শেখ হাসিনা: শোকাতুরা কন্যা থেকে শক্তিধর নেতা

বেনারনিউজ স্টাফ
2018.11.29
ওয়াশিংটন ডিসি
181128-BD-hasina-profile-620.jpg লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯ এপ্রিল ২০১৮।
[এপি]

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে খুন হওয়ার রাতে তাঁর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা ছিলেন কয়েক হাজার মাইল দূরের দেশ জার্মানিতে। স্বজনদের মৃত মুখ দেখতে পারেননি তিনি। নির্বাসনে কেটেছে প্রায় অর্ধযুগ। শোকাতুরা সেই শেখ হাসিনা এখন চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনাও আছে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে অগ্রগতির অনেক উদাহরণ রয়েছে।

তবে একইসাথে কর্তৃত্ববাদী শাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ, কট্টর ইসলামি মৌলবাদী গোষ্ঠীদের প্রশ্রয় দেওয়া এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ রয়েছে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে।

কারও কাছে শেখ হাসিনা গণতন্ত্র ও মানবতার প্রতীক। যিনি মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উদারভাবে আশ্রয় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী পরিচয়ের বাইরে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, মমতাময়ী মা, বোন কিংবা দাদি বা নানি।

ঠিক এই বিষয়টিকে ফুটিয়ে তুলে গত ১৭ নভেম্বর থেকে দেশের বড় প্রেক্ষাগৃহগুলোয় প্রদর্শিত হচ্ছে ‘হাসিনা: এ ডটার্স টেল’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র।

যদিও নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার এমন চিত্রায়ন নিয়ে আপত্তি আছে বিরোধী শিবিরে। এ বিষয়ক আলোচনায় সামনে আসছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গাদের বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থান অবশ্যই মানবিক। তবে তা দিয়ে আভ্যন্তরীণ মানবাধিকার লংঘনকে ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

তিনি বলেন, “বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তিনি (শেখ হাসিনা) জিরো-টলারেন্সের কথা বলেছিলেন, তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে এটা ছিল। কিন্তু গত ১০ বছর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড তো কমেইনি, বরং এর সাথে যুক্ত হয়েছে গুম। এর পাশাপাশি মাদক বিরোধী যুদ্ধের নামে গত কয়েকমাস ধরে প্রায় প্রতিদিন বিচারবহির্ভূত হত্যা হচ্ছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান মনে করেন, শেখ হাসিনা জন্মগতভাবে একজন নেতা।

তিনি বলেন, “সত্যিকারের কঠিন সময় পার করে এসেছেন তিনি, কিন্তু নিজের ব্যক্তিত্ব আর নেতৃত্বগুণ দিয়ে তিনি সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে এসেছেন।”

এই চলমান তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া ৭১ বছর বয়সী এই নারী আবারও নির্বাচনে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর ভাষায় “এবারকার নির্বাচন কঠিন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।”

গত ১৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে গণভবনে মত বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদকে জনগণের সেবা করার সুযোগ হিসেবেই বিবেচনা করেন।

“রাষ্ট্র পরিচালনা এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ আমার কাছে যতটা না মূল্যবান তার চাইতে এটা একটা বড় সুযোগ জনকল্যাণের এবং জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের,” বলেন শেখ হাসিনা।

২১ নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্রবাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “অনেক ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আমরা আজকের অবস্থানে এসেছি এবং কেউই এই গতিকে রুখতে পারবে না, ইনশাল্লাহ।”

হাসিনা: এ ডটার্স টেল

সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত তথ্যচিত্র ‘হাসিনা: এ ডটার্স টেল’ এ ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়। আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর অর্থায়ন করেছে। সিআরআই ও অ্যাপেল বক্স প্রযোজিত এই সিনেমাটি ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে ইতিহাসের নানা ঘটনাপঞ্জির মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে।

পুরো ছবি জুড়ে ‘আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল’ গানের কলিটি অদ্ভুত এক বিষণ্নতার ছায়া ফেলে মানুষের মনে। বঙ্গবন্ধুর খুব প্রিয় ছিল এই গান, ঘুরেফিরে শুনতেন। যে মানুষটির হাত ধরে স্বাধীন হলো বাংলাদেশ, আশা আর স্বপ্ন পূরণের আগে তাঁকে তাঁরই দেশের মানুষেরা হত্যা করে।

