শপথ নিলেন বিএনপির আরো চার সাংসদ

পুলক ঘটক
2019.04.29
ঢাকা
190429_BNP_story_1000.jpg জাতীয় সংসদে বিএনপির চার সাংসদকে শপথ পাঠ করান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ২৯ এপ্রিল ২০১৯।
[সৌজন্যে: জাতীয় সংসদ]

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দল থেকে নির্বাচিত চারজন সংসদ সদস্য শপথ নিয়েছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার শপথ নিয়ে স্পিকারের কক্ষ থেকে বের হয়ে বিএনপিদলীয় সাংসদ হারুনুর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই শপথ নিয়েছি। খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ দেশের মানুষের কথা বলতে আমরা সংসদে যাচ্ছি।”

এরপর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন হারুনুর রশীদ। তিনি বিএনপির পাঁচ সাংসদের সংসদে যোগ দেওয়ার বিনিময়ে হলেও খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছেন।

হারুন বলেন, “৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে। তবুও বিএনপির সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। এবার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন। তাহলে অন্তত আমরা মানুষের কাছে, দেশের কাছে বলতে পারব, আমরা সংসদে ঢোকার পর উনাকে প্রধানমন্ত্রী মুক্তি দিয়েছেন।”

“ওনার বয়স হয়ে গেছে, অনুরোধ করব, ওনার যেন জামিন হয়,” সংসদে বলেন হারুন।

এতদিন সিদ্ধান্ত ছিল সংসদে যাবে না বিএনপি। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা সে কথাই বলে আসছিলেন। সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেওয়ায় এর আগে সাংসদ জাহিদুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বেনারকে বলেছেন, “নিজেদের অবস্থান বদল করায় বিএনপির এই সিদ্ধান্ত বিতর্কের জন্ম দেবে। কারণ এর আগে তারা বলেছিলেন যে সংসদে যোগ দিলে তা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল হবে। এর ফলে দলটির নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হবে।”

“তবুও আমি মনে করি তাদের এই সিদ্ধান্ত ভালো। আমি একে স্বাগত জানাই। তারা সংসদে গিয়ে হত্যা, গুম ও গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবে। তারা রাজনৈতিক অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে এবং বিএনপি নেত্রীর মুক্তির দাবিটিও সংসদে তুলে ধরতে পারবে। এতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে,” মত দেন তারেক শামসুর রেহমান।

সংবিধান অনুযায়ী, ২৯ এপ্রিল ছিল বিএনপির পাঁচ সাংসদের শপথ নেওয়ার শেষ দিন। অন্যথায় তাঁদের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি শপথ নেবেন?

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন ছয় সাংসদ, এঁদের মধ্যে কেবল ফখরুল বাকি রইলেন শপথ নেওয়া থেকে।

জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল গত রাতে সাংবাদিকদের বলেন, “শপথ নেব কি না, সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছি কি না, সময় হলেই দেখতে পাবেন।”

সন্ধ্যায় গুলশানের কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "জাতীয় রাজনীতির এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা, মুক্তি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামের অংশ হিসেবে আমাদের দল সংসদে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। কোনো সমঝোতা বা চাপে নয়, কৌশলগত কারণেই শপথের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অনেক গুঞ্জন ও নাটকীয়তার পর সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর বিএনপির চার সদস্যকে শপথ পড়ান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

শপথ নেওয়া সাংসদেরা হলেন; চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ থেকে নির্বাচিত হারুনুর রশীদ, বগুড়া-৪ থেকে মোশারফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ থেকে আমিনুল ইসলাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ থেকে নির্বাচিত আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। শপথ নিয়ে সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যান চার সাংসদ।

শিক্ষাবিদ ও লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এ বিষয়ে বেনারকে বলেছেন, “আমরা শুনেছি বিএনপি থেকে নির্বাচিতরা শুধুমাত্র তারেক রহমানের কথায় সংসদে শপথ নিচ্ছেন। এটা ভাবতে আশ্চর্য লাগে যে একজন মাত্র ব্যক্তির সিদ্ধান্তে দলটি তার এত দিন থেকে জোরের সঙ্গে বলে আসা একটি সিদ্ধান্ত বদলে ফেলল। এতে বোঝা যায় যে দলটির মধ্যে গণতন্ত্র চর্চায় ঘাটতি রয়েছে।”

তবে বিএনপির সংসদের যাওয়ার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবেই দেখতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক।

“তাঁরা সংসদে গিয়ে মানুষের পক্ষে কথা বলবেন, এটা প্রত্যাশা করি। যদি তাঁরা সংসদে গিয়ে দলের এক ব্যক্তির চাপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন, তাহলে সামগ্রিকভাবে দলটি সুফল লাভ করতে পারবে,” বলেন তিনি।

সৈয়দ মনজুর বলেন, “আমি আশা করি সংসদে তাঁরা সংখ্যায় কম থাকায় স্পিকার তাঁদের সবাইকে কথা বলার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেবেন।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।