ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার নথিপত্র দেখতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ পাঠান: শেখ হাসিনা

কামরান রেজা চৌধুরী
2023.08.29
ঢাকা
ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার নথিপত্র দেখতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ পাঠান: শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে ঢাকায় গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ২৯ আগস্ট ২০২৩।
[সৌজন্যে: তথ্য অধিদফতর]

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘বিচার বিভাগের মাধ্যমে হয়রানি’ না করতে সোমবার একশ’ নোবেল বিজয়ীসহ বিশ্বনেতাদের দেয়া বিবৃতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিবৃতি না দিয়ে তাঁদের উচিত বাংলাদেশে আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞ পাঠানো।

তাঁরা মামলার কাগজপত্র দেখে বিচার করবেন ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কোনো অন্যায় হচ্ছে কি না।

সাম্প্রতিক দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ওপর মঙ্গলবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

বিবৃতি দিয়ে মামলা তোলা যায় না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো মামলা তোলার ক্ষমতা তাঁর নেই। এ ব্যাপারে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে।

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী প্রেরণের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে ড. ইউনূ্সের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বেনারকে বলেন, “এটি খুব ভালো প্রস্তাব। আমরা এটিকে স্বাগত জানাই। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ আসলে খুব সহজেই প্রমাণিত হবে যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে যে মামলা দেয়া হয়েছে সেগুলোর আইনগত ভিত্তি নেই।”

উল্লেখ্য, গত সোমবার বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনসহ বিশ্বের ১৬০ সুপরিচিত ব্যক্তি ও নেতা অধ্যাপক ইউনুসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। সিভিক কারেজ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটি প্রটেক্ট ইউনূস নামে একটি প্রচারণা শুরু করেছে।

ওই বিবৃতিদাতাদের মধ্যে একশ’র বেশি নোবেল বিজয়ী রয়েছেন। ড. ইউনূসকে বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে ‘হয়রানি’ করা হচ্ছে বলে তাঁরা বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

গত রোববার দেশের ৩৪ বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে ড. ইউনূসকে ‘হয়রানি’ বন্ধের আহ্বান জানান।

এর আগে গত ১৭ আগস্ট অধ্যাপক ইউনূসকে তাঁর কাজ চালিয়ে যেতে সাহস জোগাতে চিঠি লেখেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। শ্রম আইন লঙ্ঘন করার একটি মামলার বিচার কাজ শুরুর প্রেক্ষাপটে তিনি এই চিঠি লেখেন।

‘মামলা তো আমরা করিনি’

সংবাদ সম্মেলনটি প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে আয়োজন করা হলেও ড. ইউনূসের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়।

জবাবে ড. ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমার খুব অবাক লাগছে, ভদ্রলোকের যদি এতই আত্মবিশ্বাস থাকত যে, তিনি কোনো অপরাধ করেননি তাহলে ওই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। তাছাড়া, সব কিছু একটা আইন মতো চলে। কেউ যদি এখন ট্যাক্স না দেয়, আর যদি শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে, আর শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি মামলা করা হয়, লেবার কোর্টে যদি মামলা হয় তাহলে আমাদের কি সেই হাত আছে যে মামলা বন্ধ করে দেবো? আপনারাই বিচার করেন!”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশে একটি চলমান মামলা নিয়ে তো আমরা আলোচনাও করি না। কারণ, এটি সাবজুডিস (বিচারাধীন)। যেখানে এটি সাবজুডিস হিসাবে নিজের দেশে গণ্য করা হয় সেখানে বাইরে থেকে বিবৃতি এনে দাবি কি মামলা প্রত্যাহার?”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিনি (ড. ইউনূস) কী করেছেন, যারা বিবৃতি দিয়েছে আমি তাঁদের আহ্বান করি তাঁরা এক্সপার্ট পাঠাক, তাঁদের যদি এতই দরদ থাকে, তারা লইয়ার (আইনজীবী) পাঠাক, এবং যার বিরুদ্ধে মামলা তাঁর সমস্ত দলিল-দস্তাবেজ তাঁরা খতিয়ে দেখুক, তারাই এসে দেখুক সেখানে কোনো অন্যায় আছে কি না। আমি তাঁদেরকে সেই আহ্বান জানাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “তাঁদেরকে এখানে এসে দেখা দরকার যে এখানে কী কী অ্যানোমালিস আছে, কী কী অসামঞ্জস্যতা আছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “এ দেশের কোম্পানি আইনে আছে প্রফিটের (লভ্যাংশের) পাঁচ শতাংশ শ্রমিকের কল্যাণে দিতে হবে। এখন এটা যদি কেউ না দেয়। যদি লেবাররা মামলা করে। মামলা করার ফলে যদি তাদের স্যাক করা হয়। তার জন্য যদি তারা মামলা করে তাহলে সেই দায়িত্ব তো আমাদের না।”

“মামলা তো আমরা করিনি,” বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “ট্যাক্স ফাঁকিতে কেউ যদি ধরা পড়ে তাঁকে তো ট্যাক্স ফেরত দিতে হবে। কিছু ফেরত দিচ্ছেনও।”

তিনি বলেন, “...আমাদের দেশের আইন আছে, আদালত আছে লেবার ল, আছে, লেবার কোর্ট আছে, ল উইল টেক ইটস ওন কোর্স (আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে)।”

আগামী বৃহস্পতিবার ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের একটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ পুনরায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

ব্রিকসের সদস্যপদ না পাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, এই মুহূর্তে ব্রিকসের সদস্যপদ পাওয়ার কোনো চেষ্টা বাংলাদেশ করেনি।

তিনি বলেন, “এখনই সদস্যপদ পেতে হবে, সেই ধরনের কোনো চিন্তা আমাদের মাথায় ছিলও না। সেই ধরনের চেষ্টাও আমরা করিনি। চাইলে পাব না, সেই অবস্থাটা নেই। আমরা কাউকে বলতে যাইনি আমাকে এখনই সদস্য করেন।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।