ছবিটির পরিচালক রেজাউর রহমান পিপলু বলছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, শেখ হাসিনাকে অন্যভাবে ফুটিয়ে তোলা ছিল ছবিটির উদ্দেশ্য।

“সত্তর মিনিটের সিনেমা দেখে বেরোবার পর দর্শকের কাছে জানতে চেয়েছি কেমন লাগল? তাঁরা বলেছেন, এমন একজনকে দেখতে পেয়েছেন যাঁর বসবাস তাঁদের হৃদয়ের খুব কাছাকাছি,” বেনারকে বলেন পিপলু।

ছবিটি সম্পর্কে প্রায় একই কথা বলেন বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক সেজুল হোসেন।

তিনি বলেন, “আমি রাষ্ট্রীয় পদপদবীর উর্ধ্বে একজন মাকে দেখেছি, যেখানে তিনি আর দশজন সাধারণ মানুষের মতোই, যিনি তাঁর নাতি-নাতনিদের সঙ্গে খেলতে ভালবাসেন, রাঁধতে ভালবাসেন, তাঁদের গল্প বলেন।”

গল্পের ফাঁকে ফাঁকে শেখ হাসিনার চোখ দিয়ে দর্শক ১৯৪৭ এর দেশভাগ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তি সংগ্রাম ও পঁচাত্তরের সেই নিষ্ঠুর রাতকে দেখতে পান।

কিন্তু নির্বাচনের ছয় সপ্তাহ আগে সিনেমার এই মানবিক বয়ান ভোট টানার কৌশল বলে মনে করছে বিরোধীদল।

“তিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনাকে, ক্ষমতার পালাবদল ও দেশের বিভিন্ন বিষয়কে তিনি তাঁর নিজের মতো করে এককেন্দ্রিকভাবে দেখেছেন। এই মুহূর্তে এ ধরনের ছবির প্রচার ও প্রদর্শন নির্বাচনী আচরণ বিধির পুরোপুরি লঙ্ঘন,” গত ১৮ নভেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।

তবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান মনে করেন, এই তথ্যচিত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো কোনও বিষয় নেই। বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ১৭ নভেম্বর তিনি বলেন, মানুষ টিকিট কেটে তথ্যচিত্র দেখবে। এখানে আচরণবিধির বিষয় আসবে কেন?

ব্যক্তি শেখ হাসিনা

সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে উ​ল্লিখিত তথ্য অনুযায়ী, রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি অল্প বয়সে। কলেজের ছাত্রসংসদে সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন।

শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সদস্য ও রোকেয়া হলের সভানেত্রী ছিলেন তিনি।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে খুন হওয়ার পর ছয় বছর দেশে ফিরতে পারেননি শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আশ্রয় দিয়েছিলেন তাঁকে।

১৯৮০ সালে লন্ডন থেকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন শেখ হাসিনা। পরের বছর তাঁর অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ তাঁকে দলীয় প্রধান নির্বাচিত করে। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন তিনি।

১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাতবার তাঁকে গৃহবন্দী করে স্বৈরাচার এরশাদ সরকার। ২০০৭ সালে আবারও সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কারারুদ্ধ করে শেখ হাসিনাকে।

দেশে ফেরার পর ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার ওপর ১৯টি সশস্ত্র হামলা হয়। সবশেষ ২০০৪ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে তাঁর সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। এতে নিহত ও আহত হন বহু নেতাকর্মী। কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা।

এদিকে হামলা–মামলা উপেক্ষা করেই শেখ হাসিনা রাজনীতি করে গেছেন। ১৯৯৮, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, যদিও ২০১৪ সালের নির্বাচনে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে। ওই দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় জেলে থাকলেও বিরোধী পক্ষের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে এটা হাসিনা সরকারের কৌশল।

শেখ হাসিনার স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া (১৯৫২- ২০০৯) ছিলেন বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী। তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় (৪৭) বাংলাদেশ সরকারের তথ্য উপদেষ্টা ও তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (৪৬) একজন অটিজম বিশেষজ্ঞ।

৭১ বছর পার করা শেখ হাসিনা চলতি বছর এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তিত্বের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।

এর আগে তিনি ফোর্বস, সিএনএন, ফরচুনসহ একাধিক জরিপে জরিপে বিশ্ব, এশিয়া এবং মুসলিম জাহানের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় ছিলেন।

“তিনি আমাদের কথা শোনেন। তিনি রাস্তা-ঘাটের উন্নতি করেছেন, গরিব-দুঃখীদের ভাতা দেন,” শেখ হাসিনা সম্পর্কে বেনারকে বলেন ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি চালান আজিজুল হক।

