এরশাদ জানালেন, জাতীয় পার্টি হবে বিরোধী দল

জেসমিন পাপড়ি
2019.01.04
ঢাকা
199194_JP_Conflict_1000.jpg ঢাকায় মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিসহ এইচ এম এরশাদের নির্বাচনী প্রচারণা। ২১ ডিসেম্বর ২০১৮।
[এএফপি]

হঠাৎ করেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বিরোধী দলে থাকার ঘোষণা দেওয়ায় দলটির বিভক্তি ও কোন্দল প্রকাশ পেয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২টি আসন পাওয়া দলটির একাংশের নেতারা একইসঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকতে চান। বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলের সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে এমন সিদ্ধান্তের কথাই জানানো হয়। ওই বৈঠকে এরশাদ উপস্থিত ছিলেন না।

শুক্রবার দলটির প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এরশাদ জানিয়েছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

এরশাদ জানান, পদাধিকার বলে সংসদে তিনিই বিরোধী দলের নেতা হবেন। উপনেতা হবেন দলের কো–চেয়ারম্যান জি এম কাদের, যাঁকে এরশাদ তাঁর অনুপস্থতিতে দলের উত্তরাধিকার করেছেন।

এরশাদ আরও বলছেন, জাতীয় পার্টির কোনো সংসদ সদস্য মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হবেন না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে অনুরোধও করেছেন পার্টি চেয়ারম্যান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাঁর এই বিবৃতির মাধ্যমে মূলতঃ জাতীয় পার্টির ভেতরকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেয়েছে। তা ছাড়া জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে ‘সঠিক’ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হবে বলেও মনে করেন তাঁরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বেনারকে বলেন, “গত কয়েকদিনে দলটির যে কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে তাতে আন্তঃকলহ, বিশেষ করে স্বামী–স্ত্রীর (এরশাদ ও রওশন এরশাদ) ঝগড়া বের হয়ে আসছে।”

একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে—এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওই অধ্যাপক বলেন, “বিরোধী দল হিসেবে এই দলটিকে আমরা গত পাঁচ বছর দেখেছি। গত সংসদে তারা বিরোধী দল হিসেবে কিছুই করেনি। তাদের ভূমিকা ছিল ‘জিরো’। অথচ জনগণের টাকায় বিরোধী দলের নেতা সেজে সুবিধা নিয়েছে তারা।”

ড. দিলারা বলেন, “এই বিরোধী দলের কোনো অর্থ নেই। এটা স্রেফ একটা আইওয়াশ, কেবলমাত্র দেখানো যে, সংসদ একটা বিরোধী দল আছে।”

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য মুজিবুর রহমান চুন্নু বেনারকে বলেন, “দলের চেয়ারম্যান কারো সাথে আলোচনা না করেই এ ধরনের বিবৃতি দিয়েছেন।

কিছুটা ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, “চেয়ারম্যান হিসেবে যেহেতু তিনি (এরশাদ) দলের মালিক, তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তাঁর বাইরে আমাদের যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা সর্বশেষ বৈঠকে সকলেই সরকারের সাথে থাকার পক্ষে মত দিয়েছি।”

এরশাদের এই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হবে কি না জানতে চাইলে চুন্নু জানান, “এখনো দলে এ নিয়ে কোনো বৈঠক হয়নি। এরশাদও কাউকে ডাকেননি।”

তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে চাননি জাতীয় পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়।

বেনারকে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না। যারা বিরোধী দলে থাকতে চায় এবং যারা সরকারে থাকতে চায় তারাই বিষয়টি নিয়ে ভালো বলতে পারবে।”

বুধবার জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করেছি। তাই বেশির ভাগ এমপিই সরকারের সঙ্গে থাকতে চান। এ ব্যাপারে মহাজোটের নেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাই-ই চূড়ান্ত।”

প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত জানা গেছে কিনা, তা জানতে চাইলে মুজিবুল হক চুন্নু জানান, “আমরা এখনো প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে যাইনি। এর মধ্যেই তো চেয়ারম্যান তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন।”

এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া না-নেওয়া নিয়ে এরশাদ ও তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টিতে দু’টি পক্ষ তৈরি হয়েছিল। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে ছিলেন রওশন।

শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৩৪টি আসন পেয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকার পাশাপাশি সরকারের অংশীদারও হয় জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির একজনকে মন্ত্রী এবং দুজনকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া এরশাদকে পূর্ণ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতা করা হয়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে ২৫৭টি আসনে জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। মহাজোটে তাদের সঙ্গী জাতীয় পার্টি পেয়েছে ২২টি এবং অন্য শরিক দলগুলো নয়টি আসন পেয়েছে। প্রধান বিরোধী দলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাত্র সাতটি আসন পাওয়ায় সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবারও আলোচনায় আসে জাতীয় পার্টি।

ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলের কারণে বহুল আলোচিত এরশাদ নির্বাচনে জয়ী হয়েও বুধবার শপথ নিতে আসেননি। যদিও দলের পক্ষ থেকে তাঁর অসুস্থতার কথা বলা হয়েছে। তাঁর দলের বাকি জয়ী প্রার্থীরা এদিন একাদশ সংসদের এমপি হিসেবে শপথ নেন। এদিন জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকেও অংশ নেননি এরশাদ।

রওশন এরশাদের নেতৃত্বে ওই বৈঠকে বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারে থাকার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বিরোধী দলের নেতা কে হবেন সেই সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার নিতে পারেননি জাতীয় পার্টির নব নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা।

শুক্রবার এইচএম এরশাদ নিজেকে বিরোধী দলের নেতা ঘোষণা করায় দলে নতুন পরস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আগামী সোমবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেবে, মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির কেউ থাকছেন কিনা, এটা রাজনীতিতে আলোচনার বিষয়। তবে সংবিধান অনুযায়ী কোনো সাংসদ নিজ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে ​তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।