ঢাকা সিটিসহ স্থানীয় সরকারের দেড় হাজারের বেশি জনপ্রতিনিধি অপসারণ
2024.08.19
ঢাকা
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন করে ঢাকার দুই সিটি মেয়রসহ স্থানীয় সরকারের এক হাজার ৮৬৪ জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পলাতক থাকায় যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
অপসারিত জনপ্রতিনিধিদের জায়গায় স্থানীয় পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সোমবার সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের পৃথক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণসহ ১২ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, উপজেলার ৪৯৪ জন ভাইস-চেয়ারম্যান ও ৪৯৪ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়। এর আগের দিন রোববার ৬০ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের ৪৯৩ জন চেয়ারম্যান ও পৌরসভার ৩২৩ জন মেয়রকে অপসারণ করা হয়।
তবে সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ কাউন্সিলর, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং পৌর এলাকার কাউন্সিলরদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একইভাবে জেলা পরিষদ থেকে শুধু চেয়ারম্যানদের অপসারণ করায় সদস্যরা দায়িত্বে বহাল রয়েছেন।
সরকারি এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় সদ্য অপসারিত কেরানীগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দীন লিটন বেনারকে বলেন, “এটা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে কেউ দেখবে না। নির্বাচন তো একতরফা হয়নি। তুমুল প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে নির্বাচন হয়েছে।”
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা “তারাই বলতে পারবে।”
এদিকে সোমবার রাতে অপর এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যে সমস্ত ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকবেন, সে সব ইউনিয়ন পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যান আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা পালন করতে পারবেন।
প্যানেল চেয়ারম্যানের অনুপস্থিততে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তা প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পালন করতে পারবেন।
‘প্রত্যাশার প্রতিফলন’
সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, যারা রাষ্ট্রের সংস্কার চায়।”
গণ আন্দোলন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সে ব্যবস্থা গ্রাম পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত।”
“স্থানীয় সরকারকে পরিচ্ছন্ন করার একটা প্রচেষ্টা থেকে জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করা হয়েছে। এসব অপসারণ আন্দোলনের প্রত্যাশার প্রতিফলন,” বলেন তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের মতে,
হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে জনপ্রতিনিধিরা পলাতক থাকায় “স্থানীয় সরকার অকার্যকর হয়ে পড়েছে।” সেই সংকট কাটাতেই “জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করা হয়েছে।”
“এখন সাময়িকভাবে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে পরিচালনা করা হবে। তারপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে,” বেনারকে বলেন তিনি।
তবে স্থানীয় সরকার গবেষক ড. তোফায়েল আহমেদের মতে, এখন সরকার কী করে তা “দেখতে হবে।”
প্রশাসকরা দায়িত্ব নেবার পর “নির্বাচন হবে না কী হবে সেটা দেখতে হবে,” বেনারকে বলেন তিনি।
আইন সংশোধন
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। পদত্যাগের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশাসনিক রদবদলের সবচে বৃহত্তম রদবদল ঘটল স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরে অপসারিত করে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে।
গত ১৬ আগস্ট ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
পরদিন ১৭ আগস্ট এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি।
ওই সংশোধনীর ফলে বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে সরকার জনস্বার্থে যে কোনো সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।