আইনি জটিলতায় আটকে গেলেন বিএনপির ২১ প্রার্থী

জেসমিন পাপড়ি
2018.12.26
ঢাকা
181226_Candidacy_postponed_1000.jpg ঢাকা-১৪ আসনে গণসংযোগ করছেন বিএনপির প্রার্থী এসএ সিদ্দিক সাজু। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮।
[নিউজরুম ফটো]

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র চার দিন আগে বিএনপির তিন প্রার্থীর নির্বাচনে অংশ নেওয়া আটকে গেছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ার কারণ দেখিয়ে তাঁদের প্রার্থিতা স্থগিত করেছে হাই কোর্ট।

ওই আসনগুলোর তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর করা পৃথক তিনটি রিটের শুনানি শেষে বুধবার এ আদেশ দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এর ফলে এখন পর্যন্ত আইনি জটিলতায় ২৩ জন প্রার্থী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। যাদের মধ্যে ২১ জনই বিএনপির প্রার্থী। বাকি দুজন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।

এসব আইনি জটিলতার কারণে সারা দেশের তিনশ আসনের মধ্যে ১৬টি আসনে ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থী নেই। অর্থাৎ এসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পথ ক্ষমতাসীনদের জন্য অনেকটাই সহজ হলো।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রধান প্রতিপক্ষ ছাড়া নির্বাচন খানিকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ারই সামিল। যা গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী বা বিরোধী দল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ক্ষমতাসীনরা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।”

“এটা সুষ্ঠু বা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য একটা বিরাট প্রতিবন্ধকতা,” বলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপিসহ অন্যান্য দল। এর ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

প্রার্থী হতে পারছেন না যারা

বুধবার প্রার্থিতা স্থগিত হয়ে যাওয়া তিন প্রার্থী হলেন: গাইবান্ধা-৪ আসনে বিএনপির ফারুক কবির আহমেদ, নাটোর-৪ আসনে আবদুল আজিজ ও নরসিংদী-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী মনজুর এলাহী।

গাইবান্ধা- ৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ফারুক কবিরের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে রিট করেন। একইভাবে আবদুল আজিজের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে একই আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আব্দুল কুদ্দুস এবং মনজুর এলাহীর বিরুদ্ধে ওই আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী জহিরুল হক ভূইয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম পৃথক পৃথক রিট করেন।

আজিজ ও ফারুকের পক্ষে আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বেনারকে বলেন, “আদালতে তাঁদের প্রার্থিতা স্থগিত করেছে। এর ফলে তাঁরা আর একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না।”

যে কারণে প্রার্থী হতে পারছে না

বিএনপির যে ২১ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না এদের মধ্যে ১৭ জন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং একজন পৌর মেয়র পদে থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

এ ছাড়া তিনজন ঋণখেলাপির অভিযোগে, একজনের ক্ষেত্রে চাকরি ছাড়ার পর তিন বছর না পার হওয়ায় এবং একজনের মামলায় দণ্ড ও সাজা থাকার বিষয়ে হাইকোর্টে রিট হয়। সেখানে সমাধান না হওয়ায় অনেকে আপিল বিভাগের দ্বারস্থ হন। সেখানেও ভোটে ফেরার পথ খোলেনি এসব প্রার্থীদের।

আইনি জটিলতায় নির্বাচনে অংশ নিতে না পারা বিএনপির অন্য ১৮ প্রার্থী হলেন: জয়পুরহাট-১ আসনে মো. ফজলুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে মো. মোসলেম উদ্দিন, জামালপুর-৪ আসনে ফরিদুল কবির তালুকদার, রাজশাহী-৬ আসনে মো. আবু সাঈদ চাঁদ, ঝিনাইদহ-২ আসনে মো. আবদুল মজিদ, ঢাকা-২০ আসনে তমিজ উদ্দিন, ঢাকা-১ আসনে খন্দকার আবু আশফাক, চাঁদপুর-৪ আসনে আবদুল হান্নান, নীলফামারী-৪ আসনে আমজাদ হোসেন সরকার, বগুড়া-৭ আসনে মিল্টন মোর্শেদ, বগুড়া-৩ আসনে আবদুল মুহিত তালুকদার, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বেগম আফরোজা খান, বগুড়া-৭ আসনে সরকার বাদল, সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর লুনা, দিনাজপুর-৩ আসনে সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, জামালপুর-১ আসনে এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, রাজশাহী-৫ আসনে নাদিম মোস্তফা ও রংপুর-৫ আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম রব্বানী।

এছাড়া একই ধরনের জটিলতায় নির্বাচন করেতে পারছেন না ময়মনসিংহ-৮ আসনে মাহমুদ হাসান ও রংপুর-১ আসনে মো. আসাদুজ্জামান। তাঁরা আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন।

ইসির সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে আবেদন

এদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ২৫ নেতার প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন নামঞ্জুর করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে উচ্চ আদালতে সম্পূরক আবেদন করা হয়েছে।

আবেদনকারী হলেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী ও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নামের সংগঠনের সভাপতি হ‌ুমায়ূন কবির।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে বেনারকে জানান আবেদনকারীদের আইনজীবীদের একজন মো. ইয়াদনান রফিক।

এর আগে ১৭ ডিসেম্বর ওই চার ব্যক্তি একই বিষয়ে হাই কোর্টে রিট করেন। সেদিনই জামায়াতের ২৫ নেতার প্রার্থিতা বাতিল করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ইসি সচিব বরাবরও একটি আবেদন জমা দেন তারা।

সেই রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে পরদিন ১৮ ডিসেম্বর রুলের পাশাপাশি ওই ২৫ নেতার প্রার্থিতা বাতিলে চার ব্যক্তির করা আবেদন তিন কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ইসিকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

তবে গত ২৪ ডিসেম্বর জামায়াতের ২৫ নেতার প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন নামঞ্জুর করে সিদ্ধান্ত জানায় ইসি।

আইনজীবী ইয়াদনান বলেন, “জামায়াতের ২৫ নেতার প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন নামঞ্জুর করে ইসির নেয়া সিদ্ধান্ত কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- সম্পূরক আবেদনে সেই মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিচারাধীন অবস্থায় ওই ২৫ জনকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।”

জামায়াতের এই ২৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ২১ জন বিএনপির প্রতীক ‘ধানের শীষ’ নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। অপর চারজন আপেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও এদের একজনকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থন দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১ আগস্ট এক রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাই কোর্ট। এরপর গত ২৯ অক্টোবর দলটির নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।