দুই সাংসদসহ ২২ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

জেসমিন পাপড়ি
2019.10.23
ঢাকা
দুই সাংসদসহ ২২ জনের   বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে পুলিশের অভিযান। সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯
নিউজরুম ফটো

দুই সাংসদসহ ২২ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিসহ চাঁদাবাজি–টেন্ডারবাজির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান বা অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হলো।

এ সংক্রান্ত দুদকের চিঠি বুধবার পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর পাঠানো হয়েছে বলে বেনারকে নিশ্চিত করেন দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।

দুদকের এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান দলের প্রধান ও সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন এ চিঠিটি পাঠিয়েছেন বলে জানান তিনি।

দুই সাংসদ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের পাশাপাশি অনুসন্ধান চলমান থাকা ব্যক্তিদের নামও রয়েছে। এদের মধ্যে গণপূর্তের প্রকৌশলী, ব্যাংকের সাবেক এমডি রয়েছেন।

দুদক সূত্র বলছে, তাদের অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যাবে তাদের সবার ক্ষেত্রেই বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। কয়েক দিনের মধ্যেই এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আরও অনেকের নাম আসতে পারে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশন গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই অভিযান ইতিবাচক হলেও রাঘব-বোয়ালদের ধরা না হলে কার্যত এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বেনারকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নিজে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা এবং কাউকে ছাড় না দেওয়ার কথা (এমনকি দলের কেউ হলেও) বলেছেন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই বার্তা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের ভেতর নতুন করে এক ধরনের আস্থার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।”

“অন্তত যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে তাদের এক ধরনের জবাবদিহির ভেতরে আনার প্রয়াস শুরু হয়েছে। এটা কদিন আগেও সম্ভব ছিল না। আসলে রাজনৈতিক বার্তাটা গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন তিনি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “তবে এটা কতখানি গভীর এবং বিস্তৃত হবে সেটা সময় বলবে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের বা এসব দুর্নীতির সাথে জড়িত রাঘব-বোয়ালদের এবং রুই-কাতলাদের ছাড় দেয়া হচ্ছে কিনা দেখার বিষয়।”

টিআইবির নির্বাহী প্রধান বলেন, “যাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে তারা যে এককভাবে এই অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে সেটা নয়। তাদের সাথে প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রভাবশালী মহলের এক ধরনের সিন্ডিকেট প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে।”

“এখন যে প্রতিষ্ঠান এই দায়িত্ব পালন করছে, তাদের অনেকে যে জড়িত নয় তাও বলা যাবে না। বলা যায়, রোগের লক্ষণ নিয়ে ভালোভাবে কাজ চলছে। তবে এই লক্ষণের পেছনের যে গভীরতা সেটা কতখানি চিহ্নিত করা হবে সেটা সময় বলবে,” মনে করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।

নিষেধাজ্ঞা যাদের বিরুদ্ধে

বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার যাদের নাম এসেছে এদের মধ্যে রয়েছেন সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া কথিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমানের (মিজান) নামও রয়েছে এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায়।

এ ছাড়া গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও তাঁর ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রূপণ ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমান, লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার স্ত্রী নাবিলা লোকমান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাই, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের নামেও বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

এই তালিকায় নাম রয়েছে এনামুল হকের সহযোগী ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ (আজাদ রহমান), রাজধানীর কাকরাইলের জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাকির হোসেন ও সেগুনবাগিচার শফিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শফিকুল ইসলামের।

ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত রাজধানী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বমোট ৪৮টি অভিযান পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে র‍্যাব ৩১টি এবং পুলিশ ১৭টি অভিযান পরিচালনা করে। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নয় নেতার বাসা ও প্রতিষ্ঠানে এসব অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে এখন পর্যন্ত যুবলীগের ছয়জন, কৃষক লীগের একজন, আওয়ামী লীগের একজন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এ ছাড়া ক্যাসিনো সম্পৃক্ততায় এখন পর্যন্ত যুবলীগের পাঁচ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসারকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শুদ্ধি অভিযান চলমান থাকবে বলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একাধিকবার জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।