তবে বেকার যুবক আল আমিন শেখ হাসিনা সরকারের কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, “নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি তরুণদের নিয়ে ভালো ভালো কথা বলেছিলেন, কিন্তু ক্ষমতায় এসে সব ভুলে গেছেন।”

শাসক শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনার শাসনামলে চলতি বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রথম ধাপ অর্জন করার স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।

তবে গত বছর কট্টর মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এর সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতায় তিনি সমালোচিতও হয়েছেন।

গত বছর এপ্রিলে গণভবনে হেফাজতের সাথে বৈঠকের পর শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার সনদকে সরকারি স্বীকৃতি দেবার পাশাপাশি, সাধারণ স্কুলের পাঠ্যপুস্তক ইসলামি নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী পরিবর্তন করার বিষয়ে হেফাজতের দাবির সাথেও একমত পোষণ করেন।

তবে হেফাজতের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতার সমালোচানার উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি ধর্ম মানি, কিন্তু ধর্মের সাথে রাজনীতি মিশাই না।”

তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির ফলে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে, এতে কোনো রাজনীতি নেই।

বাংলাদেশে উগ্রপন্থী ইসলামি মৌলবাদের বিস্তারের অন্যতম ভয়াবহ উদাহরণ ২০১৬ সালের জুলাইতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় দেশি বিদেশিসহ ২৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা।

পাশাপাশি ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মৌলবাদী জঙ্গিদের হাতে ধারাবাহিকভাবে খুন হন অন্তত ১০ জন মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার। ওই সময় জঙ্গি হামলার ভয়ে অনেক লেখকই প্রাণভয়ে দেশান্তরিত হতে বাধ্য হন।

বাংলাদেশে মৌলবাদীদের হাতে প্রথম খুন হওয়া মুক্তমনা লেখক আহমেদ রাজীব হায়দারের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারকে সান্ত্বনা দেন শেখ হাসিনা। একই সাথে সংসদে রাজীবকে তখন শহীদ হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি।

তবে পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত করে কোনো কিছু না লিখতে লেখকদের হুঁশিয়ার করেন তিনি। ২০১৫ সালের আগস্টে জঙ্গিদের হাতে ব্লগার নিলয় নীল খুন হবার পর মৃত্যুর জন্য লেখকদের লেখাকেই দায়ী করেন শেখ হাসিনা।

“ধর্মীয় মূল্যবোধকে আঘাত করার অধিকার কারোই নেই” মন্তব্য করে “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সহ্য করা হবে না,” বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

এদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা একটি বিচারের রায় পরিবর্তন করার জন্য শেখ হাসিনা তাঁকে চাপ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন। এস কে সিনহা ২০১৭ সালে দেশ ছেড়ে যাবার পর, সরকারের চাপে বাধ্য হয়ে বিদেশ থেকে পদত্যাগ করেন বলেও উল্লেখ করেন তাঁর আত্মজীবনীতে।

তাঁর এক আত্মীয়কে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা অপহরণ করে তাঁর উপর পদত্যাগের জন্য চাপ প্রয়োগ করে বলে জানান তিনি।

অ্যামেনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো বরাবরই বাংলাদেশি নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে নাগরিকদের গুম ও অপহরণের অভিযোগ করে আসছে। তাঁদের হিসাবে শুধু ২০১৭ সালেই অন্তত ৮০ জন মানুষ গুম হয়েছেন।

তবে “এগুলো সব গৎবাঁধা কথা। এগুলো সত্য নয়,” বলে তখন এই প্রতিবেদন সম্পর্কে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তৃতীয় দফা শাসনামলের একেবারে শেষের দিকে এসে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেও সমালোচিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। দেশের সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকেরা এক হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, তাঁকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকার জন্য দু’ভাবে দেখা উচিত।

তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বৈষম্য ও দুর্নীতি বেড়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো কাজগুলো তাঁর বড় অর্জন।”

তাঁর মতে, শেখ হাসিনা যতটা না রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেঁচে থাকবেন, তার চেয়েও বেশি বেঁচে থাকবেন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা আসিফ কবীর বেনারকে বলেন, “তাঁর নেতৃত্বে দেশের অবকাঠামো খাতে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়েছে তা অচিরেই সম্পন্ন হলে এগুলো দেশ ও জনগণের দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ হবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।