, জাপানের রিনা গনই, মরক্কোর রাভা এল হেইমার এবং উগান্ডার আগাথের আতুহারি।
আপডেট : প্রতিবেদনে ফাওজিয়া করিমের প্রতিক্রিয়া যোগ করা হলো।
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে ঢাকা থেকে সহায়তা করেছেন আহম্মদ ফয়েজ।