বাংলাদেশের গণতন্ত্র পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মার্কিন কংগ্রেস

কামরান রেজা চৌধুরী
2019.02.13
ঢাকা
190213_US_Congress-Election_1000.jpg নারায়ণগঞ্জের পানাম নগরে একটি কেন্দ্রে ভোট গণনা করছেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮।
[এপি]

বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি। তাঁরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ আমলে নিতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও-কে মঙ্গলবার লেখা এক চিঠিতে ছয় কংগ্রেস সদস্য এই আহবান জানান।

তবে এই চিঠি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে বেনারকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।

চিঠিতে কংগ্রেস সদস্যরা গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের জালিয়াতির খবর, ভোটের অনিয়ম ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের কথা উল্লেখ করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতি আহ্বান জানান।

তাঁরা বলেন, “বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নেতিবাচক যাত্রা সম্পর্কে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র দপ্তর কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা জানাতে অনুরোধ জানাচ্ছি।”

চিঠিতে বলা হয়, “আপনি অবগত আছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থকে এগিয়ে নিতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুরক্ষা অন্যতম কৌশল। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ ওই স্বার্থগুলোকে মারাত্মকভাবে হুমকির মধ্যে ফেলবে।”

তাঁরা আরও বলেন, “বাংলাদেশে খুব দৃঢ় এবং গর্ব করার মতো গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য রয়েছে। তবে আমরা দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণায় সহিংসতা ও গণগ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে এবং বাকস্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে।”

কংগ্রেস সদস্যরা বলেন, “আওয়ামী লীগ শতকরা ৯৬ ভাগ আসনে জয় লাভ করেছে, যা ২০১৪ সালে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করার পরও শরিকসহ দলটির পাওয়া আসনের চেয়ে বেশি। ওই নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে এমপিরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।”

তাঁদের অভিমত, “যদিও সরকারের নিয়োগ করা নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে যে নির্বাচন বৈধ হয়েছে। তবে আমরা বিশ্বাস করি ব্যাপক জালিয়াতি এবং জনগণের ভোটাধিকার খর্ব করার অভিযোগ গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করতে হবে।”

চিঠিতে বলা হয়েছে, “প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার সময় ভোটের বাকশোগুলো সন্দেহজনকভাবে ভর্তি ছিল বলে দেখেছেন সাংবাদিকরা।”

“আরও গর্হিত বিষয় হলো, মার্কিন অর্থায়নে পাঠানো পর্যবেক্ষকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ভিসা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ সরকার,” উল্লেখ করেন তারা।

কংগ্রেস সদস্যরা বলেন, “এ বছর আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ডসহ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে কয়েকটি দেশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই বাংলাদেশ দিয়ে শুরু করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সমর্থন প্রদর্শন করুক মার্কিন সরকার।”

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন, মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ও কংগ্রেস সদস্য এলিয়ট এল. এনজেল, কমিটির সদস্য মিশেল টি. ম্যাককল, কমিটির এশিয়া ও প্যাসিফিক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান ব্যাড শেরম্যান, এশিয়া ও প্যাসিফিক উপ-কমিটির সদস্য টেড ইয়োহো এবং কংগ্রেস সদস্য অ্যান্ডি লেভিন এবং অ্যান ওয়াঙ্গার।

‘শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’

ভোট জালিয়াতির অভিযোগটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অভিমত নয় বরং কংগ্রেস সদস্যদের নিজেদের বক্তব্য বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।

তিনি বেনারকে বলেন, “এটা তাঁদের ভাষা; সরকারের কিছু নয়।”

“এ নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই” মন্তব্য করে আব্দুল মোমেন বলেন, “মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন।”

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বেনারকে বলেন, “আমি মনে করি মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা যে কথা বলেছেন সেগুলোর সত্যতা রয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর একটি প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। তাঁরা ঠিক বলেছেন।”

“তাঁদের বিবৃতির মাধ্যমে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসলো। জনগণ জানল। কিছুটা হইচই হবে আর কি! সরকার এগুলোর প্রতি কোনো কর্ণপাত করবে না। তারা বলবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

‘কিছু অনিয়ম তো হয়েছেই’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বেনারকে বলেন, “সত্য কথা হলো, বাংলাদেশের নির্বাচনে কিছু অনিয়ম তো হয়েছেই। সেটা মিডিয়াতে এসেছে। মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের ‍বিবৃতিতে তা উল্লেখ করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “নির্বাচনের পর এই প্রথম কোনো শক্ত বিবৃতি আসলো। তবে আমার মনে হয় না সরকারের ওপর এই বিবৃতির কোনো প্রভাব থাকবে। কারণ, আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা সবাই সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে।”

তাঁর মতে, “কিছু মানুষ এই বিবৃতিতে খুশি হবে। মিডিয়াতে কিছু আলোচনা হবে—এই আর কি!”

তিনি বলেন, “এখন সরকারের উচিত বিরোধীদলের আস্থা সৃষ্টির জন্য কাজ করা। কারণ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এগিয়ে নিতে হলে দেশের প্রধান দুই দলকেই কাজ করতে হবে। বিএনপিসহ বিরোধীদলের যারা এখনো শপথ নেননি তাদেরও সংসদে গিয়ে তাদের কথাগুলো বলা উচিত।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।