আবরার হত্যা: ২৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করল বুয়েট

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৬ জন শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ।

আলোচিত এই হত্যার ঘটনায় বুয়েটের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিন এই সিদ্ধান্ত নেয়।

বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, "তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি হাতে পাওয়ার পরে ডিসিপ্লিনারি বোর্ড তিন দিন ধরে বৈঠক করে। তদন্ত প্রতিবেদিনটি পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে বিশ্লেষণ করার পরে বৃহস্পতিবার রাতে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।"

আজীবন বহিস্কৃত ২৬ ছাত্রের মধ্যে ২৫ জন আবরার হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্রের আসামি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এর বাইরে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটুকেও আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।

ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,ওই ২৬ জনের বাইরে আরও ছয় ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে কমিটি।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, চূড়ান্ত বিচারে যদি আবরার হত্যাকাণ্ডে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে বুয়েটকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

বুয়েটের কম্পিউটারসায়েন্সএন্ডইঞ্জিনিয়ারিংবিভাগের সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ কায়কোবাদ বেনারকে বলেন, "২৬ জনই আবরারকে হত্যা করেছে এটা মনে হয় না। যাদের নামে চার্জশিট গঠনকরাহয়েছে, শেষপর্যন্ত যদিদেখাযায়এদেরমধ্যেকেউকেউনিরাপরাধ, তাহলেবুয়েটকেসেটামেনেনিতেহবে।"

"আদালতেরকথানামেনেকোনোউপায়থাকবেনা," বলেনতিনি।

তবেচট্টগ্রামবিশ্বদ্যিালয়েরসাংবাদিকতাবিভাগেরশিক্ষকআলীআররাজীমনেকরেন, "আদালতেরবিচারেরসাথেবিশ্ববিদ্যালয়েরবিচারেরকোনোসম্পর্কনেই।"

তিনিবেনারকেবলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়েরনিজস্বতদন্তেযদিপ্রমাণহয়তারশিক্ষার্থীরাঅপরাধেজড়িততাহলেএরজন্যবিধিমালাআছে।আবরারহত্যাকাণ্ডনিঃসন্দেহেগুরুতরঅপরাধছিল।বিশ্ববিদ্যালয়এক্ষেত্রেবিচারেরনিজস্বক্ষমতারাখে।"

তবেএক্ষেত্রেবিশ্ববিদ্যালয়তারবিধিমোতাবেককাজটিকরেছেকিনাতাআদালতদেখতেপারেবলেজানানআলীরাজী।

আবরারহত্যামামলারচার্জশিটভুক্তআসামিশামীমবিল্লাহ'রদাদাআতিয়াররহমানসরদারবেনারকেবলেন, আমারনাতিসরাসরিহত্যায়জড়িতছিলনা।শুধুবড়ভাইদেরনির্দেশমেনেআবরারকেধরাধরিকরেনিচেনামিয়েআনে।"

"অপরাধেরমাত্রাবিবেচনায়নানিয়েতাকেআজীবনেরজন্যবহিষ্কারকরলবুয়েট।বিচারেসেনির্দোষপ্রমাণিতহলেওএসিদ্ধান্ততারজীবনকেশেষকরেদেবে।বুয়েটপ্রশাসনকেএইসিদ্ধান্তপুনর্বিবেচনারদাবিজানাই," বলেনতিনি।

এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তারা কবে ক্লাসবা পরীক্ষায় ফিরবেসে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় বুয়েট প্রশাসন।

মিজানুর রহমান বলেন, "সর্বশেষ তাদের তিনটি দাবি ছিল। এখন পর্যন্ত আমরা একটি মেনেছি। এখন পর্যন্ত তারা আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। আশা করি হয়তো আগামীকাল তারা কিছু জানাবে। আমরা তাদের জন্য অপেক্ষা করছি।"

উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর নির্যাতনে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যু হয়।

এই হত্যার প্রতিবাদে দেশের প্রথম সারির এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রথমে ক্যাম্পাসে আন্দোলনে নামে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ১০ দফা দাবি মানার আশ্বাস দিলে গত ১৫ অক্টোবর মাঠের আন্দোলন থেকে সরে আসে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তবে মামলার অভিযোগপত্র ও অন্য দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দেন তাঁরা।

এদিকেআবরার হত্যাকাণ্ডের মামলায়পাঁচ সপ্তাহের তদন্তে গত ১৩ নভেম্বর২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পরদিন১৪ নভেম্বর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তিনটি দাবি বাস্তবায়ন হলে তাঁরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন।

তাঁদেরসেই তিন দাবির অন্যতম ছিল অভিযোগপত্রে নাম আসা ছাত্রদের বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে। অন্য দুটো দাবি হলো,আগের র‌্যাগের ঘটনায় অভিযুক্তদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া এবং আন্দোলনের মুখে বুয়েটকর্তৃপক্ষক্যাম্পাসেরাজনৈতিকতৎপরতানিষিদ্ধকরলেওসেনিয়মভাঙারশাস্তির নীতিমালাবিশ্ববিদ্যালয়েরঅর্ডিন্যান্সেযুক্তকরা

শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরার সিদ্ধান্ত হয়নি

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন শুক্রবার বেনারকে বলেন, বৃহস্পতিবার ২৬ জনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করার যে সিদ্ধান্ত বুয়েট কর্তৃপক্ষ নিয়েছে তা আমরা জেনেছি। ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত শিগগিরই জানানো হবে।

"আসলে আমাদের শেষ তিনটি দাবির প্রথমটি মানা হয়েছে। এখনো দুটি বাকি। আমাদের ক্লাস নয়, পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। সবাই মিলে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকে জানানো হবে," বলছিলেন আন্দোলনকারীদের একজন।

তবে বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, "আসলে তাদের যেসব দাবি, তা মানা কিছুটা ময়ের ব্যাপার। আমরা তিন সপ্তাহ সময় চেয়েছিলাম। দু সপ্তাহের মধ্যে প্রথম দাবি মানা হয়েছে।"

"বাকি দুটো দাবির বিষয়েও কাজ করছি। শিক্ষার্থীরাযদি প্রশাসনের কার্যক্রম চলার মধ্যে পরীক্ষায় রাজি হয়তাহলে আমরা একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং ডেকে সেটা করতে পারি। আমরা শিক্ষার্থীদের অপেক্ষায় রয়েছি," বলেন তিনি।