চীনা প্রতিষ্ঠান নির্মিত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন

কামরান রেজা চৌধুরী
2019.09.11
ঢাকা
190911_Power_plant_1000.jpg প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪টি বিদুৎ উৎপাদন কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
[ফোকাস বাংলা]

দেশের জাতীয় গ্রিডে সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রথম সরকারি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে, এটা নির্মাণ করেছে চীনা প্রতিষ্ঠান জেডটিই কর্পোরেশন। বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পাশে নির্মিত এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ২৭ আগস্ট চীনা প্রতিষ্ঠান সিএমসি’র সাথে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নতুন আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষরের দুই সপ্তাহের মধ্যে কাপ্তাই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হলো।

কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের বেনারকে বলেন, “এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ১১১ কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।”

তিনি জানান, কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান বাঁধ সংলগ্ন ২৩ একর খালি জায়গায় সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে। এ প্রকল্প থেকে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৫ টাকা ৪৮ পয়সা ব্যয় ধরা হয়েছে।

জ্বালানী বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমির উচ্চ মূল্যের কারণে প্রকল্পটির ব্যয় বেশি। প্রকল্প ব্যয় বেশি হলে উৎপাদন খরচ বেশি হবে। সার্বিকভাবে প্রকল্পটির টেকসই হবে কি না সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকে যায়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ম. তামিম বেনারকে বলেন, “আমাদের জ্বালানি নীতি অনুযায়ী আমাদের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের শতকরা ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের দেশে সৌর বিদ্যুতের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সমস্যা হলো, সৌর বিদ্যুতের জন্য প্রচুর জমি দরকার। আমাদের দেশে জমির সংকট প্রকট। তাই সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।”

অধ্যাপক তামিম বলেন, “আজ যে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে, এই প্রকল্পের ব্যয় প্রতি মেগাওয়াট আওয়ার প্রায় ১৪ কোটি টাকা, যা অত্যন্ত বেশি। সম্ভবত, ভূমি ক্রয় এবং জাতীয় গ্রিডের সাথে সংযোগের কারণে এই প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।”

তিনি বলেন, “প্রকল্পের খরচ বেশি হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেশি হবে এবং সার্বিকভাবে প্রকল্পটি টিকে থাকবে কি না সে ব্যপারে প্রশ্ন উঠতে পারে।”

অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভারতে ছয় কোটি টাকা ব্যয় হয়।

তিনি বলেন, “পাঁচ টাকা ৪৮ পয়সা দামে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ দেয়া গেলে তা ভালোই হবে। তবে আমি বুঝতে পারছি না কীভাবে এই দামে বিদ্যুৎ দেবে।”

দুই বছর পরিচালনা করবে চীনা প্রতিষ্ঠান

ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের বেনারকে বলেন, “আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কাপ্তাই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন। কাপ্তাই হ্রদের পাড়ে সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেটিই করপোরেশন এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে।”

তিনি বলেন, “দেশের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে এটিই প্রথম, যা আমাদের জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করছে। জেডটিই করপোরেশন আগামী দুই বছর এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিচালনা করবে। এরপর সেটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে।”

আব্দুজ্জাহের বলেন, “প্রকল্পটির মোট খরচ ১১১ কোটি। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রকল্প সাহায্য প্রায় ৯০ কোটি টাকা।

২০১৭ সালের ৯ জুলাই এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ দেয়া হয় চীনা প্রতিষ্ঠান জেডটিই কর্পোরেশনকে।

তিনি বলেন, এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৭ দশমিক ৪ মেগাওয়াট। প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে পাঁচ টাকা ৪৮ পয়সা।

দেশের জ্বালানী নীতি অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে দেশে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে।

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, নবায়নযোগ্য সৌর, বায়ু ও অন্যান্য উৎস থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে গত ২৭ আগস্ট চীনা প্রতিষ্ঠান সিএমসি’র সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

সিএমসির সাথে চুক্তির আগেই ২০১৭ সালের ৯ জুলাই চীনা প্রতিষ্ঠানটিকে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ দেয়া হয়।

এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, মে মাস থেকে তারা পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উদ্বোধনের পর এখন জাতীয় গ্রিডে আনুষ্ঠানিক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হচ্ছে।

দু’বছর পর কোম্পানি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবে।

জেডটিইর প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক সাংবাদিকদের জানান, ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট ২৪ হাজার ১২টি সৌর প্যানেল ও ২৪০টি ইনভার্টার ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৭.৪ মেগাওয়াট, তবে আবহাওয়া অনুযায়ী উৎপাদন কমবেশি হবে। পরীক্ষামূলক উৎপাদনে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৫ মেগাওয়াট পাওয়া গেছে।”

আব্দুজ্জাহের জানান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে কাপ্তাই হ্রদে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও একটি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি সম্ভাব্যতা যাচাই স্টাডি চলছে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বেনারকে জানান, বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাপ্তাই ৭.৪ এমডব্লিউপি সোলার ফটোভোল্টাইকসহ মোট চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এই কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে দেশের জাতীয় গ্রিডে ৪৩৫ দশমিক ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযুক্ত হবে। এই কেন্দ্রগুলো বাস্তবায়ন করছে তিনটি বাংলাদেশি কোম্পানি।

কেন্দ্রগুলো হচ্ছে; বাঘাবাড়ি, সিরাজগঞ্জ ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র (প্যারামাউন্ট বিট্রাক এনার্জি লিমিটেড), জামালপুর ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র (ইউনাইটেড জামালপুর পাওয়ার লিমিটেড), বগুড়া ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র (কনফিডেন্স পাওয়ার বগুড়া-২ লিমিটেড)।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।