ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.08.28
ঢাকা
ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতীয় সংসদের সামনে একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী ঝাড়ু দিচ্ছেন। ২০০৭ সালের এপ্রিলে তোলা ছবি।
পাভেল রহমান, এপি

এ বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে বলে মত দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ।

মঙ্গলবার সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, “গত ৫ জানুয়ারি (২০১৪) ভোট হয়েছিল। এখন তো ১ জানুয়ারি বই বিতরণ, অ্যাকাডেমিক বর্ষ শুরু হয়। সাধারণত ডিসেম্বরের শেষে বন্ধ থাকে; স্কুল-কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হয়। তা বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেবে ইসি।”

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার কথা জানান।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক সভা করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা ও অন্যান্য কমিশনারদের সাথে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কমিশন সচিবের আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তাঁরা। উল্লেখ্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এখন শ্রীলঙ্কা সফরে রয়েছেন।

বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ ২৯ জানুয়ারি থেকে পাঁচ বছর। আর এই পাঁচ বছর পূর্তির ৯০ দিন আগে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।

সেই হিসাবে ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এ্ই ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের কোন অধিবেশন বসবে না বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। তবে, সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে কি না সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানান নি।

অবশ্য দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে নবম সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়নি।

এদিকে মঙ্গলবার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আগামী নির্বাচনে সকল দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির জন্য একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে।”

তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বিএনপি শিগগিরই আন্দোলন শুরু করবে।”

তবে ঠিক কবে থেকে বিএনপি আন্দোলন শুরু করবে সে ব্যাপারে মির্জা ফখরুল কিছু বলেননি।

এদিকে বিএনপি’র আন্দোলনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, “কেউ যদি আইন নিজের হাতে তুলে নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে দাবিতে রাস্তায় আন্দোলন শুরু করে বিএনপি-জামাত জোট। সেই আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। তবে সরকার কঠোরভাবে সেই আন্দোলন দমন করে।

২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের শুরুতে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আবার রাস্তায় আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। সেই আন্দোলনও সহিংস হয়ে উঠে। তাদের সেই আন্দোলনও ব্যর্থ হয়।

 

ইভিএম বিতর্ক

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বিরোধিতা সত্ত্বেও এই নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য দেড় লাখ ইলেকট্রনিকস ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

তবে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই ইভিএম ব্যবহার রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে পারে বলে মনে করছে বিরোধী দল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “যেহেতু ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে বড় একটি দলের আপত্তি রয়েছে সেহেতু নির্বাচন কমিশনের উচিত আগামী জাতীয় ইভিএম ব্যবহার না করা।”

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না যাতে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।”

বিএনপি ইভিএম ব্যবহারকে আগামী নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার উপায় বলে মনে করে। তাই তারা ইভিএম ব্যবহারের ঘোরতর বিরোধী।

গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন ইভিএম ব্যবহার ব্যাপারে সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে। বিএনপি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ঘোরতর বিরোধিতা করে জানান, ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নির্বাচনে ‘জালিয়াতি’ করতে চায়।

অপরপক্ষে নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপে আওয়ামী লীগ ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানায়।

দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসে নির্বাচন কমিশন।

দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ইভিএম ব্যবহারে তারা কোনো সমস্যা খুঁজে পাননি।

তাঁদের মতে, ইভিএম ব্যবহার করা হলে, নির্বাচনের ফলাফল দ্রুত পাওয়া যাবে।

ইতিমধ্যে তিন হাজার আট’শ ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় লাখ ইভিএম ক্রয়ের একটি প্রকল্প নিয়েছে ইসি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বেনারকে বলেন, “আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার কোনোক্রমেই সমর্থন করি না। ইভিএম নির্বাচন প্রভাবিত করার সুযোগ আছে।”

কোনো দলের আপত্তি থাকলে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে নির্বাচন কমিশনের  সরে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও দলের নির্বাচনী আইন কর্মকর্তা রিয়াজুল কবির কাওছার বেনারকে বলেন, “আমরা চাই সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হোক। ডিজিটাল পদ্ধতি অনেক বেশি স্বচ্ছ।”

তিনি বলেন, “ডিজিটাল পদ্ধতিতে জালিয়াতির কোন উপায় নেই। বিরোধী দলের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তারা না জেনেই কথা বলছে।”

মঙ্গলবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে আগে কেন্দ্রীয়ভাবে ইভিএম মেলার আয়োজন নিয়ে কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ।

বৈঠকের পর সচিব আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন কমিশন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।”

তিনি বলেন, “জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করতে হবে।”

আগামী ৩০ আগস্ট গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের জন্য কমিশনের সভা হতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।