শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিচার শুরু

কামরান রেজা চৌধুরী
2023.06.06
ঢাকা
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিচার শুরু ঢাকায় চতুর্থ বার্ষিক সোশ্যাল বিজনেস ডে’র অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২৮ জুন ২০১৩।
[এপি]

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে ঢাকার একটি শ্রম আদালত। এর মধ্য দিয়ে এই মামলায় তাঁর বিচার শুরু হলো।

মঙ্গলবার মামলার কার্যক্রমে অংশ নিতে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে হাজির হন ড. ইউনূস।

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমে কর্মরত ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী করা হয়নি, শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসসহ আরও চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে এই মামলা হয়।

মামলাটি দায়ের করেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) এস এম আরিফুজ্জামান।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন; গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও শাহজাহান।

এই মামলার বৈধতার প্রশ্ন তুলে উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন ড. ইউনূস। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে মামলার কার্যক্রম চলতে পারে বলে রায় দেয়।

উচ্চ আদালতের আদেশের পরে মঙ্গলবার অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত জানান ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা।

অভিযোগগুলো ‘বেআইনি’

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো “সম্পূর্ণ বেআইনি” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন তাঁর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

তিনি বলেন, “প্রথম অভিযোগ গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের স্থায়ী করা হয়নি। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকমের কাজগুলোই স্থায়ী নয়, এগুলো চুক্তিভিত্তিক কাজ। সেই অনুযায়ী, কর্মীদের নিয়োগ করা হয়। কাজ থাকলে পুনরায় চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।”

এসব কর্মী পল্লীফোন কার্যক্রম পরিচালনা এবং নকিয়া বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান করতেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তাঁদের চুক্তির মেয়াদ তিন বছর পর পর নবায়ন করা হতো।”

কর্মীদের পাঁচ শতাংশ লভ‌্যাংশ না দেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “গ্রামীণ টেলিকম নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন। এটি কোম্পানি আইনের ২৮ ধারায় নিবন্ধিত। এখানে ডিভিডেন্ট দেওয়ার কোনো ব‌্যবস্থাই নেই। সেখানে কীভাবে লভ‌্যাংশ শেয়ার করা হবে!”

“যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো বাংলাদেশ শ্রম আইনে দেওয়ানি প্রকৃতির, এগুলো ফৌজদারি অপরাধ নয়। কীভাবে ফৌজদারি মামলা করা হলো সেটি বোধগম‌্য নয়,” বলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন।

তিনি বলেন, “আইন অনুযায়ী, মামলা করতে পারেন কেবলমাত্র প্রধান পরিদর্শক অথবা তাঁর ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। যিনি মামলা দায়ের করেছেন তিনি একজন পরিদর্শক। শ্রম আদালত এ ধরনের মামলা গ্রহণ করতে পারে না। একই আদালত ২০১৯ সালে একজন পরিদর্শকের দায়ের করা একটি মামলা খারিজ করে দিয়েছিলেন।”

“সব কাগজপত্র আদালতে প্রদান করেছি কিন্তু সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হলো না। আমরা বিষয়টি আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব,” বলেন মামুন।

কলকারখানা অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “উনারা আজকে যে কথা বলছেন সেগুলো উচ্চ আদালতেও বলেছেন। এগুলো শোনার পর আদালত রায় দিয়েছেন যে, কলকারখানা অধিদপ্তরের পরিদর্শক মামলা করতে পারে। হাইকোর্ট বলেছেন, এই মামলাটি বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি করতে হবে।”

এই মামলা বিচারিকভাবেই নিষ্পত্তি হবে বলে জানান খুরশীদ আলম খান।

‘রাজনৈতিক মামলা’

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ‌্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছে বিরোধী দল বিএনপি।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস‌্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বেনারকে বলেন, “এই সরকার ক্ষমতায় থাকার পথে যাঁকেই তাঁরা প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছে তাঁদেরকেই মামলা-হামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। তাদের এই কাজ বিশ্বের সবাই দেখছে।”

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থায়ন থেকে বিশ্বব‌্যাংকের সরে যাওয়ার পেছনে ড. ইউনূসের হাত ছিল বলে দীর্ঘ দিন ধরে অভিযোগ তুলে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে ড. ইউনূস বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

গত বছরের ২৫ জুন নিজস্ব টাকায় তৈরি করা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ৬৫ বছর পার হওয়ায় ড. ইউনূসকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় সরকারের সঙ্গে দেশের একমাত্র নোবেলজয়ীর দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।