রাখাইনকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করতে বলা অন্যায়: শেখ হাসিনা
2019.07.08
ঢাকা
রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশকে বাংলাদেশের সাথে যুক্ত করার যে প্রস্তাব মার্কিন কংগ্রেসম্যান ব্রাড শেরম্যান দিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ ধরনের প্রস্তাবনা একটি ‘গর্হিত কাজ’।
সদ্য সমাপ্ত চীন সফরের ওপর আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সোমবার প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের এক সদস্য রাখাইনের মানচিত্র বদলে বাংলাদেশের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন, এ নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, “অন্যের জমি নিয়ে আসা বা অন্যের কোনো প্রদেশ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, এটা আমরা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করি, এটা আমরা কখনো নেব না।”
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, মিয়ানমার তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে। সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে জুড়ে দিতে চায় কেন? এ ধরনের কথা বলা অত্যন্ত গর্হিত কাজ, অন্যায় কাজ।
“এটা আমরা কখনোই করব না। তা ছাড়া মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “এভাবে একটা দেশের ভেতরে এ রকম গোলমাল পাকানো কোনোভাবেই ঠিক না। এবং যেখানে তারা হাত দিয়েছে সেখানেই তো আগুন জ্বলছে। কোথাও তো শান্তি আসেনি। বরং জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়েছে, অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের এই অঞ্চলটাতে আমরা একটু শান্তিপূর্ণভাবে থাকার চেষ্টা করছি। এখানেও মানে তাদের আগুন লাগানো প্রচেষ্টা। এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।”
শেখ হাসিনা বলেন, “মিয়ানমার যাতে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়, আমার মনে হয় এই কংগ্রেসম্যানের সে কথা বলা উচিত। সেটাই হবে মানবিক দিক। যেসব মানবতা লঙ্ঘন হয়েছে যা কিছু হয়েছে তার সেটা দেখা উচিত।”
চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বেনারকে বলেন, “মিয়ানমারের অখণ্ডতা নষ্ট হোক সেটা মিয়ানমার, চীন এবং বাংলাদেশ কেউ সমর্থন করে না। আমি মনে করি এটি মার্কিন পলিসিও নয়। একজন কংগ্রেসম্যানের বক্তব্য মাত্র।”
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চায় চীন
শেখ হাসিনা বলেন, চীন এখন মনে করে বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট সমস্যা। তাই চীন সরকার চায় রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত সমাধান হোক এবং চীন সরকারের এই অবস্থান বাংলাদেশের জন্য সুখবর।
চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিংপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং এর সাথে বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কোনো সুখবর পাওয়া গেছে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা বলেছে তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন, দেখবেন। এটা কি সুখবর বলে মনে হচ্ছে না? না দুঃখের মনে হচ্ছে?”
তিনি বলেন, “এটা ঠিক চীন মিয়ানমারের সঙ্গে সব সময় আছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা যে আমাদের দেশে আছে, এটা যে বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট সমস্যা এ কথাটা তারা উপলব্ধি করতে পারছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা মনে করছে বিষয়টি দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত এবং এটা নিয়ে তাদের যা করা দরকার তারা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে বিশ্বাসী।
গত ১ থেকে ৬ জুলাই চীন সফরে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রথমে ডালিয়ান শহরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সভায় যোগ দেন। ৩ জুলাই বেইজিং পৌছেন।
তিনি ৪ জুলাই চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং এবং পরদিন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিংপিংয়ের সাথে বৈঠকে মিলিত হন।
বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয় তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বোঝাবে।
জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক ফোরামের চাপ থেকে মিয়ানমারকে রক্ষা করছে চীন ও রাশিয়া। চীন চায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দ্বি-পাক্ষিকভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করুক।
চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশের সাথে প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করে মিয়ানমার। তবে, এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও রাখাইন রাজ্যে ফেরত পাঠানো যায়নি।
এদিকে মুনশি ফায়েজ আহমেদের মতে, “যেহেতু চীন মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক চাপ থেকে রক্ষা করছে, সেহেতু মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি করাতে পারবে চীন।”